About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

শাপলা ফুল বাড়ির ছাদে বা উঠোনে চাষ। শাপলার সাথে মাছ চাষ পদ্ধতি

Please don't forget to share this article

শাপলা ফুল আমাদের জাতীয় ফুল। পুকুর, বিল বা জলাশয়ে ফোটা শাপলা ফুল দেখে আমরা বরাবরই অভ্যস্ত। আমাদের দেশের বাচ্চারা ছোট বেলা থেকে শাপলা ফুল সম্পর্কে জেনে আসে। কিন্তু তারা সচরাচর এই ফুল দেখে না। কারণ শাপলা সাধারণত গ্রামে দেখা যায়। এই শাপলা বর্তমানে বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে চাষ করা হচ্ছে।

শাপলার অন্যান্য ব্যবহারঃ

শাপলা কে শুধু সবজি হিসেবে খাওয়া হয় তা নয় শাপলার ফলগুলো পাকলে ফেটে যায়। ফলের মধ্যে থাকে কালো ও বাদামী রঙের অসংখ্য বীজ। এই বীজ রোদে শুকিয়ে গরম বালু দিয়ে আগুনে ভেজে খই তৈরি করা যায়। শাপলার ডাটা ইলিশ ও চিংড়ি মাছের সাথে রান্না করলে অতুলনীয় স্বাদ পাওয়া যায়।

শাপলা চাষে টব/মাটি তৈরি:

বাড়িতে শাপলা চাষ করার জন্য টবের জন্য উপযুক্ত কাদা মাটি দিতে হবে। মাটিতে গোবর, খৈল এবং আরও অন্যান্য জৈব সার দিয়ে দিতে হবে। এরপর পাত্রটি পরিপূর্ণ পানি দিয়ে ভরে রাখতে হবে। উল্লেখ্য যে, টবে ২ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবর সার দিতে হবে। কোন প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যাবে না তাতে গাছ মারা যেতে পারে।

শাপলা চাষে  টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই:

শাপলা চাষ করার জন্য একটু গভীর দেখে চৌবাচ্চা ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও ইচ্ছা করলে হাফ ড্রাম ব্যবহার করা যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে পাত্রটি যেন মোটামুটি গভীর হয়। অথবা বড় সাইজের গামলা বা সিমেন্টের পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।

শাপলার জাত বাছাই করা:

বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৮০ ধরণের শাপলা আছে এবং এর বিভিন্ন ধরণের নামও রয়েছে। যেমন শালুক, শাপলা, শুঁধি ইত্যাদি। তবে আমাদের দেশে সাদারণত সাদা শাপলা চাষ করা হয়। তবে বাড়ির ছাদে নীল শাপলা, বেগুনী শাপলা, লাল শাপলা ইত্যাদি চাষ করা যায়।

শাপলা চাষ/রোপনের সঠিক সময়ঃ

শাপলা মূলত জলজ উদ্ভিদ। এদেরকে বছরের যেকোন সময়ে লাগানো যায়। এদেরকে গ্রীষ্মের শুরুতে লাগাতে পারলে মধ্য বর্ষায় ফুল ফুটবে।

শাপলার বীজ বপনঃ

শাপলা দুইভাবে লাগানো যেতে পারে। প্রথমতঃ শাপলার কন্দ দ্বারা। কন্দ দ্বারা লাগালে দ্রুত ফুল আসবে। দ্বিতীয়তঃ শাপলার বীজ দ্বারা। শাপলার বীজ লাগানোর ক্ষেত্রে শাপলার গোড়ার দিকের শালূক সংগ্রহ করতে হবে। এরপর উক্ত শালূক উপযুক্ত টবের মাটিতে পুতে দিতে হবে এবং পানির পরিমাণ সঠিক মাপে দিতে হবে। এক্ষেত্রে ফুল আসতে কন্দের চেয়ে বেশি সময় লাগে অর্থাৎ ১ বছর পর ফুল আসে।

