সয়াবিন চাষ পদ্ধতি। সয়াবিনের জাতসমূহের বর্ণনা ও সম্ভাবনা
সয়াবিন বাংলাদেশে ফসল হিসেবে এখনও জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি কিন্তু সয়াবিন তেল ভোজ্যতেল হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে সয়াবিন তেল সবটাই বিদেশ থেকে আমদানী করা হয়। কোন কোন সময় অপরিশোধিত সয়াবিন তেল বিদেশ থেকে নিয়ে এসে এখানে পরিশোধিত করে বাজারজাত করা হয়। সয়াবিন Leguminosae পরিবারের যার ইংরেজি নাম Soybean এবং বৈজ্ঞানিক নাম Glycine max.
বাংলাদেশে সয়াবিন একটি সম্ভাবনাময় ফসল। সয়াবিনে ৪০-৪৫% আমিষ এবং ১৯-২২% তেল রয়েছে। অন্যান্য ডাল ও শুঁটি জাতীয় শস্যের তুলনায় সয়াবীন দ্বিগুন আমিষ সম্পন্ন অথচ দাম কম। তাই স্বল্প মূল্যে আমিষ সরবরাহের লক্ষে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে সয়াবীনের চাষ করা প্রয়োজন।
সয়াবিনের জাতঃ বাংলাদেশে বেশ কয়েক জাতের সয়াবিন রয়েছে। এর মধ্যে ব্রাগ, ডেভিস, সোহাগ, বাংলাদেশ সয়াবিন-৪ (জি-২) এবং বারি সয়াবিন-৫ উল্লেখযোগ্য। এখানে কয়েকটি জাতের বর্ণনা দেওয়া হলো-
সোহাগ (পিবি-১)
সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবন করে ১৯৯১ সালে সয়াবিনের সোহাগ এ জতিটি অনুমোদন করা হয়। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৫০-৬০ সেমি। বীজ মাঝরি এবং ১০০ বীজের ওজন ১১-১২ গ্রাম। বীজের রং উজ্জ্বল হলদে। বীজে আমিষের পরিমাণ ৪০-৪৫% এবং তেলের পরিমাণ ২১-২২%।
পৌষ মাসে (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারী) বপন করলে ফসল সংগ্রহ করতে ১০০-১১০ দিন সময় লাগে। খরিফ মৌসুমে শ্রাবণ মাস থেকে মধ্য-ভাদ্র পর্যন্ত (মধ্য-জুলাই থেকে আগষ্ট মাস) বপন করলে ৯০ থেকে১০০ দিনের মধ্যে ফসল কাটা যায়। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৫-২.০ টন হয়। একর প্রতি ৬০০-৮০০ কেজি। সয়াবিনের সোহাগ জাতটি পাতার হলদে মোজাইক রোগ সহনশীল।
বাংলাদেশ সয়াবীন-৪ (জি-২)
বাংলাদেশ সয়াবীন-৪ জাতটি ১৯৯৪ সালে অনুমোদন করা হয়। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৬০-৬৫ সেমি। বীজের আকার ছোট, হাজার বীজের ওজন ৬০-৭০ গ্রাম। বীজের রং হলদে।
শ্রাবণ-ভাদ্র (মধ্য-জুলাই থেকে মধ্য সেপ্টম্বর ) অর্থ্যৎ করিফ মৌসুমে বপন করলে ৮৫-৯৫ দিন এবং রবি মৌসুমে, পৌষ মাসে (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য-জানুয়ারি) বপন করলে ফসল সংগ্রহ করতে ১২০-২২০ দিন সময় লাগে। হেক্টরপ্রতি ফলন ১.৫-২.২ টন এবং একর প্রতি ফলন ৬০০- ৯০০ কেজি। বীজের অংকুরোদগম ক্ষতমা বেশি। জাতটি পাতার হলদে মোজাইক রোগ সহনশীল।
বারি সয়াবিন-৫
তাইওয়ান থেকে সংগৃহীত জার্মপ্লাজমের মধ্যে ‘রেনসম’ নামের লাইনটি প্রাথমিক ও আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলন দেয়। এ জাতটি ২০০২ সালে ‘বারি সয়াবীন-৫’ নামে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এ জাতটি বাংলাদেশে সব মৌসুমেই চাষ করা হয়। গাছের উচ্চতা ৪০-৬০ সেমি। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ২৫-৩৫ টি। শুটিতে বীজের সংখ্যা ২.০-৩.০ টি। বীজের আকার সোহাগের চেয়ে সামান্য ছোট এবং ‘বাংলাদেশ সয়াবীন-৪’ এর চেয়ে বড়। বীজের রং ক্রীম এবং শত বীজের ওজন ৯-১৪ গ্রাম। জতিটির বীজনকাল ৯০-১০০ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন ১.৬০-২.০ টন এবং একর প্রতি ফলন ৬৫০-৮০০ কেজি।
