কোকোডাস্ট (নারিকেলের তুষ) থেকে জৈব সার তৈরি এবং ব্যবহার
কোকোডাস্ট বা কোকোপিট কি?
কোকোডাস্ট বা কোকোপিট নারিকেলের ছোবরা বা কয়ার থেকেই তৈরি করা হয়। শুকনো নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়োই হলো কোকোডাস্ট বা কোকোপিট। একে নারিকেলের তুষও বলা হয় যা বর্তমানে মাটির বিকল্প হিসেবে চারা উৎপাদনে ব্যবহার হচ্ছে। নারিকেলের তুষে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে বলে তুষ পচালে ভালো মানের জৈব সার তৈরি হয়।
কিভাবে নারিকেলের তুষ থেকে জৈব সার তৈরি করা যায়?
ক) প্রথমেই নারিকেলের শুকনো ছোবড়া জোগাড় করতে হবে। সেগুলো পরিচ্ছন করতে হবে। সেখান থেকে আঁশ তুলে এনে শুকাতে দিতে হবে। কাচি বা ছুড়ি দিয়ে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিতে হবে। গুড়ো করার মেশিন দিয়ে ভালো করে গুড়ো করে নিতে হবে।
খ) এরপর, কোকোপিটের পাউডারি অংশ থেকে চালুনী দিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঁশ বের করে নিতে হবে। প্রয়োজনে হাত দিয়ে বেছে বেছে বের করে নিতে হবে। আলাদা করা পিটকে লবণ ও র্যাডিকেল মুক্ত করতে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এতে বিদ্যুৎ পরিবাহিতা কমবে। পিটকে পানিতে নিমজ্জিত করে রাখতে হবে। ঘন্টাখানেক পর পানি থেকে তুলে এনে হাত দিয়ে চিপে চিপে পানি বের করে নিতে হবে।
গ) এবার, যে আকার বা আকৃতির ব্লক তৈরি করতে চাই সেই আকৃতির কন্টেইনারে ভর্তি করে রেখে দিতে হবে। সরাসরি সূর্যালোকের নিচে একদিন রেখে দিতে হবে। তারপর, কোকোপিট ব্যবহারের জন্যে উপযুক্ত হয়ে যাবে। আপনি যদি নিজের বাগানেই ব্যবহার করতে চান তবে ভেজা পানি থেকে তুলে এনেই টব/পট/ব্লকে ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন। এভাবে আপনারা বাড়িতে নিজেরাই কোকোপিট হতে জৈব সার তৈরি করতে পারবেন। এছাড়া আপনারা চাইলে বিভিন্ন নার্সারী থেকে কোকোপিট কিনতে পারবেন।
কৃষক ভাইয়েরা কেন কোকোপিট ব্যবহার করবেন?
কোকোপিটে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান আছে। এতে রয়েছে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, উচ্চতর পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপাদান। কোকোপিটে দ্রুত পানি ও বাতাস চলাচল করতে পারায় গাছের শিকড় দ্রুত বাড়ে এবং গাছ স্বাস্থ্যবান হয়। কোকোপিটে দ্রুত পানি ও বাতাস আসা যাওয়ার কারনে ক্ষতিকারক ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না। এতে রাসায়নিক সার না মেশালেও চলে। শুধুমাত্র ভার্মিকম্পোষ্ট বা জৈব সার মিশিয়ে চাষ করা যায়। ফলে রাসায়নিক মুক্ত সবজি, ফল, ফুল, অর্কিড ও অন্যান্য গাছ সহজেই উৎপাদন করতে পারবেন।
কোকোপিটে আছে পানি ধরে রাখার অসাধারন ক্ষমতা। ১ কেজি কোকোপিট ১৫ কেজির মতো পানি ধরে রাখতে পারে। গাছের জন্য যতটুকু পানি দরকার ঠিক ততটুকু পানি কোকোপিট ধারন করে রাখে বলেই গাছের শিকড়ে পচন ধরে না। কোকোপিটে খুব সহজেই পানি নিষ্কাশন হয়। কোকোপিট দিয়ে গাছ লাগালে ক্ষতিকারক পোকামাকড় আসে না। কোকোপিট ব্যবহার করলে গাছের মৃত্যুহার কমে পায়। কোকো পিট মাটির তুলনায় হালকা হওয়ায় ছাদের উপর বেশি চাপ পড়ে না। টবে বা পাত্রে সহজে বহন করা যায়। তাই আমি মনে করি গাছে কোকোপিট ব্যবহার করা উত্তম।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!