সরিষার চাষ পদ্ধতি ও বিভিন্ন জাতের তুলনামূলক বর্ণনা
সরিষা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান তৈল বীজ ফসল। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে এর চাষাবাদ করা হয় এবং প্রায় আড়াই লক্ষ টন তেল পাওয়া যায়। বিভিন্ন জাতরে সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪% তেল থাকে। খৈলে প্রায় ৪০% আমিষ থাকে। তাই খৈল গরু ও মহিষের জন্য খুব পুষ্টিকর খাদ্য। এছাড়াও খৈল একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার। বাংলাদেশে ২ প্রকার সরিষার চাষ করা হয়। এ গুলো হলো-টরি ( পিঙল ও শ্বেত ) ও রাই। বর্তমানে নেপাস সরিষার জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং এর আবাদও হচ্ছে।
সরিষার জাত:
টরি-৭
ফসল বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ৭০-৮০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্দতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ফলন ৯৫০-১১০০ কেজি হয়। বীজে তেলের পরিমাণ ৩৮-৪১%। জাতটি রোগবালাই সহনশীল।
সোনালী সরিষা (এসএস-৭৫)
ফলে ৪ টি কক্ষ থাকে এবং প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ৩৫-৪৫ টি । বীজ গোলাকার ও বীজের রং হলদে সোনালি। হাজার বীজের ওজন ৩.৫-৪.৫ গ্রাম এবং বীজে তেলের পরিমাণ ৪৪-৪৫%। গাছের কান্ড ও শিকড় শক্ত বলে অধিক সার ও সেচ প্রয়োগে গাছ নুয়ে পড়ে না।
কল্যাণীয়া (টিএস-৭২)
বীজ গোলাকার। হাজার বীজের ওজন ২.৫-৩.০ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ ৪০-৪২%। ফসল পাকতে ৭৫-৮৫ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্দতিতে চাষ করলে প্রতি হেক্টরে ১.৪৫-১.৬৫ টন ফলন পাওয়া যায়। কল্যাণীয়া জাতটি স্বল্প মেয়াদী উচ্চ ফলনশীল আগাম জাত।
দৌলত ( আর এস-৮১)
বপন থেকে তোলা পর্যন্ত ৯০-১০৫ দিন সময় লাগে। হেক্টর প্রতি ফলন ১.১-১.৩ টন। দৌলত জাত খরা ও কিছুটা লবনাক্ততা সহনশীল। বীজে তেলের পরিমাণ ৩৯-৪০%। জাতটি অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগ সহনশীল।
বারি সরিষা -৬ (ধলি)
ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট এবং প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ২২-২৫ টি। হাজার বীজের ওজন ৩-৪ গ্রাম। বীজের রং হলদে। কান্ড ও শিকড় শক্ত হওয়ায় গাছ হেলে পড়ে না। পরিপক্ক ফল ফেটে গিয়ে বীজ ঝরে পড়ে না। ফল ও ফলের ঠোঁট তুলনামূলকভাবে লম্বা। বারি সরিষা -৬ (ধলি) পাকতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। পরিমাণমত সার ও সেচ দিলে প্রতি হেক্টরে ১.৯-২.২ টন ফলন পাওয়া যায়। বীজে তেলের পরিমাণ ৪৪-৪৫%।
বারি সরিষা -৭ (ন্যাপাস-৩১৪২)
গাছের পাতা বোটাহীন ও তল মসৃণ । ফুলের পাঁপড়ির রং সাদা। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৯০-১২৫ টি । ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট এবং প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫-৩০ টি।
বারি সরিষা -৮ (ন্যাপাস-৮৫০৯)
