টার্কির সংক্রামক রোগ-ব্যাধি এবং তার চিকিৎসা পদ্ধতি
তৃতীয় খণ্ড
টার্কির ফাউল পক্স একটি উচ্চ মাত্রার সংক্রামক রোগ যা পক্স ভাইরাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে। সাধারণত টার্কির শরীরের পালকবিহীন জায়গায় সাধারণত শক্ত গোটা উঠে এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
পক্স সচরাচর দুই রকমের হয়:- শুকনা পক্স এবং ভিজা পক্স।
সংক্রমণের কারণ এবং স্থানান্থরঃ
- শুষ্ক পক্স একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা টার্কির পালকবিহীন অংশে হয়,সাধারণত ঝুটি এবং চোখের পাতায় এটি হয়।
- ভেজা পক্স টার্কির শ্বাসতন্ত্র, চোখ, মুখ এবং মুখ:গহ্বরে হয়, এটি প্রাণঘাতী।
- মুরগিতে পক্সের সংক্রমণ সাধারণত পোকার কামড়ের মাধ্যমে হয় (যেমন:- মশা)।
- আক্রান্ত টার্কির পালক, পালকের অংশবিশেষ, চামড়ার অংশ, লালা এবং রক্তের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়।
- পক্স উচ্চ মাত্রার সংক্রামক রোগ এবং আস্তে আস্তে ফ্লকের মধ্যে ছড়াতে থাকে।
- লকের মধ্যে সপ্তাহ, মাস এমনকি এক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। সংবেদনশীল মুরগি সাধারণত নাক এবং মুখ দিয়ে অক্রান্ত হয়।
লক্ষণঃ
- শুষ্ক পক্সে প্রাথমিক অবস্থায় ঝুটি এং চোখের পাতায় ছাই রঙের হালকা উচু ফোস্কার মতো গুটি উঠে । এই ফোস্কাগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে, বড় হয়ে হলুদ রং ধারণ করে এবং চুড়ান্ত অবস্থায় কালো আচিলের মতো হয়ে যায়।
- ভেজা পক্সে টার্কির শ্বাসতন্ত্র, চোখ, মুখ এবং মুখ:গহ্বরে লক্ষণ পাওয়া যায়।
- মুরগি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে মারা যায়।
- লেয়ার টার্কির ওজন ও প্রোডাকশন কমে যায়।
- মুরগি খাদ্য এবং পানি খাওয়া কমিয়ে দেয়।
প্রতিরোধঃ
- আক্রান্ত ফ্লক থেকে যেন পক্স না ছড়ায় তার জন্য সঠিকভাবে জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
- নতুন ফ্লককে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করতে হবে।
- মশক নিধন করতে হবে।
- দশনার্থী প্রবেশ সীমাবদ্ধ করতে হবে।
- নিয়মিত রেজিস্ট্যার্ড ভেটেরিনারিয়ান এর পরামর্শ মোতাবেক ভ্যাকসিনেশন করতে হবে।
চিকিৎসাঃ
- ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় এর কোন সঠিক চিকিৎসা নেই, তবে পরবর্তী ব্যাকটেরয়িার সংক্রমণ রোধে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো যেতে পারে।
- খাদ্যের সাথে কালোজিরা খাওয়ানো যেতে পারে।
- ব্যাচের মধ্যে পক্স দেখা গেলে আক্রান্ত মুরগি সরিয়ে সুস্থগুলোকে ভ্যাকসিনেশন করাতে হবে।
ফাউল পক্স ভ্যাকসিন (F P V) এই ভ্যাকসিন টার্কির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। এটি ২০০ মাত্রায় কঠিন অবস্থায় বায়ুশুন্য বোতলে সংরক্ষিত থাকে। এটার রং গোলাপি, ১০ মিলি: বিশুদ্ধ পানিতে পুরাটা মিশিয়ে এই ভ্যাকসিন তৈরি করতে হয়। তৈরির পরে কবুতর ও মুরগি যাদের বয়স ২৮-৩২ দিন সেগুলো কে পাখনার নিচে, যেখানে কোন পালক নেই, সেখানে ৪-৫ টি খোটা দিয়ে এই ভ্যাকসিন লাগিয়ে দিতে হবে, খোচা দেওয়া জায়গা যদি ৪-৫ দিনের মধ্যে ফুলে উঠে তাহলে বুঝতে হবে ভ্যাকসিন টি কাজ করছে,আর যদি ফুলে না ওঠে বুঝতে হবে কাজ করেনি। পুনরায় আবার আগের নিয়মে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এই ভ্যাকসিন প্রতি বছর ১ বার দিতে হবে।
