খাদ্য শিল্পের প্রসারে বাংলাদেশে কৃষি পণ্য উৎপাদনের অবদান
খাদ্য শিল্প বলতে কি বোঝায়?
খাদ্য আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। খাদ্য শিল্প প্রতিটি জাতির কাছেই খুবই গুরুত্বপুর্ণ একটি সেক্টর। খাদ্য শিল্প খাদ্য উৎপাদনের সমস্ত দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন উৎপাদন, ফসল কাটা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, পরিবহন, বিতরণ, খরচ, বিপণন ইত্যাদি। এছাড়াও, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, পণ্যের গুণগতমান, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে কম বেশি প্রত্যেকেই খাদ্যাভাস নিয়ে সচেতন অর্থাৎ নিরাপদ কৃষি পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী। বর্তমানে কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে রাসায়নিক কীটনাশক ও সারের ব্যবহার নিরাপদ ফসল উৎপাদনে প্রধান বাঁধার সৃষ্টি করছে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বাবহারের ফলে তা ফসলের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করছে। এর ফলে ক্যানসার সহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধির প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই খাদ্য শিল্প প্রসারে নিরাপদ ফসল উৎপাদন অত্যন্ত গুরুতবপূর্ণ।
নিরাপদ ফসল উৎপাদনে অনুসরণীয় দিকগুলো কি কি?
নিরাপদ ফসল উৎপাদন করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই জৈব কৃষি তথা ফেরোমন ফাঁদ, পার্চিং, আইপিএম, আইসিএম, উত্তম কৃষি চর্চা ইত্যাদি কৌশলের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করতে হবে। মাটির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য জমিতে জৈবসার যেমনঃ কম্পোস্ট সার, কেঁচো সার ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হবে। নিরাপদ সবজি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের পরিমিত ব্যবহার করতে হবে যেন মাটি, পানি ও বায়ু দূষণ না হয়। আপনারা চেষ্টা করবেন জৈব বালাইনাশক যেমন নিম, নিশিন্দা, বিষকাটালী প্রভৃতির ব্যবহার বাড়ানোর। যার ফলে আপনাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকবে না।
এছাড়াও, কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করতে হবে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে কৃষক ভাইদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ভেজাল পণ্য মনিটরিং এবং ভেজাল পণ্যের মূল উৎস খুঁজে তাৎক্ষণিক মোবাইল টিমের মাধ্যমে দণ্ড ও জরিমানার বিষয়ে জোর দিতে হবে। এক কথায় উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ, সরবরাহ, পরিবহন, সংরক্ষণ এবং বিপণনের প্রতিটি স্তরে সকলেরই দায়িত্বশীল থেকে খাদ্যকে নিরাপদ এবং মানসম্পন্ন রাখা নিশ্চিত করতে হবে।
খাদ্য শিল্প প্রসারে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে আমরা খাদ্যকে জীবাণুমুক্ত , পরিপাকযোগ্য, গুণগত মানসম্পন্ন, শেলফ লাইফ বাড়ানোসহ আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন ও সংরক্ষণ করতে পারি। কেননা, বর্তমানে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্যাভাস পরিবর্তন, জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ও কর্মক্ষেত্রে নারীর ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ততার কারণে সারা বিশ্বে Ready to Cook এবং Ready to Eat পর্যায়ের খাদ্য সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ফলমূল, তরিতরকারি সবজিসহ বিভিন্ন উৎপাদিত ফসল প্রক্রিয়াজাত করে মূল্য সংযোজন করতে পারলে আমরা রফতানি আয়ও বৃদ্ধি করতে পারব। এছাড়াও, ঋতুভেদে ফলমূল ও শাকসবজি সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে বিপুল পরিমাণ পচনশীল পণ্যের পচন রোধ করতে পারব।
ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে, বাংলাদেশ ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে চাল, মসুর ডাল, আলু, পেঁয়াজ, চায়ের মতো পণ্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফল। গত এক দশকে কুমড়া, ফুলকপি ও সমজাতীয় সবজির মতো কিছু পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে। তাই ঋতুভেদে তাজা ফলমূল ও শাকসবজি রপ্তানির পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্যপণ্যের সঠিক উৎপাদন ও রপ্তানি করা হলে আয় বাড়ানো ছাড়াও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!