ফুলের পাঁপড়ির রং হলদে। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৯০-১২৫ টি, ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট । প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫-৩০ টি। বীজের রং কালচে। হাজার বীজের ওজন ৩.৪-৩.৬ গ্রাম। ফসল পাকতে ৯০-৯৫ দিন সময় লাগে।বীজে তেলের পরিমাণ ৪৩-৪৫%। এ জাত অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগ ও সাময়িক জলাবদ্দতা সহনশীল।
রাই-৫
প্রতি গাছে ৪-৬ টি প্রাথমিক শাখা থাকে। পাতা বোটাযুক্ত ও খসখসে। প্রস্ফুটিত ফুল কুড়ির নিচে অবস্থান করে।প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৯০-১২০। বীজে তেলের পরিমাণ ৩৯-৪০%।
বারি সরিষা -৯
এ জাতটি টরি-৭ এর চেয়ে শতকরা ১০-২৫ ভাগ বোশ ফলন দেয়। আমন ধান কাটার পর এবং বোরো ধান চাষের আগে। স্বল্প মেয়াদী এ জাতটি সহজে চাষ করা সম্ভব। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪৩-৪৪ ভাগ। ফসল পাকতে ৮০-৮৫ দিন সময় লাগে। পরিমাণমত সার ও সেচ দিলে হেক্টরে ১.২৫-১.৪৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
বারি সরিষা -১০
গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। প্রতি গাছে ৪-৬ টি প্রাথমিক শাখা থাকে। শাখা থেকে প্রশাখা বের হয়। পাতা হালকা সবুজ রংয়ের। পাতা বোটাযুক্ত ও খসখসে । প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ১০০-১২০ টি । ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট । প্রতি পলে বীজের সংখ্যা ১২-১৫ টি । বীজের রং পিঙ্গঁল । হাজার বীজের ওজন ২.০-৩.০ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪২-৪৩ ভাগ। হেক্টর প্রতি ফলন ১.২৫-১.৪৫ টন। আমন ধান কাটার পর এ জাতটি নাবি জাত হিসাবে চাষ করা যায়।
বারি সরিষা -১১
হাজার বীজের ওজন ৩.৫-৪.০ গ্রাম। বীজের ওজন অন্যান্য রাই সরিষার চেয়ে বেশি। ফসল ১০৫-১১০ দিন পাকে। প্রতি হেক্টরে ২.০-২.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। এ জাতটি দৌলতের চেয়ে ২০-২৫% বেশি ফলন দেয়। আমন ধান কাটার পর এ জাতটি নাবি জাত হিসাবে চাষ করা যায়। জাতটি খরা এবং লবনাক্ত সহনশীল। প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ১২-১৫ টি। বীজের রং পিঙ্গল।
বারি সরিষা -১২
ফুলের পাঁপড়ির রং হলদে। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৭০-১০০টি। প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ১৫-২০টি। বীজের রং পিঙ্গল। হাজার বীজের ওজন ২.৬-৩.২ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ ৪৩-৪৪%। ফসল ৮৫-৯০ দিনে পাকে। প্রতি হেক্টরে ১.৪৫-১.৬৫ টন ফলন পাওয়া যায়। এ জাতটি ‘টরি-৭’ জাতের চেয়ে ১৫-২০% বেশি ফলন দেয়। আমন ধান কাটার পর স্বল্প মেয়াদী জাত হিসেবে চাষ করে বোরো ধান রোপণ করা যায়।
বারি সরিষা-১৩:
গাছের উচ্চতা ৮০-১০০ সেমি। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৬৫-৭৫টি। প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ২৮-৩০টি। বীজের রং পিঙ্গল। হাজার বীজের ওজন ৩.৭-৩.৯ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪২-৪৩ ভাগ। হেক্টরপ্রতি ফলন ২.২০-২.৮০ টন। ফসল ৯০-৯৫ দিনে পাকে।
বারি সরিষা-১৪
