About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন পদ্ধতি। হাঁসের বৈশিষ্ট্য,খাদ্য ও বাসস্থান

Please don't forget to share this article

খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস বাংলাদেশে বর্তমানে ডিম উৎপাদনের উদ্দেশ্যে হাঁস পালন ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়। ইংল্যান্ডের এই সংকর জাতটির হাঁসের রং খাকি বলে এর নাম খাকি ক্যাম্পবেল। ক্যাম্পবেল নামক এক মহিলা ১৯০১ সালে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জাতের হাঁসের মধ্যে সংকরায়ন ঘটিয়ে এ জাত সৃষ্টি করেন। তাই এই জেতের উৎপত্তিস্থল হলো ইংল্যান্ড।

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বৈশিষ্ট্যসমুহ

১. পালকের রং খাকি, মাথা এবং ঘাড় ব্রোঞ্জ রঙের,  পা ও পায়ের পাতার রং হাঁসার হলুদ, হাঁসীর কালো। ঠোটের রং হাঁসা নীলাভ, হাঁসী কালো।
২. ডিম-এর উদ্দেশ্যে এ জাতের হাঁস পালন করা হলেও ডিম পাড়ার পর স্ত্রী হাঁস এবং হাঁসাকে মাংস হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

৩. এ হাঁসের মাংসও মুরগির মতোই পুষ্টিকর।

৪. এই  হাঁস কেবল খাবার ও গলা ডোবানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানি পেলেই সহজ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তাই পুকুর বা অন্যান্য জলাশয় ছাড়াই এ হাঁস পালন সম্ভব।

৫. খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস বেশ কষ্টসহিষ্ণু।

৬. খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস সাড়ে ৪ মাস বয়স থেকেই ডিম দিতে শুরু করে এবং বছরে গড়ে প্রায় ২৫০- ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দেয়।

৭. ডিমের রং সাদা এবং আকারও অপেক্ষাকৃত বড়।

৮. খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁসের বয়ঃ প্রাপ্তদের ওজন ২- ২.৫ কেজি হয়ে থাকে।

৯.  এ জাত টানা ১-৩ বছর পর্যন্ত একই হারে ডিম পাড়ে।

১০. ডিম উৎপাদনের জন্য দেশি হাঁসের ক্ষেত্রে পুরুষ হাঁসের প্রয়োজন হলেও খাকি ক্যাম্পবেল জাতের ক্ষেত্রে পুরুষ হাঁসের উপস্থিতি প্রয়োজন হয় না।

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস ও হাইব্রিড মুরগির তুলনা

ক্রমিক নং হাইব্রিড মুরগি খাকি কাম্পবেল হাঁস
১. বছরে প্রায় ২০০-২৫০ টি ডিম দেয়। বছরে প্রায় ২৫০- ৩০০ টি ডিম দেয়।
২. মাত্র ১ বছর ভালো ডিম পাওয়া যায়। একাদিক্ৰমে ২-৩ বছর একই হারে ডিম দেয়।
৩. ডিমের গড় ওজন ৬০ গ্রাম। ডিমের গড় ওজন ৭০ গ্রাম।
৪. মুরগির বাচ্ছার দাম ৬০-৬৫ টাকা। হাঁসের বাচ্চার দাম খুব কম ১২ টাকা
৫. সারাদিন ধরেই ডিম দেয়। সকাল ৯টার মধ্যে ডিম পাড়া শেষ করে বলে ব্যবস্থাপনা সহজ।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও গরম সহ্য করার ক্ষমতা অনেক কম। রোগ প্রতিরোধ ও গরম সহ্য করার ক্ষমতা বেশি।
৭. অত্যধিক গরমে মুরগির ঘর ঠাণ্ডা রাখার প্রয়োজন। হাঁসের ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন হয় না।
.

 

ঘর, খাদ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি। ঘর, খাদ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা ব্যয় কম।

পানি ছাড়া হাঁস পালন
মানুষের খুব একটা ভুল ধারণা আছে হাঁস পালনে পানি লাগে। প্রজননের জন্য হাঁস পুষলে পানি অবশ্যই দরকার। যে কোনো অগভীর ডোবা বা ট্যাংক, যার গভীরতা ৯ ইঞ্চি এবং আয়তন ৫। এ ধরনের মাপে ১০টি হাঁস অনায়াসে পালন করা যাবে। শুধু ডিমের জন্য হাঁস পালন করলে মুরগির মতো ‘ডিপলিটার’ পদ্ধতিতে অর্থাৎ মেঝেতে ৩ ইঞ্চির মতো শুকনো কাঠের গুঁড়া, তুষ বিছিয়ে হাঁস পালন চলবে। এভাবে পালন করলে মুরগির মতো হাঁসকেও সেই সুষম খাদ্য দিতে হবে।

