এস আর আই (SRI) পদ্ধতি (ধান চাষে একটি লাগসই প্রযুক্তি)
এস আর আই (SRI-System of Rice Intensification) পদ্ধতিতে ধান চাষে কম খরচ করে, অতি যত্ন নিয়েও কম কৃষি উপকরণ ব্যবহার করে অধিক ধান উৎপাদন করা যায়। ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত উপকরণ কম ব্যবহার করে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করার কৌশল ১৯৮০ সনে উদ্ভাবন করেন মাদাগাস্কার বিজ্ঞানী ফাদার হেনরি ললানি। এই পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন, রোপণ, সেচ, সার, কীটনাশক কম লাগে। কিন্তু ধানের ফলন হয় বেশি।
এস আর আই এর বৈশিষ্ট্য
১. কৃষি উপকরণ কম লাগে। ফলে উৎপাদন খরচ কম হয়।
২. ধান উৎপাদন বেশি হয়। অতি যত্ন, সঠিক পরিমাণ সেচ, আগাছা দমনসহ বিভিন্ন কারণে ফলন বেশি হয়।
৩. অতি পরিচর্যা করা হয়।
৪. উৎপাদন সময় কম লাগে। অল্প বয়সের চারা রোপণ করা হয়।
৫. শ্রমিক কম লাগে।
৬. কম চারার বয়স রোপণ করা হয়।
৭. জৈবসার প্রয়োগ করা হয়।
৮. পর্যায়ক্রমিকভাবে জমি ভিজানো ও শুকানো হয়।
৯. বর্গাকারে চারা রোপণ করা হয়।
১০. যন্ত্র দিয়ে আগাছা দমন করা হয়।
১১. পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি।
ধান উৎপাদনে এসআরআই পদ্ধতি:
চারার বয়স: কম বয়সের ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করা হয়। এতে চারা শক্ত থাকে ফলে মারা যায় না এবং রোপণের পর আগাম থোড় বের হয় না। জলাবদ্ধ পদ্ধতির চেয়ে ১০-১৫ দিন আগে ধান পরিপক্ক হয়। সার ও সেচ কম লাগে। পোকা ও রোগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। পরবর্তী ফসলের প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়।
রোপণ দূরত্ব : সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩৫-৪০ সে.মি. করে বর্গাকারে চারা রোপণ করা হয়। প্রতি গুছিতে একটি চারা রোপণ করা হয়। এতে গাছ পুষ্টি ও আলো বাতাস বেশি পায়। কুশি বেশি হয়। এতে ফলন বেশি হয়। বীজ, সার ও সেচ কম লাগে। গুছিতে চারা বেশি দিলে পুষ্টি, পানি ও জায়গার জন্য প্রতিযোগিতা করে।
সার প্রয়োগ : রাসায়নিক সার কম দিয়ে জৈবসার বেশি দেয়া হয়। এতে মাটি, পানি ও বাতাসের পরিবেশ ভালো থাকে। উৎপাদন খরচ কমে। মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলির উন্নতি হয়। মাটির উর্বরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। অণুজৈবিক কার্যাবলী বাড়ে। মাটির অম্লত্ব নিয়ন্ত্রণ হয়। ফলন বেশি হয়।
আগাছা দমন : রাইচ উইডার দিয়ে আগাছা দমন করে মাটির সাথে আগাছা মিশিয়ে দেয়া হয়। যা পচে জৈব সারের কাজ করে। সেচ ও নিকাশ দ্বারাও আগাছা দমন হয়। সনাতন পদ্ধতির মত বার বার দমন করতে হয় না। খরচ কমে।
পুষ্টি ব্যবস্থাপনা : ধানের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য মাটিতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকা দরকার। মাটিতে পুষ্টি উপাদান সরবরাহের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে জমিতে পর্যাপ্ত জৈবসার প্রয়োগ করা। সেচ ও নিকাশ করে জৈবসার মাটির সাথে মিশাতে হবে। সেচ ও নিকাশের দ্বারা কোন কোন পুষ্টি গাছের জন্য সহজলভ্য হয়। মাটিতে পুষ্টি থাকা সত্ত্বেও কিছু পুষ্টি গাছ পানির অভাব গ্রহণ করতে পারে না। এজন্য সেচ দিয়ে পুষ্টি গাছ সহজে শোষণ করতে পারে। পানি বেশি হলে কিছু পুষ্টি গাছ গ্রহণ করতে পারে না। জমি থেকে পানি নিকাশ করলে গাছ পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে। মাটিতে প্রাকৃতিক উপায়ে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার সবচেয়ে ভালো উপায় এস আর আই পদ্ধতিতে ধান চাষ করা।
সনাতন পদ্ধতিতে ধান চাষে সবসময় প্লাবন পদ্ধতিতে সেচ দেয়া হয়। এসআরআই পদ্ধতিতে যখন গাছে পানির প্রয়োজন হবে ঠিক তখন যে পরিমাণ দরকার ঠিক সে পরিমাণই সেচ দেওয়া হয়।
কৃষিবিদ ফরহাদ আহমেদ
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!