গাছের উচ্চতা ৭৫-৮৫ সেমি। প্রতি গাছে শুঁটির সংখ্যা ৮০-১০০টি। প্রত্যেক শুটিতে বীজের সংখ্যা ২২-২৬টি। বীজের রং হলুদ বর্ণের। হাজার বীজের ওজন ৩.৫-৩.৮ গ্রাম। জীবনকাল ৭৫-৮০ দিন। ফলন হেক্টরে ১.৪-১.৬ টন। এ জাতটি টরি-৭ এর চেয়ে ২৫-৩০% বেশি ফলন দেয়। আমন ধান কাটার পর স্বল্পমেয়াদী জাত হিসেবে চাষ করে বোরো ধান রোপণ করা সম্ভব।
বারি সরিষা-১৫
গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। শুঁটি বারি সরিষা-১৪ এর তুলনায় সরু ও লম্বা। বীজের রং হলুদ বর্ণের। হাজার বীজের ওজন ৩.২৫-৩.৫০ গ্রাম। স্থিতিকাল ৮০-৮৫ দিন। ফলন প্রতি হেক্টরে ১.৫৫-১.৬৫ টন। এ জাতটি ‘টরি-৭’ এর চেয়ে ৩০-৩৫% বেশি ফলন দেয়। আমন ধান কাটার পর স্বল্পমেয়াদী জাত হিসেবে চাষ করে বোরো ধান রোপণ করা সম্ভব।
বারি সরিষা-১৬
গাছের উচ্চতা ১৭৫-১৯৫ সেমি। প্রতি গাছে শুঁটির সংখ্যা ১৮০-২০০টি। শুঁটি দুই কক্ষ বিশিষ্ট। প্রত্যেক শুঁটিতে বীজের সংখ্যা ৯-১১টি। বীজের রং পিঙ্গল বর্ণের। হাজার বীজের ওজন ৪.৭-৪.৯ গ্রাম। স্থিতিকাল ১০৫-১১৫ দিন। ফলন ( শস্যদানা ) ২.০-২.৫ টন/হেক্টর। জ্বালানি ৩.০-৩.৫ টন/হেক্টর। আমন ধান কাটার পর বোরো ধান করে না এরূপ জমিতে এই জাতটি চাষ করা যায়। এটি খরা ও লবনাক্ত সহিষ্ণু জাত। অল্টারনারিয়া ও অরোবাংকি সহনশীল জাত।
বারি সরিষা-১৭
এই জাতটি স্বল্প মেয়াদী। স্থিতিকাল ৮২-৮৬ দিন। গাছের উচ্চতা ৯৫-৯৭ সেমি। গাছ সহজে ঢলে পড়ে না। প্রতি গাছে শুঁটির সংখ্যা ৬০-৬৫ এবং প্রতি শুঁটিতে বীজের সংখ্যা ২৮-৩০। জাতটির ফুলের ও বীজের রং হলুদ। বীজের রং হলুদ হওয়ায় প্রচলিত বাদামী রঙের বীজের তুলনায় ৩-৪% তেল বেশি থাকে। হাজার বীজের ওজন ৩.০-৩.৪ গ্রাম। প্রতি হেক্টরে ফলন ১.৭-১.৮ টন। এ জাতটি ‘বারি সরিষা-১৪’ অপেক্ষা ৫-১০% বেশি ফলন দিয়ে থাকে। জাতটি স্বল্প মেয়াদী হওয়ায় রোপা আমন-সরিষা-বোরো ধান শস্য বিন্যাসের জন্য উপযুক্ত অর্থাৎ আমন ধান কর্তনের পর উক্ত জাতটি চাষ করে বোরো ধান চাষ করা সম্ভব।
সরিষা চাষের মাটি
সরিষার চাষের জন্য মাটি হতে হবে এঁটেল দোআঁশ, বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি।
জমি তৈরি
সরিষার জমি এমন ঝুরঝুরা করে চাষ করতে হবে যাতে সহজেই বীজ থেকে চারা গজাতে পারে। জমি ৫-৬ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে পরিপাটি করতে হবে। সরিষা জমির বড় বড় ঢেলা ভেঙ্গে সমতল করতে হবে। যাতে জমির কোথাও পানি জমতে না পারে। জমির চারপাশে নালার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে পরে সেচ দিতে ও পানি নিকাশে সুবিধা হবে।
বীজ বপন
সাধারণত সরিষা বীজ ছিটিয়ে বপন করা হয়। এছাড়া সারিতেও বীজ বপন করা হয়। ছিটিয়ে বুনলে শেষ চাষে বীজ বপন করে মই দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সারিতে বীজ বুনলে, সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেন্টিমিনার। সারিতে চারার দূরত্ব ৪-৫ সেন্টিমিটার রাখতে হবে। ৩-৪ সেমি গভীরতায় সরিষার বীজ বপন করতে হবে। সরিষার বীজ ছোট। তাই বপনের সুবিধার জন্য বীজের সাথে ঝুরঝুরে মাটি অথবা ছাই মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। সারি করে বুনলে জমিতে সার, সেচ ও নিড়ানি দিতে সুবিধা হবে। বপনের সময় জমিতে বীজের অংকুরোদগমের উপযোগী রস থাকতে হবে। মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে চারা গজাবে। গাছ বেশি ঘন হলে চারা গজানোর ৭-১০ দিন পর চারা পাতলা করে দিতে হবে।
বীজের পরিমাণ
সরিষার চাষের ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি জমিতে ৭-৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সারিতে বুনলে ৪-৬ কেজি বীজ লাগতে পারে।
বপনের সময়
কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বর) মাস পর্যন্ত বপন করা যেতে পারে।
নিড়ানী দেওয়া
বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর একবার এবং ফুল আসার সময় দ্বিতীয়বার নিড়ানি দিতে হয়।
সেচ প্রয়োগ
বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে (গাছে ফুল আসার সময়) প্রথম সেচ এবঙ ৫০-৫৫ দিসের মধ্যে (ফল ধরার সময়) দ্বিতীয় সেচ দিতে হবে। বপনের সময় মাটিতে রস কম থাকলে চারা গজানোর ১০-১৫ দিনের মধ্যে একটি হালকা সেচ দিতে হয়।
সারের পরিমাণ
জাত, মাটি এ মাটিতে রসের তারতম্য অনুসারে সার দিতে হয়। সারের পরিমাণ নিম্নরুপ (গ্রাম/শতক)
সারের নাম | সোনালী সরিষা, বারি সরিষা-৬, ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩ ও ১৬ | টরি-৭, কল্যাণীয়া, রাই-৫,দৌলত, বারি সরিষা-৯, ১৪, ১৫ ও ১৭ |
ইউরিয়া | ১২০০ | ১১০০ |
টিএসপি | ৬৫০ | ৬২৫ |
এমওপি | ৩৫০ | ৩২৫ |
জিপসাম | ৬৫০ | ৬২৫ |
জিংক সালফেট | ২০ | ১৫ |
বোরাক্স/বরিক এসিড | ২৫ | ২৫ |
পচা গোবর | ৩০-৪০ কেজি | ৩০-৪০ কেজি |
সার প্রয়োগের নিয়ম
১· অর্ধেক পরিমাণ ইউরিয়া এবং সব টিএসপি, এমপি ও জিপসাম সার জমি তৈরির সময় মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
২· বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিন পর যখন গাছে দুই-চারটি করে ফুল আসা শুরু হয় তখন ছিটিয়ে দিতে হবে।
৩· ভোরে গাছের পাতায় কুয়াশা থাকে এবং সার গাছের পাতায় লেগে পাতা পুড়ে যেতে পারে, সে জন্য বিকালে সার ছিটাতে হবে।
সরিষার জাব পোকা :
লক্ষণ: পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা পোকা উভয়ই সরিষার পাতা, কান্ড, ফুল ও ফল হতে রস শোষণ করে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ফুল ও ফলের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং পাতা কুঁকড়ে যায়। জাব পোকা এক ধরনের রস নিঃসরণ করে, ফলে তাতে সুটিমোল্ড ছত্রাক জন্মে এবং আক্রান্ত অংশ কালো দেখায়। এজন্য ফল ঠিকমত বাড়তে পারে না, বীজ আকারে ছোট হয়। বীজে তেলের পরিমাণ কমে যায়। ফল ধারণ অবস্থায় বা তার আগে আক্রমণ হলে এবং প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে।
প্রতিকার
১. আগাম চাষ আশ্বিনের শেষ ভাগ ও মধ্য-কার্তিক (অক্টোবর) অর্থাৎ আগাম সরিষা বপন করলে জাব পোকার আক্রমণের আশংকা কম থাকে।
২.আক্রমণ বেশি থাকলে টিডো ২০এস এল বা ইমিটাফ ২০ এস এল বা সবিক্রন ১ মিলি/ লিটার পানিতে বা ম্যালাথিয়ন/ সুমিথিয়ন/ ফলিথিয়ন-৫৭ ইসি বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে বিকালে স্প্রে করতে হবে।
সরিষার পাতা ঝলসানো রোগ
লক্ষণ: প্রাথমিক অবস্থায় সরিষা গাছের নীচে বয়স্ক পাতায় এ রোগের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীতে এ ছত্রাকের আক্রমণে গাছের পাতা, কান্ড ও ফলে চক্রাকার কালচে দাগের সৃষ্টি হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পাতা ঝলসে যায়। ফলে সরিষার ফলন খুব কমে যায়।
প্রতিকার
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতের সরিষার চাষ করতে হবে। ধলি, দৌলত, বারি সরিষা-৭, বারি সরিষা-৮ ইত্যাদি জাত কিছুটা পাতা ঝলসানো রোগ সহনশীল।
২. রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে।
৩. বীজ বপনের আগে বেনলেট (১·৫ গ্রাম/কেজি ) বা অটোস্টিন/ ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে (২-৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক/কেজি বীজ) বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
৪. এ রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোভরাল-৫০ ডব্লিউপি বা ডাইথেন এম-৪৫, ০.২% হারে (প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম) পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পরপর ৩-৪ বার সেপ্র করতে হবে।
পরজীবী উদ্ভিদজনিত রোগ
লক্ষণ: সরিষার পরজীবী উদ্ভিদের মধ্যে অরোবাংকি প্রধান। সরিষা গাছের শিকড়ের সাথে এ পরজীবী উদ্ভিদ সংযোগ স্থাপন করে খাদ্য সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে। এর ফলে পরজীবী আক্রান্ত সরিষার গাছ দুর্বল হয়, বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফলন হ্রাস পায়। অরোবাংকি এক প্রকার সপুষ্কক পরজীবী উদ্ভিদ এবং এর বংশবৃদ্ধি সরিষা গাচের উপর নির্ভরশীল। এর বীজ মাটিতেই অবস্থান করে। মাটি, ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, সেচের পানি প্রভৃতির মাধ্যমে অরোবাংকির উৎপত্তি ও বিস্তার ঘটে। বারবার একই জমিতে সরিষা পরিবারের ফসল চাষ করলে এ পরজীবীর বিস্তার ঘটে।
প্রতিকার:
১. ফুল আসর আগে পরজীবী উদ্ভিদ জমি হতে তুলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
২. পরিমিত হারে টিএসপি সার ব্যবহার করতে হবে।
৩. আগে এ রোগে আক্রান্ত জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ, মাড়াই ও সংরক্ষণ
সরিষা গাছের ফল তথা সিলিকুয়া হলুদ রঙের হলে ফসল তুলতে হবে। মাটি নরম থাকলে সরাসরি গাছের গোড়া ধরে টেনে শিকড়সহ তোলা যায়। অন্যথায় কাঁচি দিয়ে মাটির ঠিক উপরিভাগে গাছের গোড়া কেটে দিতে হবে। তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে বীজ সংগ্রহ করে ৪-৫ দিন রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
ফলনঃ সরিষার বিভিন্ন জাতের গড় ফলন ২-২·৫ টন / হেক্টর।
বিঃদ্রঃ মৌমাছি সরিষা গাছের পরাগায়নে সাহায্য করে এবং এতে ফলন বৃদ্ধি পায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরিষা ফুলে অধিক সংখ্যক মৌমাছি মধু সংগ্রহের জন্য বিচরণ করে। তাই বিকালে যখন জমিতে মৌমাছি থাকে না তখন কীটনাশক ছিটাতে হবে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!