ঘরে খাকি ক্যাম্পবেল পালন

পুকুর ডোবা বা জলাশয় না থাকলেও সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে হাঁসের ঘরের মধ্যে প্লাস্টিকের বা পোড়া মাটির বা সিমেন্টের তৈরি পাত্রে পানি সরবরাহ করতে হবে। পাত্রটি ঘরের মেঝেতে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে পাত্রের কানা ঘরের মেঝে থেকে কিছুটা উঁচু হয়। এতে ঘরের মেঝে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর না হয়ে শুকনো থাকবে। এ পদ্ধতি ছাড়া পাকা নালা তৈরি করেও পানি সরবরাহ করা যায়। এই নালা ঘরের দৈর্ঘ্যের সম পরিমাণ লম্বা, ৪৫ সেমি (১.৫ ফুট) চওড়া ও ২২ সেমি (৯ ইঞ্চি) গভীর হবে। নালার পানি দিনে অন্তত একবার পাল্টে দেওয়ার জন্য একদিকে ঢালু রাখা উচিত। মনে রাখতে হবে যে,হাঁসের  সর্বদা পানির প্রয়োজন। তবে খুব বেশি পরিমাণ পানির দরকার হয় না। কেবল গলা ডোবাতে পারে এমন পরিমাণ পানি হলেই চলে। কারণ খাবার মুখে নিয়েই হাঁস পানিতে মুখ দেয়। তাছাড়া হাঁসের চোখ ও ঠোঁট পরিষ্কার রাখার জন্যও পানির প্রয়োজন হয়। দেখা গেছে যে, পানিতে সাঁতার কাটার সুযোগ না দিয়ে হাঁস পালনে হাঁসের প্রজনন ও উৎপাদন ক্ষমতা হেরফের তো হয়ই না; বরং খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ক্ষেত্রে সাঁতারজনিত কারণে বা শক্তি খরচ রহিত করা যায় যা ডিম উৎপাদনে সহায়ক।

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বাসস্থান

মুরগির মতো ততো ভালো বাসস্থান না হলেও চলে। পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ে হাঁস পালন করলে শুধু রাতের জন্য হাঁসের ঘরের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে হাঁস প্রতি ৭৫ বর্গ সেন্টিমিটার (প্রায় ২.৫ বর্গফুট) জায়গা হলেই চলবে। সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় মেঝেতে হাঁস-পালন করলে প্রতি হাঁসের জন্য ১২০ বৰ্গ সেন্টিমিটার (প্রায় ৪ বৰ্গফুট) জায়গার প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া হাঁসের চরবার জন্য ঘরে সঙ্গে কিছু ঘেরা জায়গা রাখলে ভালো হয়। হাঁসের ঘরের উচ্চতা ১৫০ সেন্টিমিটার (৫ ফুট) করলেই চলবে। হাঁসের ঘর দেশি সামগ্রী – বাঁশ, টিন, ছন, খড় প্রভৃতি দিয়ে তৈরি করলেও হবে। চাল বা ছাচ অন্তত ১ হাত পরিমাণ বের করা থাকতে হবে যাতে বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকতে না পারে। ঘরের দেয়াল তারের জাল দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। ঘরের মেঝে একদিকে ঢাল রেখে তৈরি করতে হবে যাতে ঘরে পানি দাড়িয়ে স্যাতসেঁতে না হয়ে যায়। মেঝে স্যাতসেঁতে হলে ঠান্ডা লেগে হাঁসের অসুখ হতে পারে। ঘরের মেঝে পাকা হওয়া ভালো, তবে মাটিরও করা যায়। মেঝে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন রাখতে হবে। ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে তা লক্ষ রাখতে হবে। তাই হাঁসের ঘর পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা করতে হবে। হাঁসের ঘরে যাতে কোনোভাবেই বেজি, শিয়াল প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা ৫৫-৭৫% ও আর্দ্রতা ৩০-৭০% হাঁসের জন্য অনুকূল। লেয়ার হাঁসের জন্য ১৪-১৬ ঘণ্টা আলো দরকার। ৩০০ বর্গফুট স্থানের জন্য ১টি ৬০ ওয়াটের বাল্ব দরকার।

