আলু ও সবজি সংরক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক হিমাগার।হিমাগার তৈরির পদ্ধতি
আলু সংরক্ষণ হলো আলু উৎপাদনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী এলাকা মুন্সীগঞ্জ। সেখানেও আলু নিয়ে প্রতি বছর কৃষকের লোকসানের চিত্র দেখা যায়। এ দেশে আলু বেশি উৎপাদন হওয়ার কারণে আলু নিয়ে কৃষককে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আলু নিয়ে কৃষকের এই বিড়ম্বনার অন্যতম একটি জটিল জায়গা হলো হিমাগারে আলু সংরক্ষণের বিষয়টি।
মুন্সীগঞ্জে বাঁশের মাচাঘর করে আলু রাখার একটি পদ্ধতি চালু করেছিল সিডিপি (ক্রপ ডাইভারসিফিকেশন প্রোগ্রাম) । বাঁশের বাতা দিয়ে ফাঁক রাখা হয়েছিল প্রাকৃতিক বাতাস ও আলো প্রবেশ আর বের হওয়ার জন্য। তবে এ পদ্ধতিতে একজন কৃষক সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত আলু সংরক্ষণ করতে পারে, যা বাজার ধরার জন্য যথেষ্ট সময় নয় বলে কৃষক মনে করেন। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে দেশে ১ কোটি টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে যার মধ্যে ৩৯০টি হিমাগারে ৫৩ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে।
তবে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রাজশাহী নগরীর ভদ্রা এলাকায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পরিবেশ বান্ধব ৩০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক হিমাগার চালু করা হয়। ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রাকৃতিক হিমাগারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। প্রাকৃতিক হিমাগারের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন জানান, প্রাকৃতিক হিমাগারের কর্মক্ষমতা নিয়ে তিনি আশাবাদী। হিমাগারের মধ্যে আলু, পেঁয়াজ, আদা, গাজর, টমেটো, অন্যান্য সবজি ও আম রাখা হয়েছিল। সেখানে আলু, পেঁয়াজ ও আদা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া গেছে। আলু এবং পেঁয়াজ চার মাস পর্যন্ত সংরক্ষিত ছিল।
ড. মনজুর হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন আরেকটি গবেষণা প্রকল্প চালু করা হবে। এতে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার না করে তিন থেকে ছয় মাসের জন্য টমেটো, গাজর এবং শাক-সবজির পাশাপাশি আম সহ অন্যান্য কিছু ফল সংরক্ষণ করা হবে। হিমাগারটি বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের জন্য সহজ ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে। এই হিমাগার চালানোর জন্য কোন বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না। কৃষিপন্য থেকে উৎপন্ন বাষ্পই প্রাকৃতিক হিমাগারে পন্য সংরক্ষণে যথেষ্ট।
৬০ ফুট লম্বা এবং ৩০ ফুট চওড়া ৩০০ টন কৃষিপন্য সংরক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক হিমাগার তৈরি করতে ইট, সিমেন্ট, বাঁশ ও শন ব্যবহার করতে হয়েছে। প্রাকৃতিক হিমাগার তৈরি করতে দু’টি সমান্তরাল দেয়াল দিতে হয়। ভেতরের দেয়ালে ইট ও সিমেন্ট এবং দেয়ালের বাইরে কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ করতে হয়, দুই দেয়ালের মধ্যে তিন ইঞ্চি ফাঁক রেখে তা বালি দিয়ে ভরাট করা হয়। প্রাকৃতিক হিমাগারের ভেতরে সূর্যের আলোর জন্য উপরের অংশে দু’টো কাঁচের তৈরি জানালা লাগানো হয়। এছাড়াও, ১১০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে চারটি সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। অধ্যাপক হোসেন বলেন, ২৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় আলু এবং পেঁয়াজ শীতল রাখতে সফল হয়েছেন। ১৬ ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রায় সবজি সংরক্ষণের প্রয়োজনে এর পাশে ছোট একটি প্রাকৃতিক হিমাগার স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এতে অন্যান্য সবজি এবং ফলের উপর পরীক্ষা চালানো হবে।
গতানুগতিক হিমাগারে ৮০ কেজি আলুর বস্তা সংরক্ষণে খরচ পড়ে ৩৫০ টাকা, আর প্রাকৃতিক হিমাগারে সমপরিমাণে আলু সংরক্ষণে খরচ পড়ে ১০০ টাকা। এতে বস্তা প্রতি কৃষকের সাশ্রয় হয় ২৫০ টাকা। কৃষিভিত্তিক এলাকায় মৌসুমী ফল, সবজি, রসুন ও কাঁচা মরিচের মতো সতেজ মশলাকে জৈব উপায়ে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক হিমাগার ভবিষ্যতে একটি কার্যকরি পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশা করা যায়।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!