মাটিঃ সয়াবিন দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটিতে চাষের জন্য উপযোগী। খরিফ বা বর্ষা মৌসুমে জমি অবশ্যই উঁচু ও পানি নিকাশ সম্পন্ন হতে হবে। রবি মৌসুমে মাজরি নিচু জমিতেও চাষ করা যায়।
জমি তৈরিঃ মটির প্রকারভেদে জমিতে ৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে ও অগাছা মুক্ত করে বীজ বপন করেত হবে।
বপনের সময়ঃ বাংলাদেশে শীত (রবি) বর্ষা (খরিফ) উভয় মৌসুমেই সয়াবিন বপন করা য়ায়। পৌষ মাসে (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য-জানুয়ারী) বপন কর ভালো। বর্ষা মৌসুমে শ্রাবণ থেকে মধ্য-ভাদ্র মাস পর্যন্ত (মধ্য-জুলাই থেকে আগষ্ট) বপন করা ভালো।
বপন পদ্ধতিঃ সয়াবিন সারিতে বপন করা উত্তম। করে কলাই বা মুগ ডালের মত ছিটিয়েও বপন করা যায়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব রবি মৌসুমে ৩০ সেমি এবং খরিফ মৌসুমে ৪০ সেমি রাখতে হয়। গাচ থেকে গাছের দূরত্ব ৫-৬ সেমি রাখতে হয়।
সারের পরিমাণঃ সয়াবিনের জমিতে প্রয়োগের জন্য সার সুপারিশ নিম্নরূপ-
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
ইউরিয়া | ৫০-৬০ কেজি |
টিএসপি | ১৫০-১৭৫ কেজি |
এমপি | ১০০-১২০ কেজি |
জিপসাম | ৮০-১১৫ কেজি |
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ সবটুকু সার ছিটিয়ে শেষ চাষের সময় জমিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
অণুবীজ সার প্রয়োগঃ এক কেজি বীজের মধ্যে ৬৫-৭০ গ্রাম অণুবীজ সার ছিটিয়ে দিলে ভালভাবে নাড়াচড়া করতে হবে। এই বীজ সাথে সাথে বপন করতে হবে। অণূবীজের সার ব্যবহার করলে সাধারণত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না।
পানি সেচঃ প্রথম সেচ বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে (ফুল ধরার সময়) এবং দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে (শঁটি গঠনের সময়) দিতে হবে।
আন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাচা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে। প্রতি বর্গমিটারে রবি মৌসুমে ৫০-৬০ টি এবং খরিফ মৌসুমে ৪০-৫০ টি গাছ রাখা উত্তম।
পরিপক্কতা ও ফসল সংগ্রহঃ সয়াবিন বীজ বপন থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত ৯০-১২০ দিন সময় লাগে। ফসল পরিপক্ক হলে শুটিসহ গাছ হলদে হয়ে আসে এবং পাতা ঝরে পড়তে শুরুকরে। এ সময় গাচ কেটে ফসল সংগ্রহ করতে হয়।
ফলনঃ বাংলাদেশে সয়াবীনের হেক্টরপ্রতি ফলন ১.৫-২.৩ টন।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!
Pingback:Agriculturelearning-The biggest field of agricultural information in Bangladesh