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের খাদ্য

যদি পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ে হাঁস পালন করা যায় তবে হাঁস নিজেদের খাবারের অনেকটাই নিজেরাই সংগ্রহ করে নিতে পারে। সাধারণত এরা বাগান ও জলাশয় থেকে ঘাস,লতা-পাতা, পোকা-মাকড়, কেঁচো, শামুক, গুগলি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণিকণা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। শামুক ও গুগলি হাঁসের প্রিয় খাদ্য, যা আমিষ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা অনেকটাই পুরণ করে থাকে। এগুলো অল্প খরচে সংগ্রহ করে সামান্য থেঁতলে পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে হাঁসকে অনায়াসেই সরবরাহ করা যায়। আবদ্ধ অবস্থায় খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন করতে হলে সুষম খাদ্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতি ১০০ কেজি সুষম খাদ্য তৈরি করতে হলে  সাধারণত ছোট বা বড় জাতের দানা শস্য (গম/ভুট্টা ভাঙা, জোয়ার বা সাইলো গুড়ো) লাগবে ৩৫ কেজি, দানা-শস্যের উপজাত দ্রব্য (ধানের কুঁড়ো, গমের ভুসি, চালের খুদ) প্রয়োজন ৩০ কেজি, খৈল জাতীয় উপাদান (বাদাম, সয়াবিন, তিল বা সরিষা খৈলের যে কোনো একটি) লাগবে ১০ কেজি, মাছের গুঁড়ো প্রয়োজন ২০ কেজি এবং ঝিনুক কুচি ও খনিজ লবণের মিশ্রণ লাগবে ৫ কেজি যা একত্রে মেশাতে হবে। এভাবে মেশানো ১০০ কেজি খাবারে ভিটামিন-এ, বি, ডি মেশাতে হবে ৩০ গ্রাম। যদি হাঁসকে পরিমাণমতো শামুক ও গুগলি খাওয়ানো যায় তবে মাছের গুঁড়ো না খাওয়ালেও চলবে। হাঁসের বিভিন্ন অবস্থায় পুষ্টি চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন- হাঁসের ছোট বাচ্চার জন্য প্রয়োজন স্টার্টার ম্যাশ (০-৩ সপ্তাহ), বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য প্রয়োজন গোয়ার ম্যাশ (৪-২০ সপ্তাহ) এবংহাঁসের  ডিম পাড়া অবস্থায় প্রয়োজন লেয়ার ম্যাশ।

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের খাদ্য বয়স অনুযায়ে নিচে দেখানো হলো (একটি আদর্শ খামারে ব্যবহৃত)

খাদ্যের উপাদান

কেজি/১০০ কেজি

স্টাটার হাঁস

(০-৩ সপ্তাহ)

গ্রোয়ার হাঁস

(৪-২০ সপ্তাহ)

লেয়ার হাঁস

(২০ সপ্তাহের বেশি)

ভূট্টা ভাঙ্গা ৬১.৫০ ৬১.০০ ৬৭.০০
সয়াবিন মিল ২৬.০০ ১৬.০০ ১৯.০০
মাছের গুঁড়া ৮.০০ ৮.০০ ৬.০০
লুসার্ন পাতা গুঁড়া ২.০০ ২.৫০ ২.৫০
শামুক-গুগলির খোলা ভাঙা ৩.০০
খনিজ পদার্থের মিশ্রন ২.৫০ ২.৫০ ২.৫০

প্রতি ১০০ কেজি খাদ্যে ৩৫ গ্রাম রোভিমিক্স বা ভিটাব্লেন্ড, ৫ গ্রাম নিয়াসিন এবং ৩৫ গ্রাম কোলিন ক্লোরাইড মেশাতে হবে।

হাঁসের খাদ্যের পরিমাণ ও হাঁসকে খাদ্য প্রদানের নিয়ম

পুকুর বা জলাশয়ে হাঁস পালন করলে খুব কম খাবারের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে হাঁসকে প্রতিদিনে ৫০-৬০ ভাগ খাবার দিলেই চলে। তবে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় হাঁস পালন করলে হাঁসপ্রতি বেশি পরিমাণে খাবারের প্রয়োজন হয়। ৮ সপ্তাহ বয়স অবধি একটি হাঁসের জন্য ৪-৫ কেজি এবং ২০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রতিটি হাঁসের জন্য ১২-১৩ কেজি সুষম খাদ্যের প্রয়োজন হয়। পূর্ণ বয়সে অর্থাৎ ডিম পাড়া অবস্থায় প্রতিটি হাঁসের জন্য গড়ে বছরে ৫০ কেজি সুষম খাবার লাগে। ২০ সপ্তাহের পরে ডিম পাড়ার হারের ওপর নির্ভর করে প্রতিটি হাঁসের জন্য দৈনিক ১২৫-১৫০ গ্রাম খাবারের প্রয়োজন হয়।