ফাউল কলেরাঃ ফাউল কলেরা মুরগির ছোয়াচে রোগ। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। এই রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৫০-৭৫% পযন্ত হতে পারে। এতে খামার বেশ আথিক ক্ষতি সম্মুখীন হয়।
ফাউল কলেরা হওয়ার কারণঃ ফাউল কলেরা Pasteurella matocida নামক ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে ।
ফাউল কলেরা সম্পকে কিছু তথ্যঃ
- ২-৪ মাস বয়সের মুরগিতে এই রোগ দেখা যায়।
- অতিরিক্ত গরম পড়লে মুরগি এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
- এছাড়া পরিবেশে বেশি পরিমান আদ্রতা থাকলে ও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ফাউল কলেরা রোগের লক্ষণঃ
- জ্বর থাকবে;
- খাদ্য গ্রহণে অনিহা থাকবে;
- শ্বাস নিতে কষ্ট হবে;
- ডিম উৎপাদন কমে যাবে;
- মাথার ঝুটি ও গলার ফুল ফুলে যাবে;
- মুরগি দুবল হয়ে যাবে;
- সভুজাভ,বা হলুদাভ ডায়রিয়া হতে পারে;
- মুখ দিয়ে লালা পড়বে;
- মাথা নিচের দিকে দিয়ে ঝিমাবে।
চিকিৎসাঃ
- যেহেতু ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগ তাই যে কোন একটি ভালো এন্টিবায়োটিক দিতে হবে, সে হিসাবে , ciprofloxacin, gentamycin, doxacycline ৩-৫ দিন দেয়া যেতে পারে।
- এছাড়া যেহেতু পায়খানার সমস্যা আছে তাই একটি সালফার গ্রুপের ঔষধ দিতে হবে।এ ক্ষেত্রে Ati vet suspension/ Sulphatrim powder/S-trim vet ৩-৫ দিন এন্টিবায়োটিক এর সাথে দিতে হবে।
- গরম বেশি পড়লে ভিটামিন সি / লেবুর রস দেয়া যেতে পারে।
ফাউল কলেরার প্রতিরোধঃ
- ফাউল কলেরা ভ্যাক্সিন দিতে হবে।
- খামারে জৈব নিরাপত্তা ভালোভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
- খামারে ইদুরের উপদ্রুপ সম্পূর্নরুপে বন্ধ করতে হবে।
- সব সময় একজন ভাল রেজিস্টাড ভেটরিনারিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে।
সালমোনেলোসিসঃ সালমোনেলোসিস পোল্ট্রির ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি প্রাণঘাতী রোগ।এটি পুলোরাম এবং ফাউল টাইফয়েড নামে পরিচিত। পুলোরাম রোগ বাচ্চা মুরগিতে এবং ফাউল টাইফয়েড পরিণত বয়সে দেখা দেয়। সালমোনেলোসিস পৃথিবীব্যাপী একটি সমস্যা এবং এটি পোল্ট্রিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে।
বাজারজাতকরণঃ টার্কি ১২ – ২০ সপ্তাহের মধ্যেই বাজারজাত করা যায়। বর্তমানে টার্কি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যার কারণে এখন বাজারজাতকরণ খুবই সহজ একটা বিষয় ।
সম্ভাবনাঃ বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি মুরগি পালন দিনে দিনে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। টার্কি বাণিজ্যিক মাংস উৎপাদনের জন্য খুবই উপযুক্ত কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত নয়। টার্কি মুরগি দ্রুত বড় হয়ে যায় এবং ব্রয়লার মুরগির মতো খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অন্যান্য পরিস্থিতিতে টার্কি মুরগি পালনের জন্য খুবই উপযুক্ত। এগুলোর পালন মুরগির মতো খুব সহজ।
বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি পালন-ব্যবসা করে ভালো মুনাফা অর্জনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। একটুখানি সচেতনতা, সরকারি গবেষণা এবং ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক অংশগ্রহণে এ টার্কিই হয়ে উঠতে পারে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যম এমনকি ব্যপক উৎপাদনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উপায়।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!