কম্পোস্ট তৈরির নিয়ম (স্তূপ পদ্ধতিতে)। কম্পোস্ট ব্যবহারের সুফলসমূহ
কম্পোস্ট হলো প্রাণী ও উদ্ভিদ জাত দ্রব্য থেকে তৈরিকৃত সার। মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য জৈব পদার্থের প্রয়োজন। কম্পোস্ট বা জৈব সার মাটির গঠন উন্নত করে। মাটির মধ্যে বায়ু চলাচল ও পানি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্মের ভারসাম্য বজায় রাখে।
কম্পোস্ট তৈরির উপাদানঃ যেসব উপাদান দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করা যায়, তা হলো-ফসলের অবশিষ্টাংশ, কচুরীপানা, সবজি বা ফলের খোসা, আগাছা, বসতবাড়ির ময়লা আবর্জনা ও খড়কুটা।
স্তূপ পদ্ধতিতে কম্পোস্টঃ বসতবাড়ির আশপাশে, ক্ষেতের ধারে অথবা পুকুর বা ডোবার কাছে স্তূপ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরি করা যাবে। এজন্য মনে রাখতে হবে, যেন স্থানটি বেশ উঁচু হয় এবং সেখানে বর্ষার পানি জমে না থাকে। এ ধরনের উঁচু স্থান যদি গাছের ছায়ার নিচে হয় এবং সেখানে স্তূপ করা যায় তাহলে খুব ভালো কম্পোস্ট তৈরি করা যাবে। কারণ গাছের ছায়া রোদ বৃষ্টি প্রতিরোধ করবে এবং জৈব পদার্থের পচন ক্রিয়ায় সাহায্য করবে। বর্ষাকালে অথবা যেসব এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি, সেসব এলাকায় স্তূপ পদ্ধতিতে তৈরি কম্পোস্ট বেশ কার্যকর। গ্রাম বাংলায় এ পদ্ধতিকে গাদা পদ্ধতি বলা হয়।
কম্পোস্ট তৈরির নিয়মঃ কম্পোস্ট তৈরির জন্য প্রথমে ৩-৪ দিনের শুকনো কচুরিপানা ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলে ১৫ সেমি.পুরু স্তর সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে তাজা বা সবুজ কচুরিপানা ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে পটাশ ও নাইট্রোজেনের উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। কচুরিপানা বেশি লম্বা হলে তা ১৫ সেমি করে কেটে ব্যবহার করতে হবে।
অতঃপর এই স্তরের ওপর ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২০০ গ্রাম টিএসপি সার ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে পচনক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। সার ছিটানোর পর স্তরের ওপর ২.৫০-৫.০০ সেমি পুরু করে গোবর এবং কাদা মাটির একটি প্রলেপ দিতে হবে। এর ফলে স্তূপের ভিতর জীবাণুর ক্রিয়া বেড়ে যাবে এবং দ্রুত পচন কাজ সম্পন্ন হবে। এভাবে ১.২৫ মি.উঁচু না হওয়া পর্যন্ত বারবার ১৫ সেমি. পুরু করে শুকনো কচুরিপানা,আবর্জনা, খড়কুটো দিয়ে স্তর সাজাতে হবে এবং ২.৫০-৫.০০ সেমি পুরু করে গোবর ও কাদা মাটি দিয়ে লেপে দিতে হবে। গাদা তৈরি শেষ হলে এর উপরিভাগ মাটি দিয়ে লেপে দিতে হবে এবং সম্ভব হলে কম্পোস্ট স্তূপের উপর ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্তূপ বা গাদা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর একটি শক্ত কাঠি গাদার মাঝখানে ভিতরের দিকে দিয়ে স্তরগুলো অতিরিক্ত ভেজা কিনা তা দেখে নিতে হবে। যদি ভেজা থাকে, তাহলে শক্ত কাঠি দিয়ে গাদার উপর থেকে মাঝে মাঝে ছিদ্র করে দিতে হবে, যাতে বাতাস ভিতরে ঢুকতে পারে। এরপর গাদার ভিতরের অংশ শুকিয়ে গেলে ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গাদা অতিরিক্ত শুকিয়ে না যায়। যদি অতিরিক্ত শুকিয়ে যায়, তাহলে ছিদ্র পথে পানি বা গো-চনা ঢেলে গাদাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে গোবর, গো-চনা এবং ইউরিয়া গাদাতে ব্যবহার করা হলে স্তূপ তৈরির প্রায় ৩ মাসের মধ্যে তৈরি কম্পোস্ট জমিতে ব্যবহারের উপযুক্ত হবে। আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে যদি কম্পোস্ট গুড়াঁ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে তা জমিতে ব্যবহারের উপযোগী হয়েছে।
কম্পোস্ট ব্যবহারের উপকারীতাঃ মাটিতে বা ফসলের জমিতেকম্পোস্ট ব্যবহার করলে-
- মাটির পুষ্টিমান বৃদ্ধি করে ও মাটিকে সমৃদ্ধ করে।
- বেলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং পুষ্টি উপাদান যুক্ত করে।
- এটেল মাটিকে ঝুরঝুরে করে ও এর বায়ুচলাচল বৃদ্ধি করে।
- সবজি ফসলে মালচিং এর কাজ করে।
- ভূমিক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে।
- মাটিতে উপকারী অনুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।
- মাটির পি-এইচ বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মান নিরপেক্ষ রাখতে সহায়তা করে।
- পট অথবা টবের মাটির সহিত কম্পোস্ট ব্যবহার করে চারা রোপন করা হয়।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!