হাঁসকে নির্দিষ্ট পাত্রে খাবার দিতে হবে। পানি মিশিয়ে খাদ্য বা ম্যাশ নরম করে দিলে হাঁস তা সহজে খেতে পারে । খাবার মুখে নিয়েই হাস পানিতে মুখ দেয় বলেই খাবার পাত্রের কাছে সব সময় পানির পাত্র রাখতে হবে। মুক্ত জায়গায় হাঁস পালনের ক্ষেত্রে সকালে একবার এবং বিকালে হাঁসকে ঘরে আনার সময় আর একবার মাোট দু’বার অল্প করে খাবার দিলেই চলবে। সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় হাঁস পালনের ক্ষেত্রে দৈনিক মোট প্রয়োজনীয় খাবারকে তিন ভাগে ভাগ করে তিন বারে দিতে হবে। পানির পাত্রে সবসময়ই পরিষ্কার পানি রাখতে হবে।

খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসক দৈনিক খাবার দেওয়ার হার
০-৪ সপ্তাহ – দৈনিক ৪ বার।
৪-৮ সপ্তাহ – দৈনিক ৩ বার।
৮ সপ্তাহের উপর – দৈনিক ২ বার।

হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস ডিমে সাধারণত তা দিতে চায় না। ফলে কুরচি মুরগির সাহায্যে খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ডিম ফোটানো হয়। একটি কুরচি মুরগি ৮-১০টি হাঁসের ডিমে  একবারে তা দিতে পারে। তবে ব্যবসার জন্য বেশি পরিমাণে বাচ্চা উৎপাদন করতে হলে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফোটানোর যন্ত্র বা ইনকিউবেটরের সাহায্যে মুরগির ডিমের মতোই হাঁসের ডিমও ফোটানো সম্ভব। খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ডিম ফুটে বাচ্চা হতে ২৮ দিন সময় লাগে।

হাঁসের বাচ্চার যত্ন ও পরিচর্যা

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বাচ্চার ১ দিন থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি যত্নের প্রয়োজন। এ সময়ে উপযুক্ত যত্ন ও পরিচর্যার অভাব হলে বাচ্চার মৃত্যুর হার অনেক বেশি হয়। প্রথম তিন সপ্তাহকাল হাঁসের বাচ্চাকে তারের জালের মেঝেতে অথবা মাটি বা সিমেন্টের মেঝেতে কাঠের গুড়ো বিছিয়ে তার উপর রাখা ভালো। কাঠের গুড়োর উপর বাচ্চা রাখলে মেঝেকে সব সময় শুকনো রাখতে হবে; সেজন্য গুড়া গুলোকে প্রতিদিনই একবার করে উল্টে দিতে হবে। তিন বা চার সপ্তাহ পর বাচ্চার অবস্থা অনুযায়ী তাদের সাধারণ মেঝেতে বা পুকুরে ছাড়া যেতে পারে।
২১ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত হাঁসের বাচ্চাদের তাপ দিয়ে রাখতে হয়, যাকে ব্ৰডিং বলা হয়। ইলেকট্রিক বা দিয়ে এই তাপ দিতে হয়। প্রথম সপ্তাহে ঘরের তাপমাত্রা ৩০° সেন্টিগ্রেড হওয়া দরকার। এরপর প্রতি সপ্তাহে ৩° সে. করে কমিয়ে ২৪° সে. পর্যন্ত নামিয়ে আনতে হয়। গরমকালে এমনিতেই তাপমাত্রা বেশি থাকে বলে বাচ্চাদের অসুবিধা হয় না। তবে শীতকালে প্রয়োজনীয় তাপ না দিলে বাচ্চার মৃত্যুও হতে পারে। সদ্যজাত বাচ্চাকে প্রথম ২৪ ঘণ্টা কিছু খেতে দেবার প্রয়োজন হয় না। এরপর ২৩ দিন খাদ্যকে পানির সাথে মিশিয়ে নরম ও পাতলা করে খাওয়াতে হয়। এরপর সাধারণ খাবার অল্প পানিতে মিশিয়ে খেতে দিতে হয়। বাচ্চাকে যখন খাবার দেওয়া। হবে কেবল তখনই পানির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। অনেক আগে বা পূর্ব রাতে ভিজিয়ে রাখলে ছত্রাক জন্মাতে পারে যা হাসকে রোগাক্রান্ত করে ফেলতে পারে। হাঁসের বাচ্চা পালন বিষয়ে আরো যেসব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ইঁদুরের উৎপাত থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করা, কম জায়গায় এক সঙ্গে গাদাগাদি করে না রেখে প্রতিটি বাচ্চার জন্য বয়স অনুসারে উপযুক্ত জায়গায়। সংকুলান করা এবং জলের পাত্রের গভীরতা ৫-৭.৫ সেন্টিমিটার রাখা, কেননা এর বেশি হলে বাচ্চা পানিতে ডুবে যেতে পারে।

