বাঁশ চাষ পদ্ধতি। কঞ্চি কলমের মাধ্যমে বাঁশের চারা উৎপাদন ও পরিচর্যা
বাঁশ চাষ পদ্ধতিঃ বাঁশ চাষ বিভিন্ন পদ্ধতিতে করা যায়। বর্তমানে কাটিং ও কঞ্চি কলম পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে বিভিন্ন জেলার কৃষকরা সফলতার মুখ দেখছেন। সারাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ। নিম্নে কঞ্চি কলম পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ বর্ণিত হলো-
কঞ্চি কলম সংগ্রহঃ কলম কাটার জন্য সুস্থ্য, সবল, অপেক্ষাকৃত মোটা আকৃতির এক বছর বা তার কম বয়সের বাঁশ নির্বাচন করতে হবে। বাঁশের গা ঘেঁষে আঙ্গুলের মতো মোটা কঞ্চি হাত করাত দিয়ে কেটে সংগ্রহ করতে হবে। কঞ্চির গোড়া হতে ৩-৫ গিট বা দেড় হাত লম্বা করে কঞ্চি কলম কাটতে হবে। সংগৃহীত কঞ্চিগুলি নার্সারি বেডে লাগানোর পূর্ব পর্যন্ত ভেজা চট দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন অথবা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কার্তিক-মাঘ (অক্টোবর – ফেব্রুয়ারি) মাস বাদে সারা বছরই কঞ্চি কলম করা যাবে। ফাল্গুন-আশ্বিন (মার্চ -সেপ্টেম্বর ) মাস কঞ্চি কলম কাটার উপযুক্ত সময়।
বালির বেড তৈরিঃ চার ফুট চওড়া এবং প্রয়োজন মতো লম্বা বালির বেড তৈরি করতে হবে। বালির বেডের উচ্চতা বা পুরুত্ব কমপক্ষে ১০ ইঞ্চি হতে হবে। বালি সব রকমের আবর্জনা মুক্ত হতে হবে। বালির বেডের কিনার বাঁধার জন্য চারদিকে ইট বা তরজা ব্যবহার করতে হবে অথবা সমতল মাটিতে বেডের আকৃতিতে মাটি কেটে আয়তকার ১০ ইঞ্চি গভীরতার ব্লক তৈরি করতে হবে। মাটিতে কাটা ব্লকটি বালি দিয়ে ভরে দিতে হবে।
বেডে কঞ্চি কলম রোপণঃ বালির বেডে কঞ্চিগুলি ২-৩ ইঞ্চি দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে ৩-৫ ইঞ্চি গভীরে ভালোভাবে বালি চেপে লাগাতে হবে। বেডে কঞ্চি রোপণের পর হতে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত দিনে ২-৩ বার ঝরনা দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যেই কঞ্চিতে নতুন শাখা-প্রশাখা ও পাতা গজিয়ে সম্পূর্ণ বেড সবুজ আকার ধারণ করবে এবং কঞ্চি-কলমের গোড়ায় যথেষ্ট শিকড় গজাবে। তখন বেডে ধীরে ধীরে পানি সেচের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।
কলম স্থানান্তর ও রোপণঃ শিকড়যুক্ত কলম পলিথিন ব্যাগ বা উপযুক্ত পাত্রে ৩:১ অনুপাতে মাটি-গোবর মিশ্রণের মধ্যে স্থানান্তর করতে হবে। প্রতিটি ব্যাগ বা পাত্রে একটি করে শিকড় গজানো কঞ্চি কলম স্থানান্তর করতে হবে। ৭-১০ দিন কলমটি ছায়ায় রাখতে হবে। এ সময় নিয়মিত দিনে একবার পানি দিতে হবে। এরপর ব্যাগগুলি সারিবদ্ধ ভাবে বেডে সাজিয়ে রাখতে হবে। মাঠে রোপণের পূর্ব পর্যন্ত ব্যাগের আগাছা বাছাই করতে ও পরিমিত পানি দিতে হবে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ১৫-২০ ফুট দূরত্বে ১.৫ X ১.৫ X ১.৫ ফুট গর্তে কঞ্চি কলম মাঠে লাগিয়ে দিতে হবে। চার বছরে একটি কঞ্চি কলম ঝাড়ে পরিণত হবে এবং ছয় বছর হলে ঝাড় হতে বাঁশ আহরণ করা যাবে।
