চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ও বাগানের পরিবেশ দেখে মুগ্ধ ১৩টি দেশের রাষ্ট্রদূত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ও বাগানের পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হলেন বাংলাদেশে কর্মরত ১৩টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা। দেশগুলো হলো- ব্রুনাই দারুস সালাম, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও লিবিয়া। গত ২৭ জুন,২০২৪ (বৃহস্পতিবার) আমের শহর চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে উত্তম কৃষি চর্চা অনুসারে চাষ করা আমের বাগান দেখে মুগ্ধ হয়েছেন তাঁরা।
বাংলাদেশে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা-২০২০ অনুসারে আম উৎপাদিত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাচোল উপজেলার কান্দবোনা গ্রামে নূর আলম সিদ্দিকীর আম বাগানে। আম বাগান পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রদূতরা। যেদিকে চোখ যায় আম আর আম। ডালে ডালে ঝুলছে নানা জাতের আম। পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধে ফ্রুটব্যাগিং করে ঢেকে রাখা হয়েছে অনেক আম।
উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে নিরাপদ আম উৎপাদন হওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রদূতদের কাছে তুলে ধরা হয়। রাষ্ট্রদূতরা বাগান ঘুরে দেখেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। আম বাগানটি GAP এর মানদণ্ড অনুসারে হওয়ার বিষয়টি নিজ নিজ দেশের ক্রেতাদের অবহিত করবেন বলে জানান রাষ্ট্রদূতরা। আম বাগান পরিদর্শনের আয়োজন করে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এ সময় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুস শহীদের নেতৃত্বে অন্যান্যের মধ্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. আবদুল ওয়াদুদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও ছিলেন।
সিঙ্গাপুরের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স শীলা পিললাই বলেন, বাগান দেখে আমি অভিভূত। সিঙ্গাপুরে ভারতের আম যায়। দামও একটু বেশি। সাশ্রয়ী দামে ভালো কোয়ালিটি পাওয়া গেলে বাংলাদেশ কেন নয়। আমরা যেহেতু উৎপাদন করি না, তাই বাংলাদেশ ভালো সুযোগ পেতে পারে।
জাতিসংঘের কৃষি খাদ্য সংস্থা বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াউ কুন শী বলেন, এখানে প্রথমবার দেখলাম আমের বাগান। আম ভ্যালু চেইন প্রোডাক্ট। এফএও গুরুত্ব দিয়ে গ্যাপ অনুসরণে সহযোগিতা করবে। বাংলাদেশের কৃষি বদলে গেছে কেননা গ্যাপের মানদণ্ড অনুসরণ করছে। এটি বিশ্বকে জানাতে চায় এফএও।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুস শহীদ বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রদূতরা এসেছেন। মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রদূতদের আম বাগান দেখিয়ে উৎসাহিত করা। সার্বিক পরিস্থিতি দেখানো এবং আমাদের দেশের মিষ্টি আমগুলোর তথ্য জানানো।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন- কৃষি, বাণিজ্য এবং পররাষ্ট্র তিন মন্ত্রণালয় মিলে আমরা আমাদের আমকে ব্র্যান্ডিং করব। যাতে বিদেশে রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পায়। আমাদের বহু সমস্যা আছে, যা সমাধান করতে হবে। আমাদের রপ্তানি সমস্যা হলো গ্যাপ, যা আমরা শুরু করেছি। সামনে কোনো সমস্যা থাকবে না আশা করা যায়। বিশ্বের আম উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। দেশের ২ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪৮ একর জমিতে আম চাষ হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ লাখ ২ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ মে. টন আম উৎপাদিত হয়। আম পরিবহন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ এবং উৎপাদন পর্যায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার না করায় উৎপাদিত আমের ২৫-৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৭ মে. টন এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৩ হাজার ৪৫.৪৪ মে. টন আম রপ্তানি হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমের কোয়ালিটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমাদের মার্কেটিং করতে হবে।
কৃষি সচিব বলেন, আমরা উত্তম কৃষি চর্চা শুরু করেছি। এটি সারা বিশ্বের প্রতিনিধিরা দেখলেন যা আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
বিএআরসি চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, আমাদের আমের কোয়ালিটি নাম্বর ওয়ান। তবে মার্কেট দখল করে আছে অন্যরা। রপ্তানি করার যে চাহিদা সেটা আমরা পূরণ করছি। এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ- তা বিশ্বে তুলে ধরতে উন্নয়নশীল সহযোগীদের দেখালাম।
আমরা ১০ টা সবজি ( আলু, বরবটি, বেগুন, পটল, বাঁধাকপি, করলা, পটল, কচুর লতি, কাঁচা পেঁপে, চিচিঙ্গা) এবং ৫ টা ফলে ( আম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, জারা লেবু ) GAP ( Good Agricultural Practices) চালু করেছি। (সূত্র:বাংলাদেশ প্রতিদিন)
রেশমা আফরোজ
উপজেলা কৃষি অফিসার
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!