 বাড়ন্ত  ডিম পাড়া হাঁসের যত্ন

বাচ্চার বয়স ১ মাস হয়ে যাবার পর বাড়ন্ত অবস্থায় ঘরে তাপ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। পানির পাত্রে পানির গভীরতা বাড়িয়ে ১২.৫-১৫.০ সেন্টিমিটার করতে হবে যাতে হাঁস মাথা ডোবাতে পারে। তাছাড়া খাবার ও পানির পাত্র দিতে হবে এবং থাকার জায়গার যাতে অভাব না ঘটে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ সময় কোনো কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন হয় না, দিনের আলোই যথেষ্ট।

অপরদিকে, খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস উপযুক্ত যত্ন ও পরিচর্যা পেলে সাড়ে ৪ মাস বয়স থেকেই ডিম দিতে শুরু করে। হাঁস প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ছাড়াও চরবার জন্য কিছুটা জায়গা থাকা ভালো। ঘর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে প্রয়োজনীয় খাবার পানি ও পানির ঘাটতি যেন না হয়। হাঁসের ঘরে দিনের আলো ছাড়াও আরো ২-৪ ঘণ্টা কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন । কেননা ডিম পাড়ার সঙ্গে আলোর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। ঘরে ৩০ সেমি, X ৩০ সেমি. X ৪৫ সেমি. আকারের ডিম পাড়ার বাক্স রাখতে হয় যাতে হাঁস ওসব বাক্সে ডিম পাড়ে। প্রতি ৩ টি হাঁসের জন্য একটি বাক্স রাখতে হয়। ডিম পাড়া বাক্সে নরম ও শুকনো ঘাস পাতা বা নরম বিছালি রাখতে হবে এবং তা সপ্তাহে ২/৩ বার পাল্টে দিতে হবে। ধরার প্রয়োজন হলে হাঁসকে দেহের পাশের দিকে না ধরে ঘাড়ের কাছে ধরাই ভালো।

হাঁসের রোগ-ব্যাধি, প্রতিকারপ্রতিষেধক ব্যবস্থা

খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁসের  রোগ-ব্যাধি খুব একটা হয় না। রোগ-ব্যাধি নির্ভর করে খামারকারীর পরিচর্যার ওপর। যদি খামারী স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাঁস পালন করে তাহলে রোগ-ব্যাধির পরিমাণ একেবারেই থাকবে না। তবে খামারকারীকে হাঁসের মারাত্নক দুটি রোগ ডাক-প্লেগ ও ডাক-কলেরার অবশ্যই টিকা দিতে হবে। দুটি টিকা ও  প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য খামারকারীকে যেতে হবে নিকটস্থ পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে ।

প্রতিষেধক ব্যবস্থা

৩ সপ্তাহ বয়সে : বুকের মাংসে ১ সষ ডাক প্লেগ টিকা। ১৫ দিন পর : পুনরায় বুকের মাংসে ডাকা প্লেগ টিকা। ৭০ দিন বয়সে: কলেরার টিকা ১/স । ১৩০ দিন বয়সে: কলেরার টিকা ১/স।

 

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

One thought on “খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন পদ্ধতি। হাঁসের বৈশিষ্ট্য,খাদ্য ও বাসস্থান

  • August 11, 2019 at 2:49 am
    Permalink

    আমি খাকি ক্যাম্পবেল হাস পালন শুরু করেছি।
    ৮৫০ হাসের মধ্যে ৭০-৮০ টা হাসি।
    আজ ৪ মাস পুর্ন হল। একটি হাস ডিম পাড়া শুরু করেছে। বাকিগুলো কবে নাগাত শুরু করবে.?
    আর ডিম পাড়া অবস্থায় কি খাবার কিভাবে খাওয়াতে হয়??

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত