জিও ডাটা ব্যবহারের মাধ্যমে আলুর মড়ক (লেট ব্লাইট ) রোগ প্রতিরোধ
জিও ডাটা ব্যবহারের মাধ্যমে আলুর মড়ক রোগ প্রতিরোধ
গতানুগতিক ও বংশ পরম্পরায় আলু চাষ করে আসছেন আলু প্রধান এলাকার চাষিরা। যুগের সাথে উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহারে অভ্যস্থ হওয়ার পাশাপাশি অভ্যস্থ হয়ে উঠেছেন সার ও পানি ব্যবস্থাপনা ছাড়াও রোগ বালাই প্রতিরোধে বালাই নাশক ব্যবহারে। এতে এক দিকে যেমন ফলন বাড়ছে অন্য দিকে ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়ছে এবং বালাইনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ফসল যেমন অনিরাপদ করে তুলছে তেমনি মুল্যবান মৃত্তিকা হয়ে উঠছে উর্বরতাশক্তিহীন। ক্রমেই রাসায়ানিক সারের প্রতি নির্ভরশীল এবং রোগ জীবাণুসমুহ হয়ে উঠছে বালাইনাশক সহনশীল বা রেজিস্ট্যান্ট। রোগ ও বালইনাশক, সার ব্যবস্থাপনা যেমন স্বাভাবিক পরিবেশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব তেমনি প্রতিকুল পরিবেশে রোগ ও বালাইনাশকের ব্যবহার বেশী করতে হয়। একটি ছোট উদাহারণ থেকে উপলব্ধি করা সম্ভব।
আলুর মড়ক রোগ, ছত্রাকের বংশ বৃদ্ধির অনুকুল আবহাওয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়। ছত্রাকের বংশ বৃদ্ধির অনুকুল আবহাওয়া মানেই আলু চাষে প্রতিকুল পরিবেশ। স্বাভাবিক পরিবেশে ছত্রাকনাশক ৭-১৫ দিন পর পর স্প্রে করার নির্দেশনা থাকলেও প্রতিকুল পরিবেশ ৪-৫ দিন পর পর স্প্রে করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফলে স্বাভাবতিকই ছত্রাকনাশকের পরিমাণ দ্বিগুণ লাগে। এতে যেমন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় তেমনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে মড়ক রোগের প্রতিরোধ অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু কারণে। এ ক্ষেত্রে ভু-উপগ্রহীয় তথ্য ব্যবহার করে প্রতিকুল আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাসের মাধ্যমে আলুর মড়ক রোগ যেমন প্রতিরোধ করা যায় তেমনি ছত্রাকনাশকের যথেচ্ছা ব্যবহার রোধ করে উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করছে জিওপটেটো।
“আলুর মড়ক দমনে আমরা আছি আপনার পাশে” এই শ্লোগনকে সামনে রেখে নেদারল্যান্ডস স্পেস অফিস (এনএসও) কর্তৃক নেদারল্যান্ডের ওয়েগিনংগন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট রিসার্চ ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ২০১৬ সন থেকে বাংলাদেশে রংপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে জিওপটেটো পাইলট প্রকল্প। বাংলাদেশ সরকারের অংশ হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি তথ্য সার্ভিস ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৭-১৮ ইং সনে রংপুরের ৬৫০০ জন এবং মুন্সিগঞ্জের ১৫০০জন মোট ৮০০০ জন আলু চাষিকে স্থানীয় আবহাওয়া ও ভু-উপগ্রহীয় তথ্য যাচাই করে মড়ক রোগ প্রতিরোধে আগামবার্তা প্রদান করা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ি উপজেলার আলু চাষি সামসুল হক লাকুরিয়া, আলু চাষের অভিজ্ঞতা দীর্ঘ ২৫ বছরের, মোট জমির পরিমান ৪ একর, সবটুকুই জমিতেই আলু চাষ করেন ও আলু চাষে বেশ পটু। কখন কোন ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে তা তার নখদপর্নে। কিন্তু এক মাত্র অনিশ্চয়তা প্রতিকুল আবহাওয়া। প্রতিকুল আবহওয়ার জন্যই রূটিন মাফিক ছত্রাকনাশকের স্প্রে করা সম্ভব হয় না। নিজে আস্থস্ত থাকার জন্য পরামর্শের চেয়ে একটু বেশী ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন এবং তার চিন্তা কিভাবে সফল ভাবে আলু ঘরে তুলবেন। লাভের আশায় আলু বুনলেও, লাভ-লোকশান পরের ব্যাপার।