শাপলার চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশলঃ 

ছোট্ট পুকুর তৈরিঃ

  • শেকড়সহ শাপলা গাছ পুকুর বা জলাশয় থেকে তুলে আনতে হবে।
  • মাটির বড় আকারের ১ টি টব নিতে হবে। (প্রায় ৬ লিটার পানি ধরে এমন), তাতে বেলে দোআঁশ মাটি এবং দু’ কেজি শুকনো গোবর সার মিশিয়ে মাটির টবটি ভর্তি করতে হবে। এর পর পাত্রটি পানি মিশিয়ে কাদা করে নিতে হবে।
  • এক হাতের পাঁচ আঙ্গুল এক জায়গায় জড়ো করে কাদার মধ্যে ডুবিয়ে নিতে হবে। আঙ্গুলগুলো ধীরে ধীরে চারদিকে প্রসারিত করতে হবে। একটা সুন্দর গর্ত হয়ে যাবে। গর্তের মধ্যে শাপলার চারাটিকে সাবধানে বসিয়ে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে,কোন ভাবে যেন শাপলার শেকড়ে চাপ কিংবা আঘাত না লাগে।
  • শাপলা চাষ করার জন্য খেয়াল রাখতে হবে,পাত্রটি যেন মোটামুটি গভীর হয়। শাপলা চাষ করার জন্য ইচ্ছা করলে হাফ ড্রাম, বড় মাটির চারি বা প্লাস্টির সবচেয়ে বড় গামলা বা সবচেয়ে বড় বালতি (৩৫ লিটার সাইজের) নিয়ে এর মধ্যে আস্তে আস্তে পানি ঢেলে উপরের দিকে ১ ইঞ্চি খালি রেখে ভর্তি করে ফেলতে হবে।
  • এবার মাটির টবটি আস্তে করে শাপলার চাড়ি বা গামলা বা বালতিতে ডুবিয়ে দিতে হবে। এভাবেই হয়ে যাবে শাপলা লাগানো। এরপর শাপলার চাড়ি বা গামলা বা বালতি বা কংক্রিট এর তৈরি ছোট পুকুরে একুরিয়ামে চাষকৃত বিভিন্ন মাছ যেমন- গোল্ডফিশ,কই ফিশ, ক্যাট ফিশ, বিভিন্ন জাতের পুঁটি ইত্যাদি ছেড়ে দিতে হবে।

শাপলা চাষের ক্ষেত্রে ছোট পুকুরের যত্নঃ   

  • শাপলার পুকুরে পানি ঢালার পরে পানিটা সামান্য ঘোলা হবে। ২৪ ঘন্টা পরেও যদি ঘোলাটে ভাব না কাটে, বুঝতে হবে আপনার মাটি নির্বাচণ সঠিক হয়নি।
  • সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোদ পায় এমন জায়গায় গামলাটি রেখে দিতে হবে। মনে রাখবেন দুপুর ২টার পরে যেন শাপলায় কোন অবস্থায়ই রোদ না পায়। কড়া রোদে পানি গরম হয়ে গেলে শাপলার পাতা হলুদ হতে থাকে।
  • শাপলার পাতা, কুড়ি ও ফুলে ভরে না ওঠা পর্যন্ত টবের পানির উপরে কয়েকটা টোপা পানা ভাসিয়ে দিতে হবে। এতে পানি রোদে বেশি গরম হওয়া থেকে বাঁচাবে।
  • প্রথম দিকে কিছু পাতা সব মরে যেতে পারে । এতে বিচলিত না হয়ে যত্ন নিতে হবে। পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে নতুন পাতা আসবে।
  • শাপলা চারা লাগানোর ১মাস পর পানি বদল করা ভালো। পানি বদলানোর সময় পাত্রের গায়ে জন্মানো পিচ্ছিল শেওলা পরিষ্কার করে দিন ভালো করে।
  • প্রতিদিন অন্তত একবার শাপলার চাড়ি বা গামলাতে পানি আছে কিনা তা দেখেতে হবে। পানি কমে গেলেই আবার পানি দিয়ে ভরে দিতে হবে।
  • পাতা মরে পচে গেলে পানি নষ্ট হয়ে তাতে শ্যাওলা জমবে। তাই মরা পাতা জমতে দেওয়া যাবে না।
  • শাপলার গামলায় কিছু পানা ও গাপ্পি ছেড়ে দিতে হবে। পানা পানি পরিষ্কার রাখবে আর গাপ্পি মশা ডিম পাড়লে সেই ডিম ও লার্ভা খেয়ে পরিবেশ মশামুক্ত রাখবে।
  • নিয়মিত মনে করে মাছের খাবার দিতে হবে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার দেওয়া যাবে না, তাতে পানি দুর্গন্ধ হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
  • শাপলার পাতা, কুড়ি ও ফুলে ভরে না ওঠা পর্যন্ত টবের পানির উপরে কয়েকটা টোপা পানা ভাসিয়ে দিলে ভালো হয় এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে পাত্রের পানি কখনও শুকিয়ে না যায়। গাছে যদি বেশি লতা পাতা হয়ে যায় তাহলে কিছু ছাটাই করে দিতে হবে।

শাপলার ঔষধি গুনাগুনঃ

শাপলার অনেক ঔষুধি গুণাগুণ রয়েছে। শাপলা রক্ত দোষ ও বহুমূত্র রোগে অনেক উপকারে আসে। এছাড়াও শাপলা প্রসাবের জ্বালা পোড়া, আমাশয় ও পেট ফাঁপায় উপকারী।

প্রাপ্তি স্থানঃবিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টারে ( যেমন বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ) শাপলা ও পদ্মের কন্দ পাওয়া যায়। গোল্ডফিশের বাচ্চাগুলো ঢাকার কাঁটাবন মসজিদ সংলগ্ন বাহারি মাছের বাজারে পাওয়া যায়।

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত