আলুর বালাই ব্যবস্থাপনা, হাম পুলিং ও অন্যান্য পরিচর্যা
আলুর স্থান সাধারণত ধান ও গম ফসলের পর। বাংলাদেশে আলু একটি গুরুত্বপুর্ণ ফসল। শীতকালে বাংলাদেশের সবগুলো জেলায় আলু ব্যাপকভাবে চাষ হয়। তবে আলু মাঠে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় দেখা যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
আলুর কাটুই পোকা (Cut warm): এই পোকা গাছের গোড়া কেটে দেয় এবং আলুতে ছিদ্র করে আলুর ক্ষতি করে। কীড়া ডিম ফুটে বের হয়ে পাতার বাইরের অংশ খেয়ে থাকে। এই পোকা দিনের বেলায় মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে।
ব্যবস্থাপনা: সকাল বেলা কেটে ফেলা চারার আশে পাশে মাটি খুড়ে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে। আলু ক্ষেতে প্রতি শতকে ২০ মি.লি হারে কেরোসিন তেল পানির সাথে মিশিয়ে সেচ দিয়ে মাটিতে লুকিয়ে থাকা কাটুই পোকা মেরে ফেলতে হবে। পোকার উপদ্রব খুব বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ৫ মি.লি ক্লোরোপাইরিফস গ্রুপের ডারসবান ২০ ইসি মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটিতে স্প্রে করতে হবে। আলু লাগানোর ৩০-৪০ দিন পর স্প্রে করতে হবে।
আলুর জাব পোকা (Aphid): পূর্ন বয়স্ক ও বাচ্চা উভয় অবস্থাতেই আলু গাছের ক্ষতি করতে পারে। জাব পোকা আক্রান্ত গাছের পাতা, কান্ড ও ডগা থেকে রস চুষে খায় এবং বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত গাছের পাতা কুকড়ে যায় এবং হলুদ বর্ণ ধারন করে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি হতে এ পোকার সংখ্যা বাড়তে থাকে। কেননা মেঘলা ও কুয়াশাছন্ন আবহাওয়ায় জাব পোকার বংশ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
দমন ব্যবস্থাপনাঃ আলু ক্ষেতের আশেপাশে সোলানেসী গোত্রভূক্ত ফসল যেমন- টমেটো, বেগুন, মরিচ ইত্যাদি চাষ করা যাবে না। সময়মত সুষম সার ও সেচ দিতে হবে। এছাড়া আক্রমণ বেশি হলে সবিক্রন ৪২৫ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ১.২ মিলি অথবা ইমিটাফ বা এডমায়ার ১০ লিটার পানিতে ৫মিলি মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
আলুর সুতলী পোকা (Tuber moth): কীড়া আলুর মধ্যে লম্বা সুড়ঙ্গ করে আলুর ক্ষতি করে থাকে। বসত বাড়িতে সংরক্ষিত আলু এ পোকা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা: বাড়িতে সংরক্ষিত আলু শুকনা বালি, ছাই, তুষ, অথবা কাঠের গুড়ার একটি পাতলা স্তর (আলুর উপরে ০.৫ সেমি) দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আলু সংরক্ষণ করার আগে সুতলী পোকা আক্রান্ত আলু বেছে ফেলে দিতে হবে।
আলুর উড়চুঙ্গা (Cricket): এটি আলু ফসলের জন্য একটি ক্ষতিকর পোকা। এরা রাতে গর্ত থেকে বের হয়ে আলু গাছের শিকড়, আলু ও কান্ড খেয়ে ফেলে।
দমন ব্যবস্থাপনা: এই পোকা দমনের জন্য বিষটোপ ব্যবহার করতে হবে। গর্ত থেকে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে।
আলুর পরিচর্যাঃ রোপণের সময় গোবর, অর্ধেক ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, ও জিংক সালফেট, প্রয়োজন অনুযায়ী জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া রোপনের ৩০-৩৫ পর প্রয়োগ করতে হবে। অম্লীয় বেলে মাটির জন্য প্রতি শতকে ৩৫০ গ্রাম ম্যাগনেশিয়াম সালফেট এবং বেলে মাটির জন্য বোরণ প্রতি শতকে ৩৫ গ্রাম প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রয়োজনে নিকটবর্তী উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে এবং আগাছা দমন করতে হবে। প্রথম সেচ দিতে হবে বীজ রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে (স্টোলন বের হওয়ার সময়) । দ্বিতীয় সেচ দিতে হবে বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে (শুটি বের হওয়া পর্যন্ত) । আর তৃতীয় সেচ দিতে হবে বীজ বপনের ৬০- ৬৫ দিনের মধ্যে (শুটির বৃদ্ধি পর্যন্ত)।
হাম পুলিংঃ মাটির উপরে গাছের সম্পূর্ণ অংশকে উপড়ে ফেলাকে হাম পুলিং বলে। আলু সংগ্রহের ৭-১০ দিন পূর্বে হাম পুলিং করতে হবে। এতে সম্পূর্ণ শিকড়সহ গাছ উপড়ে আসবে কিন্তু আলু মাটির নিচের থেকে যাবে। হাম পুলিং এর ফলে আলুর ত্বক শক্ত হয়, রোগাক্রান্ত গাছ থেকে রোগ বিস্তার কম হয় ও আলুর সংরক্ষণগুণ বৃদ্ধি পায়। বীজ আলুতে অবশ্যই হাম পুলিং করতে হবে, তবে খাবার আলুর ক্ষেত্রে হাম পুলিং জরুরি নয়।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!