অন্য আরেকজন আলু চাষি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার আটপাড়া ইউনিয়নের বাবুল মিঞা। নিজের জমি ৫ একর সাথে বর্গা নেন আরো ৫ একর মোট ১০ একরের আলু চাষি। দীর্ঘ দিন প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে অত্যন্ত সফলভাবে আলু চাষ করলেও একমাত্র অনিশ্চয়তা কুয়াচ্ছান্ন আবহাওয়া। সেজন্যই বেশি তদপর থাকতে হয়। কারণ, একমাত্র প্রতিকুল আবহাওয়ায় মড়ক রোগ লাগলে ফলন প্রায় আর্ধেক হয়ে যাবে এটা তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন। সে জন্যই তার প্রয়োজন আবহাওয়ার পূর্বাভাস সর্ম্পকীত উপদেশ ও দিক নির্দেশনা।
গত জানুয়ারি মাসের দিকে আটপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্তরে এক ভিডিও শো দেখেন পরে এক বিকালে, উপস্থিত উপজেলা কৃষি আফিসারের সাথে কথা বলে আরো আস্থস্ত হন। নিজস্ব মোবাইলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস-সহ মড়করোগের সতর্কতা সম্বলিত বার্তা গ্রহণের জন্য জিওপটেটো সেবায় রেজিষ্ট্রশন করেন। নিয়মিত ৩-৭ দিন পূর্বে আলু চাষের প্রতিকূল আবহাওয়ার মেসেজ বা সংক্ষিপ্ত বার্তা পাচ্ছেন। এবং সে মোতাবেক ছত্রকনাশক স্প্রে করছেন আটপাড়ার বাবুল মিঞা। পার্শ্ববর্তী কৃষক পূর্বের ধারাবাহিকতায় স্প্রে করে চলছেন। দুজনের জমিতেই মড়ক রোগের সংক্রমন না হলেও পার্শ্ববর্তীতে কৃষক ছত্রকনাশক স্প্রে করছেন বাবুল মিঞার চেয়ে ০২ বার বেশি, এছাড়াও সব সময় চিন্তায় থাকতে হয়। অন্যদিকে বাবুল মিঞা রয়েছেন বেশ নিশ্চিন্ত, অন্য রবি ফসল ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ব্যস্ত। এছাড়াও যে কোন সমস্যায় কৃষি কল সেন্টারের সেবা নিচ্ছেন প্রায়ই।
এই আগামবার্তা প্রাপ্তির জন্য মুন্সিগঞ্জ,রংপুর ও দিনাজপুর জেলার কৃষককে ০৯৬৭৮৭৭৪৪২২ নম্বরে ডায়াল করে ফ্রি রেজিস্ট্রশন করতে হয়। রেজিস্ট্রেশনকৃত কৃষক তার এলাকার আলর মড়ক রোগের অনুকুল আবহাওয়ার ৩-৭ দিন পূর্বে রেজিস্ট্রশনকৃত মোবাইল নম্বরে সর্ম্পূণ বাংলায় সহজ ভাষায় ফ্রি আগামবার্তা প্রেরণ করা হয়। এই আগামবার্তায় সুপারিশকৃত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে একদিকে যেমন অতিরিক্ত ছত্রাকনাশকের ব্যবহার হ্রাসের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমেছে অন্যদিকে যথোপযুক্ত ছত্রাকনাশকের ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যকরভাবে আলুর মড়ক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও আলু চাষে যেকোন পরামশের্র জন্য কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নম্বরে কল করে তাৎক্ষনিক পরামর্শ পাওয়া যাবে।
কৃষিবিদ মোঃ মুশফিকুল ইসলাম
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!