বাঁশের ঝাড় ব্যবস্স্থাপনাঃ বাঁশঝাড়ের উন্নত ব্যবস্থাপনা করে খুব কম খরচে বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ উৎপাদন করা যায় ও অধিক সবল বাঁশ পাওয়া যায়। বাঁশঝাড় ব্যবস্থাপনা দ্বারা সুস্থ-সবল ও পুষ্ট বাঁশ উৎপাদন করে ভালো বাজার মূল্য পাওয়া যায়। পরিচর্যার ফলে ঝাড় থেকে বেশি সংখ্যক বাঁশ পাওয়া সম্ভব। এতে পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ও বাড়ানো সম্ভব।
যেভাবে ব্যবস্থাপনা করবেনঃ
পরিস্কারকরণঃ বাঁশঝাড় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। ময়লা-আবর্জনা, পাতা, খড়কুটো, পচা বা রোগাক্রান্ত বাঁশ, কঞ্চি, কোঁড়ল ঝাড় থেকে নিয়মিতভাবে অপসারণ করতে হবে। চারা, কঞ্চি, মুথা বা অফসেট মাটিতে লাগানোর পর প্রথম ১ -২ বছর চিকন ও সরু বাঁশ গজায়, যা মরে গিয়ে ঝাড়ে গাদাগাদি করে থাকে। গাদাগাদি করে থাকা চিকন ও মরা বাঁশ অপসারণ করে ফেলতে হবে। প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে হালকা নিয়ন্ত্রিত আগুন দিয়ে ঝাড় এলাকার আবর্জনা ও শুকনো পাতা পুড়িয়ে দিতে হবে। এতে ঝাড়ে অনুকুল স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হবে যা প্রচুর নতুন কোঁড়ল মাটি থেকে বের হয়ে স্বাস্থ্যবান ঝাড় সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
নতুন মাটি প্রয়োগঃ সাধারণত প্রতি বছর চৈত্র-বৈশাখ মাসে বাঁশের কোঁড়ল গজায়। তাই প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ঝাড়ের গোড়ায় নতুন মাটি দেওয়া উচিত। এতে কোঁড়ল দ্রুত বেড়ে উঠবে ও সুস্থ্য বাঁশ পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে রোগাক্রান্ত বা পুরাতন ঝাড়ের মাটি কখনও ব্যবহার করা যাবে না। এতে সুস্থ বাঁশ ঝাড়ে রোগ বিস্তারের সম্ভাবনা থাকে।
সার প্রয়োগঃ মাঝারি আকারের ঝাড়ের গোড়ায় প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ১০০-১২৫ গ্রাম ইউরিয়া, সমপরিমান ফসফেট ও ৫০-৬৫ গ্রাম পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। ঝাড়ের চারিদিকে মাটিতে ১৮ ইঞ্চি চওড়া ও ২৪ ইঞ্চি গভীর নালা কেটে সেই নালায় সার প্রয়োগের পর নালাটি মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পর বৃষ্টি না হলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে।
পানি সেচঃ খরা মৌসুমে চারা গাছ সুষ্ঠু ভাবে বৃদ্ধি পায় না এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মারাও যায়। তাই প্রথম কয়েক বছর নতুন ঝাড়ে পরিমিত পানি সেচ দেওয়া প্রয়োজন। এক সপ্তাহে পর পর এক বা দুই কলস পানি বাঁশের চারার গোড়ায় ঢেলে দিয়ে ছন বা কচুরিপানা দিয়ে ঢেঁকে দিতে হবে।
পাতলাকরণঃ বাঁশের বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট জায়গা প্রয়োজন। অতিরিক্ত কঞ্চি বা পচা ও আঘাতপ্রাপ্ত বাঁশ নিয়মিত কাটা উচিত। ঝাড় থেকে বাঁশ এমনভাবে কাটতে হবে যেন একটি থেকে অন্যটি ৬-১০ ইঞ্চি দূরে থাকে।
আগাছা,মরা/ পচা বাঁশ ও পুরোনো মোথা অপসারণঃ আগাছাপূর্ণ স্থানে ঝাড় থেকে নতুন বাঁশ সহজে গজাতে পারে না অথবা সরু ও দুর্বল বাঁশ গজায়। কোন কোন সময় আগাছার চাপে চারা বাঁশ মারা যায়। তাই নতুন বাঁশঝাড় আগাছা মুক্ত রাখা উচিত। এছাড়া মাথাপচা রোগে আক্রান্ত মরা ও পচা বাঁশ ঝাড় থেকে সরিয়ে পুড়িয়ে ফেলা উচিত। আবার পুরাতন পরিত্যক্ত মোথা থেকে প্রকৃতপক্ষে কোন কোঁড়ল বের হয় না বরং জায়গা নষ্ট করে বাধা সৃষ্টি করে। তাই বয়স্ক বাঁশঝাড়ের পুরাতন মোথা সাবল দিয়ে কেটে অপসারণ করলে বাঁশঝাড় আবার অনেকটা নতুন জীবন লাভ করে।
বাঁশ আহরণঃ বাঁশের কোঁড়ল বের হওয়ার পর ৩ মাসের মধ্যে একটি বাঁশ পূর্ণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং এরপর আর বাড়ে না। বর্ষায় যে কোঁড়ল বের হয় তা আশ্বিন-কার্তিক মাসের মধ্যে পূর্ণ উচ্চতা প্রাপ্ত হয়। ঝাড়ের ফলন ও স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করলে একটি বাড়িতে কমপক্ষে তিনটি বাঁশঝাড় লাগাতে হবে। একটি বাঁশ পাকতে তিন বছর সময় লাগে। প্রতি বছরই বাঁশ ঝাড় থেকে পাকা বাঁশ আহরণ করতে হবে। তাহলে গুনগত দিক দিয়েও ভালো বাঁশ পাওয়া যাবে।
ঝাড় থেকে বাঁশ কাটা ও টেনে বের করার সময় যে সব বিষয়ে যত্নবান হওয়া উচিত তা হলোঃ
- বাঁশে কঞ্চি বেশি থাকলে, গোড়ার দিকের কঞ্চিগুলো আগে কেটে ফেলতে হবে। এতে ঝাড় থেকে কাটা বাঁশ টেনে বের করা সহজ হবে। কাজ শেষে কাটা কঞ্চি ও ডালপালা পরিস্কার করে দিতে হবে।
- কোন নির্দিষ্ট ঝাড় থেকে বয়স্ক বাঁশের ৩ ভাগের ২ ভাগ বাঁশ কাটতে হবে। অর্থাৎ একটি ঝাড়ে ১০ টি বয়স্ক বাঁশ থাকলে ৫-৬ টি কাটা যাবে। এমনভাবে বাঁশ সংগ্রহ করুন যেন থেকে যাওয়া বয়স্ক বাঁশ পুরো ঝাড়ে ছড়িয়ে থেকে ঝাড়টিকে ঝড়-বাদলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
- প্রতিটি বাঁশ গোড়া থেকে কাটতে হবে। মাটির কাছাকাছি গিটের ঠিক উপরে তেরছা করে কেটে বাঁশটিকে গোড়া থেকে আলাদা করতে হবে। এতে বাঁশের অপচয় হয় না। এ ছাড়া ফেলে আসা গোড়ার অবশিষ্টাংশে বৃষ্টির পানি জমে পোকা-মাকড় বা ছত্রাকের আবাসস্থলে পরিণত হওয়ার সুযোগ থাকে না।
- বাঁশ গজানোর মৌসুমে (জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাস) কখনও বাঁশ কাটা উচিত নয়। এতে কাটার সময় সদ্যজাত বাঁশের কোঁড়ল ভেঙে যাওয়ার আশংকা থাকে। কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বাঁশ কাটার উপযুক্ত সময়। এ সময় বাঁশে সঞ্চিত খাদ্যের অর্থাৎ শর্করা জাতীয় পদার্থের পরিমাণ কম থাকে বলে কাটা বাঁশে ঘুনে ধরার সম্ভাবনা কম থাকে।
- যে বছর ঝাড়ে ফুল ও বীজ হয় সে বছর ঝাড়ের বাঁশ কাটা উচিত নয়। বাঁশ ফুল হলে ঝাড়ের সব বাঁশ মরে যায়। পাকা বীজ থেকে বাঁশের চারা তৈরি করে নতুন বাঁশ বাগান করা সম্ভব। তাই বীজ সংগ্রহের পরে বাঁশ কেটে ফেলা যেতে পারে।
মূলী বাঁশের ফল/ বীজ সংগ্রহঃ মূলী বাঁশ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ। প্রাকৃতিক নিয়মে মূলী বাঁশে ৪০-৫০ বছর পর পর ফুল আসে। মূলী বাঁশের ফুল ও ফল ধরা ব্যাপক এলাকা জুড়ে ৪-৫ বছর স্থায়ী হয়। ১-২ বছর ব্যাপক হারে ফল হয়। ব্যাপক হারে ফুল ও ফল হওয়ার পর মূলী বাঁশের ঝাড় সম্পূর্ণ মরে যায়। মূলী বাঁশের ফলটিই বীজ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
ফল/ বীজের আকৃতিঃ মূলীর ফল/বীজ দেখতে অনেকটা বড় আকারের পিয়াজের মতো, উপরের দিক একটু চিকন ও লম্বা। পরিপক্ক বীজ শক্ত এবং সাধারণত হালকা বাদামি রঙের হয়। ফুল আসার বছর সমূহে অক্টেবর-নভেম্বর মাসে মূলী বাঁশে ফুল আসে। মে-জুন মাসে মূলী বাঁশের ফুল পরিপক্ক হয়। ফল পাকলে বাঁশটিকে হালকাভাবে নাড়া দিলে পরিপক্ক ফল মাটিতে পড়বে। ঝরে পড়া পাকা ফল সংগ্রহ করতে হবে। পরিপক্ক বীজ/ফল এর আয়ুস্কাল মাত্র ১-২ সপ্তাহ। সংগৃহীত ফল/বীজ সরাসরি মাঠে রোপন করতে হবে।
রোপণ পদ্ধতিঃ ৪-৫ ফুট দূরত্বে দাঁ বা কোদাল দিয়ে মাটিতে ৪ x ৬ ইঞ্চি মাপের গর্ত করতে হবে। ফলটি আড়াআড়িভাবে গর্তে রোপণ করে সামান্য মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
কোথায় রোপণ করতে হবেঃ পাহাড়ি ঢাল ও উপরিভাগে মূলীর বীজ রোপণ করতে হবে। বসতবাড়ীর আশে-পাশে একটু উঁচু জায়গায় এবং ছড়ার পাড়ে মূলী বাঁশের বীজ লাগাতে হবে। বর্ষার পানিতে ডুবে যায় এমন জায়গায় মূলীর বীজ রোপণ করতে হবে। অনুকূল পরিবেশে ৫-১০ দিনের মধ্যে বীজ থেকে চারা গজায়।
বীজতলার পরিচর্যাঃ বীজ রোপণের পর বৃষ্টি না হলে হালকা পানি দেওয়ার ব্যবস্থা
প্রয়োজনে রোপিত স্থানটি ঘেরার ব্যবস্থা করতে হবে।
চারার পরিচর্যাঃ মাঠে রোপিত বীজ ও কচি চারা ইঁদুর ও সজারু থেকে রক্ষা করতে হবে। কচি চারাকে গরু-ছাগল থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন জায়গায় চারা মরে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে পূনরায় চারা রোপণ করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ ঝাড়ে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত প্রতি বছর বাঁশ ঝাড়ের আগাছা পরিস্কার করতে হবে। বীজ থেকে গজানো একটি চারা ৪-৫ বছরে একটি পূর্ণ ঝাড়ে পরিণত হয়ে থাকে।
বাঁশের মড়ক দমন ব্যবস্থাঃ
বাঁশের ঝাড়ে বাঁশের আগা মরা রোগঃ এ রোগের জন্য দায়ী এক ধরনের ছত্রাক যা মাটিতে বাস করে। সাধারণত বরাক বা বড় বাঁশ, মাকলা বাঁশ, তল্লা বাঁশ এবং বাইজ্যা বাঁশ ঝাড়ে এ রোগ মড়ক আকারে দেখা যায়।
রোগের লক্ষণঃ
- প্রাথমিক অবস্থায় নতুন কোঁড়ল আক্রান্ত হলে কোঁড়লের আগা বাদামি-ধূসর রঙের হয়ে সব খোলস ঝড়ে পড়ে। এক সময় আগা পচে ধীরে ধীরে বাঁশটি শুকিয়ে যায়।
- কম বয়সি বাড়ন্ত বাঁশ আক্রান্ত হলে এর মাথায় বাদামি-ধূসর রঙের দাগ দেখা যায় এবং আক্রান্ত বাঁশের সকল খোলসপত্র ঝড়ে পড়ে। এক সময় আগা পচে ভেঙে পড়ে বা ঝুলে থাকে।
- আক্রান্ত অংশের নিচের গিট থেকে অসংখ্য কঞ্চি বের হয়। পরবর্তীতে রোগ নিচের দিকে আগাতে থাকে এবং এক সময় পুরো বাঁশটি নষ্ট হয়ে যায়।
- বয়স্ক বাঁশে এ রোগ দেখা দিলে আগা পচে যায়, ফলে বাঁশের মাথা ভেঙ্গে পড়ে। দূর থেকে এ ধরনের ঝাড়কে মাথাশূণ্য ও আগুনে ঝলসানো বাঁশ ঝাড় বলে মনে হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পুরো বাঁশঝাড়ই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
রোগের বিস্তারঃ
- রোগাক্রান্ত মুথা বা রোগাক্রান্ত বাঁশের কঞ্চিকলমের চারা ব্যবহার করলে;
- আক্রান্ত বাঁশ ঝাড়ের মাটি ব্যবহার করলে;
- ঝাড়ের গোড়ায় নতুন মাটি না দিলে;
- গোড়ায় জমে থাকা পাতা ও আবর্জনা সরিয়ে না ফেললে;
- বাঁশ ঝাড়ে কীট-পতঙ্গ (বিশেষ করে পিঁপড়া) বেশি থাকলে এই রোগ দ্রুত ছড়ায়।
রোগ প্রতিরোধঃ
- সকল আক্রান্ত বাঁশ ঝাড় থেকে কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- বাঁশ গজানোর আগে গোড়ায় জমে থাকা কঞ্চি, আবর্জনা, শুকনো পাতা, আক্রান্ত বাঁশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ( আগুন দেওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে আশেপাশের বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ না হয়)।
- প্রতি বছর নতুন বাঁশ গজানোর পূর্বে চৈত্র-বৈশাখ মাসে বাঁশ ঝাড়ের গোড়ায় নতুন মাটি দিতে হবে।
- পুরানো বাঁশ ঝাড়ের মাটি ব্যবহার না করে পুকুরের তলার মাটি অথবা দূরের পলিযুক্ত মাটি ব্যবহার করতে হবে।
- ২০ গ্রাম ডায়থেন/ইণ্ডোফিল এম-৪৫ প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে ঝাড়ের গোড়ার মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
- ৩-৪ হাত লম্বা হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রায়ই ঔষধ স্প্রে করে নতুন কোঁড়লগুলো ভিজিয়ে দিতে হবে।
বিঃদ্রঃ আক্রান্ত এলাকায় নতুন গজানো সকল বাঁশেই এ রোগের আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। কোঁড়ল গজানোর ৩ মাসের মধ্যেই বাঁশ সম্পূর্ণরূপে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে শুধুমাত্র পরিপক্ক হয়। যদি কোন বাঁশ তার বৃদ্ধির সময়ে পরিপর্ণ সুস্থ থাকে, তবে পরবর্তীতে মড়ক আর ক্ষতি করতে পারে না।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!