গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ পদ্ধতি এবং এর বাজার সম্ভাবনা
গ্রীষ্মকালীন টমেটো এর চাহিদা এবং বাজারমূল্য বেশি। আর যদি সেটা অসময়ে হয় তবে তো কথাই নেই। গ্রীষ্মকালীন টমেটো শীতের চেয়ে অন্তত চার-পাঁচ গুণ দামে বিক্রি হবে। যদি আগাম চাষ করা যায় তবে শীতেও চাষ করে ভালো লাভ করা যেতে পারে। সে জন্য যেসব জাত আগাম ভালো ফলন দেয় সেসব জাত চাষ করতে হবে।
অসময়ে বা গরমকালে ফল ধরে এমন জাতও আগাম লাগানো যেতে পারে। বর্তমানে অধিক ফলন দেয় ও আকর্ষণীয় রং হয় এমন অনেক হাইব্রিড জাতের বীজ বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে।
আগাম জাতঃ- আগাম টমেটো চাষ করার জন্য প্রধান প্রধান জাত হচ্ছে বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-৫ এবং বারি টমেটো-৬ (চৈতী), বারি হাইব্রিড টমেটো-৩, বারি হাইব্রিড টমেটো-৪, বারি হাইব্রিড টমেটো-৮, এসিআই সামার কিং, বিনা টমেটো-৩, বিনা টমেটো-৪ ইত্যাদি।
গ্রীষ্মকালীন টমেটোর এসব জাত পলিথিনের ছাউনিতে চাষ করা হয়। একটি ছাউনি ২.০- ২.৩ মিটার আকৃতির হলে ভালো। ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া ২টি বীজতলায় লম্বালম্বিভাবে ১টি করে ছাউনির ব্যবস্থা করে নিতে হবে। ছাউনির খুঁটির উভয় পাশের উচ্চতা ১৫০ সেন্টিমিটার এবং মাঝখানের খুঁটির উচ্চতা ২১০ সেন্টিমিটার হতে হবে। জমি নৌকার ছইয়ের আকৃতি করে পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিতে হয়। ২টি ছাউনির মাঝে ৭৫ সেন্টিমিটার চওড়া নিকাশ নালা রাখলে ভালো হয়। প্রতিটি ছাউনিতে ২টি বীজতলা রাখতে হবে।
বীজতলাঃ- জমি থেকে বীজতলার উচ্চতা ২০-২৫ সেন্টিমিটার রাখা দরকার। ২টি বীজতলার মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া নালা রাখতে হয়। প্রতিটি ছাউনিতে ৪টি সারি রাখতে হবে।
চারা রোপণঃ- ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা প্রতি বেডে ২ সারিতে রোপণ করতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার রাখলে ভালো হবে।
আগাম ফসলঃ– গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জন্য টমাটোটোন নামক হরমোন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। হ্যান্ড স্প্রেয়ারের সাহায্যে ৫ চা চামচ (প্রতি লিটার পানিতে) টমাটোটোন শুধু ফুটন্ত ফুলে ৮ থেকে ১০ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করতে হবে। এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে সারা বছর টমেটো চাষ করা সম্ভব। টমাটোটোন দ্বারা উৎপাদিত ফলে বীজ হয় না।
পোকা দমনঃ– শোষক পোকা এবং জাবপোকা গাছের রস শোষণ করে। শোষক পোকা দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন, সেভিন কিংবা নেক্সিয়ন এবং জাবপোকা দমনের জন্য এফিডান ডাস্টিং (৫%) বা এডমায়ার ০.৫ মিলি/লিটার বা এসাটাফ ১ গ্রাম/ লিটার/ টিডো অথবা টিডো প্লাস ০.৫ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
রোগ দমনঃ- টমেটোর ৩টি রোগ গুরুত্বপূর্ণ। ধ্বসা রোগ, টমেটো মোজাইক ভাইরাস এবং ফিউজেরিয়াম উইল্ট। ঢলে পড়া রোগে গাছে ফুল আসার আগেই ঢলে পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করা, আক্রান্ত জমিতে পরবর্তী ৪-৫ বছর টমেটো, আলু, মরিচ ও বেগুন চাষ না করা এবং প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা। আক্রমণ বেশি হলে মেনকোজেব + মেটালেক্সিল ( রিডোমিল গোল্ড/করমিল/মেটারিল) ২ গ্রাম/লিটার অথবা সিকিউর ২ গ্রাম /লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মোজাইক রোগে পাতা কুঁকড়ে যায়, গাছ ও ফলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এজন্য আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হয়। সুস্থ গাছে কীটনাশক ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা দ্বারা ভাইরাস বহনকারী পোকার আগমন প্রতিরোধ করতে হয়। ভাইরাস বহক পোকার ( সাদা মাছি ) দমনের জন্য ডায়মেথয়েট, এসাটাফ, ইমিডাক্লোরপ্রিড ( এডমায়ার/টিডো ) ইত্যাদি যেকোন একটি বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ফিউজেরিয়াম উইল্ট রোগে গাছ ঢলে পড়ে। পাতা হলুদাভ হয় এবং পাতা ভেতরের দিকে বেঁকে আসে। এ রোগ মাটির মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হয়।
শস্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ- রোপণের ২-৩ মাস পর থেকে ফল সংগ্রহ শুরু করা যায়। রঙিন নয় এরূপ টমেটো ১০ থেকে ১৫.৫০ সে. তাপে ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। পাকা টমেটো ৫০০ সে. তাপে ১০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়।
বাজার সম্ভাবনাঃ টমেটো হচ্ছে একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। কচি ও পাকা টমেটো সালাদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন রান্নায় টমেটো ব্যবহার করা হয় । এছাড়া টমেটো দিয়ে সুস্বাদু সস, কেচাপ ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তাই টমেটোর চাহিদা সব সময়ই থাকে। টমেটো চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করা সম্ভব। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। টমেটো বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। প্রায় সারা বছর ই টমেটোর ব্যপক চাহিদা আমাদের দেশে রয়েছে এবং কখনই এর বাজারদর আহামরি উঠানামা করে না।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!