পলিব্যাগে চারা উৎপাদন। পলিব্যাগ নার্সারির সুবিধাসমূহ
পলিব্যাগে চারা উৎপাদন বর্তমানে বীজতলায় সরাসরি চারা উৎপাদনের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কেননা পূর্বে শুধুমাত্র বেডে চারা উৎপাদন করা হতো। সেসব চারা মাটির বলসহ বা উপড়ে তুলে নিয়ে লাগানোর জন্য নেওয়া হতো। যার ফলে চারা তোলার সময় চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পরবর্তীতে রোপিত চারা অনেক ক্ষেত্রে মারা যেত। কারণ শিকড় হলো গাছের জীবন। এটি যে গাছকে মাটিতে ধরে রাখে শুধু তা নয় উপরন্তু এটি মাটি থেকে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পানীয় ও খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে। কিছু মূল্যবান চারা অবশ্য বাঁশের চাঁচি বা মাটির টবে তোলা হতো। এ দু’টোই বেশ ব্যয়সাপেক্ষ বিধায় নার্সারিতে পলিব্যাগে চারা উৎপাদনই উত্তম।
পলিব্যাগ নার্সারির সুবিধা: যে নার্সারিতে পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করা হয় তাকে পলিব্যাগ নার্সারি বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের ফল ও বনজ গাছের চারা উৎপাদনের জন্য সরাসরি বীজ অথবা অঙ্কুরিত বীজ পলিব্যাগে বপন করা যায়।
পলিব্যাগ নার্সারিতে চারা উৎপাদনের অনেক সুবিধা থাকায় বেশিরভাগ ফলজ ও বনজ চারাই পলিব্যাগে উৎপাদন করা হয়। পলিব্যাগ নার্সারিতে চারা উৎপাদন করার প্রধান সুবিধাগুলো হলোঃ
- যে কোন মাপের এবং ঘনত্বের তৈরি করা যায়।
- মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী।
- হালকা ও সহজে পরিবহনযোগ্য।
- পলিব্যাগে উৎপাদিত চারার পরিচর্যা করা সহজ এবং চারা মৃত্যুহার কম।
- পলিব্যাগের চারা পরিবহন করা সহজ এবং পরিবহনে চারার কোন ক্ষতি হয় না।
- পলিব্যাগের চারা রোপণ করা সহজ ও মৃত্যুহার কম।
পলিব্যাগে চারা উৎপাদনঃ চারা উৎপাদন একটি বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি। বর্তমানে বীজতলায় সরাসরি চারা উৎপাদনের চেয়ে নার্সারিতে পলিব্যাগে চারা উত্তোলনই বেশি জনপ্রিয়। পেঁপে, পেয়ারা ও বনজ উদ্ভিদের বীজ থেকে চারা তৈরির জন্য কাল পলিব্যাগ ব্যবহার করা ভাল। বিভিন্ন ফসলের চারা উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ১৫ সেমি লম্বা ও ১০ সেমি প্রস্থ বিশিষ্ট পলিব্যাগ শতকরা ৫০ ভাগ উর্বর বেলে দোআঁশ মাটি ও শতকরা ৫০ ভাগ গোবর বা কম্পোষ্ট দিয়ে ভরে দিতে হবে। প্রয়োজনে ছোট বা আরও বড় পলিব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রয়োজনে চালুনী দ্বারা চেলে সেই গুঁড়া মাটি দ্বারা পলিব্যাগ ভর্তি করে উপরিভাগ দুই হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ২/৩ বার ঝাঁকুনী দিতে হবে। তারপর পুনরায় মাটি ঢেলে ব্যাগটি ভর্তি করতে হবে।
নার্সারিতে পলিব্যাগ স্থাপন: নার্সারির যে অংশে পলিব্যাগ রাখা হবে সে জায়গাটি ভালোভাবে দুরমুজ করে সমান করে নিতে হবে। তারপর নার্সারির যেকোন এক পাশ হতে পলিব্যাগ স্থাপন শুরু করতে হবে। ব্যাগগুলো সোজাভাবে একটি আরেকটির সাথে আটঁসাটঁ করে রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই যেন পলিব্যাগ বাঁকা বা কাত করে সাজানো না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাঁকা পলিব্যাগে চারা বাঁকা ও দুর্বল হবে। পলিব্যাগে অর্ধেক মাটি ভরার পর ব্যাগটিকে ২-৩ বার ঝেঁকে নিতে হবে যাতে ব্যাগের মাটি ঠিকমতো বসে যায় এবং তার মাঝখানে বীজ বপন করে পলিব্যাগ নার্সারিতে সাজিয়ে রাখা হয়। পলিব্যাগের মাটি বেশি শুকিয়ে গেলে মাঝে মাঝে হালকা সেচ দিতে হবে। গাছের ধরণ অনুযায়ী বীজ গজানোর মাস খানেক পর থেকে পলিব্যাগের চারা বিক্রয় শুরু করা যেতে পারে। পানি সেচের ফলে পলিব্যাগে যাতে পানি জমে যেতে না পারে সেজন্য অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে পলিব্যাগের তলা থেকে ৩ সেমি উপরে পলিব্যাগের চতুর্দিকে বেশ কয়েকটি ছিদ্র করে দিতে হবে। পলিব্যাগের ছিদ্র দিয়ে শিকড় বের হয়ে এলে তা কেটে দিতে হবে।
পলিব্যাগে চারা স্থানান্তরকরণ: একটি পলিব্যাগে একাধিক চারা থাকা ঠিক নয়। এতে চারার বৃদ্ধি কম হয়। তাই একাধিক চারা থাকলে একটি সুস্থ্য সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। পলিব্যাগ থেকে চারা তোলার পূর্বে বা পলিব্যাগে চারা স্থানান্তর করার পূর্বে পলিব্যাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের সেচ দিতে হবে। তারপর সতর্কতার সাথে পলিব্যাগ থেকে চারা বের করে নিয়ে তা রোপণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন চারার গোড়া বা শিকড় থেকে যেন সব মাটি পড়ে না যায়। অনেক সময় পলিব্যাগসহ চারা রোপণ করা হয়। এক্ষেত্রে রোপণের সময় ব্লেড বা ধারালো চাকু দিয়ে পলিব্যাগের নিচে ও চারিদিকে কেটে দিতে হবে যেন এসব কর্তিত স্থানের ভিতর দিয়ে শিকড় বের হয়ে তা মাটিতে প্রবেশ করতে পারে। তবে রোপণের পূর্বে ব্লেড বা ধারালো চাকু দ্বারা পলিব্যাগ কেটে সরিয়ে ফেলে চারা নির্ধারিত স্থানে রোপণ করাই ভালো। অবিক্রিত চারা দীর্ঘদিন পলিব্যাগে রেখে দিলে ক্ষীণ ও দূর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই প্রথম পলিব্যাগ থেকে চারা তুলে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের পলিব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে এবং অংকুরোদগমের পর চার পাতা বিশিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত চারা গাছ স্থানান্তর করা উচিত নয়। যতদূর সম্ভব শিকড়ের কম ক্ষতি করে বা শিকড়কে কম সময় অনাবৃত রেখে তাড়াতাড়ি চারা রোপণ করা ভাল। চারার শিকড় অধিক লম্বা হলে ৬/৭ সেঃমিঃ পর্যন্ত রেখে বাকি অংশ কেটে দিতে হবে এবং বেশি পাতা থাকলে কিছু পাতা ছাটাই করা ভাল বা লম্বা পাতা থাকলে নখ দ্বারা ছিঁড়ে পাতা খাট করে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর পানি সেচ দিতে হবে, তাহলে চারা তাড়াতাড়ি মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। পলিব্যাগে রোপণের পর শিকড়ের চারদিকের মাটি ভালোভাবে চেপে দিতে হবে। রোপণের পর ঝাঝরির সাহায্যে পানি দিতে হবে। চারা তোলা ও স্থানান্তরের কাজ পড়ন্ত বিকেলে মেঘলা দিনে করতে হবে।
শিকড় ছাঁটাই ও চারা পরিবহন: চারার শিকড় পলিব্যাগ ভেদ করে বেরিয়ে গেলে সময়মতো তা কাঁচি দিয়ে ছেঁটে দিতে হবে। তা না করলে চারা পরিবহনে অসুবিধা হয় এমনকি এসব চারা স্থানান্তর করার সময় মারাও যেতে পারে। অত্যান্ত সতর্কতার সাথে চারা পরিবহন করতে হবে। পাতা, কান্ড বা শিকড় আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা শুকিয়ে গেলে রোপণের পর চারা মারা যেতে পারে। না মারা গেলেও এসব চারা জমিতে প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক সময় লেগে যায় এবং গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে অতি দ্রুত পরিবহন করা উচিত। পলিব্যাগে চারা পরিবহনে অসুবিধা কম হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পলিব্যাগের মাটি পড়ে না যায়।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!