এলাচের চাষ পদ্ধতি, জাত, গুনাগুণসমূহ এবং সম্ভাবনা
এলাচ মসলা জাতীয় ফসল যার ব্যবহার মিষ্টি বা ঝাল সব রকম খাবারেই দেখা যায়। এলাচের ইংরেজি নাম Cardamon (কার্ডামন)। এটি মূলত আদা জাতীয় গাছ এবং পাতাগুলো বেশ লম্বা ও চওড়া। এই গাছের গোড়ার দিক থেকে লম্বা ফুলের স্টিক বের হয়। আর এই ফুলের ফলই হচ্ছে এলাচ।
এলাচের জাতঃ এলাচ সাধারণত বড় ও ছোট এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। উভয় জাতের এলাচ এশিয়া, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহা-সাগরীয় দীপপুঞ্জের শীতপ্রধান অঞ্চলে প্রচুর জন্মায়। ছোট ও বড় উভয় প্রকারের এলাচ উৎপাদনের জন্য দেশের পরিবেশ, জলবায়ু এবং আবহাওয়া উপযোগী।
এলাচের গুনাগুণঃ
- এলাচের দানা মুখে রাখলে বমি বমি ভাব এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
- বড় এলাচ পেট ফাপা, কফ, পিত্ত এবং রক্তদোষ নিবারক হিসেবে কাজ করে।
- এলাচ ক্ষিদে বাড়ানোসহ হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- এলাচের গুড়ো আমলকির রসের সাথে মিশিয়ে খেলে প্রসাবের জ্বালাপোড়াসহ হাত পা জ্বালার উপশম ঘোটায়।
- এলাচ দানার গুড়ো একটু লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও পেট ব্যথা থেকে আরোগ্য পাওয়া যায়।
- তবে অতিরিক্ত এলাচ খাওয়া অনেকক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। যেমন,গর্ভবর্তী মহিলাদের অতিরিক্ত এলাচ খেলে গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে।
এলাচের চাষের জমিঃ উর্বর মাটি, হালকা রোদ্র ও ছায়াযুক্ত ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় এলাচ চাষ ভালো হয়। এলাচ চাষের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো জমির প্রয়োজন হয় না। অন্য গাছের ছায়ার নিচে, বাড়ির আঙ্গিনা বা ফলদ বৃক্ষের বাগানে চাষ করলে এলাচের ভালো ফলন হয়।
চারা রোপনের হারঃ শতক প্রতি ১৪ টি এলাচের চারা লাগে অর্থাৎ বিঘা প্রতি (৩৩ শতকে) ৪৬০ টি চারা রোপণ করা যায়।
চারা রোপণের দূরত্বঃ চারা লাইনে রোপণের ক্ষেত্রে চারা থেকে চারার দুরত্ব হবে ৪ হাত এবং লাইন থেকে লাইনের দুরত্ব হবে ৩.৫ (সাড়ে তিন) হাত।
জমি তৈরি ও সার ব্যবস্থাপনাঃ এক বিঘা বা তার উপরে জমি তৈরি করতে হলে অবশ্যই মাটির পিএইচ, মাটিতে বালির পরিমাণ এবং মাটিতে জৈব উপাদানের পরিমাণ এই ৩ টি তথ্য জানতে হবে।
জমি তৈরির সময় টিএসপি এবং পটাশ সার শতক প্রতি ৫০০ গ্রাম পরিমাণে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। দানাদার কীটনাশক যেমন (ফুরাডান বা কার্বফুরান) বিঘা প্রতি জমিতে ২ কেজি পরিমাণ প্রয়োগের ১ দিন পরে সেচ দিতে হবে যেন জমির সাথে ভালোভাবে মিশে যেতে পারে। ঘন বর্ষায় চারা লাগানো যাবে না। চারা লাগানোর পরে অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। চারা রোপণের ১৪ দিন পরে ২ ফিট চওড়া ও দেড়ফিট গভীর গর্ত করে গোবর বা জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। ২০-২৫ দিনের মধ্যে একই হারে ইউরিয়া ও পটাশ সার দিতে হবে। পরবর্তীতে কার্বান্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক পরিমাণ মতো মিশিয়ে গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।
পরিচর্যাঃ চারা রোপণের ৩ বছর পর শীতকালে এলাচ সংগ্রহ করে পুরাতন গাছ ছাটাই করতে হবে। শীতকালে এলাচ গাছে ফুল ও ফল হয় না বলেই মরা গাছ ও দূর্বল গাছ ছাটাই করা উত্তম।
এলাচ গাছে যে স্থানে ফল ধরেঃ গাছের গোড়ায় মাটি সংলগ্ন হয়ে গুচ্ছাকারে ফুল গজায় এলাচ গাছে। পরে সেই ফুল গুলো থেকে গুচ্ছ আকারে ফল হয়ে থাকে।
গাছ প্রতি ফলনঃ চারা রোপণের ২য় বছরে কিছু গাছে ফল ধরা শুরু করলেও ৩য় বছর থেকে এলাচের ফলন দেওয়া শুরু হয়। প্রতি ঝোপ থেকে প্রায় ৮০০-৯০০ গ্রাম এমনকি ১ কেজির উপরে ফলন পাওয়া যায়।
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ আষাঢ় মাসে এলাচ গাছে ফুল আসে এবং ভাদ্র ও আশ্বিন মাসের শেষের দিকে পরিপক্ক হয়। বাগান থেকে কাঁচা এলাচ সংগ্রহ করে রোদে বা ড্রায়ার মেশিনের সাহায্যে শুকাতে হয়। এলাচ পরিপক্ক হলে ফলগুলো দেখতে কিছুটা সবুজের উপর লালচে হয়।
বাংলাদেশে এলাচের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হলে নিজেদেরকে এলাচ চাষে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই অদূর ভবিষ্যতে আর এলাচ আমদানি করতে হবে না।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!