পাম অয়েল চাষ পদ্ধতি। ঘরোয়া পদ্ধতিতে পাম অয়েল উৎপাদন
পাম অয়েল গাছ বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ। একই গাছে পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল ফোটে এবং বায়ুপরাগী পতঙ্গ দ্বারা এর পরাগায়ন ঘটে থাকে। পরাগায়নের ৫-৬ মাসের মধ্যে পরিপক্কতা লাভ করে। পাম অয়েল গাছ ৬০-৮০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে কিন্তু ৩০ ফুট লম্বা পর্যন্ত চাষযোগ্য। চারা রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যে ফলন দিতে শুরু করে। বছরে ৮-১০টি কাঁদি আহরণ করা যায়। একটি কাঁদির ওজন ৪০-৮০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান ও জলবায়ু পাম অয়েল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গার দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলায় পাম অয়েল চাষ করা সম্ভব।
চাষ পদ্ধতিঃ সমতল, ভারী, পানি ধারনক্ষম পলিমাটি পাম চাষের জন্য আদর্শ। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২০ টি থেকে ১৫০ টি চারা অথবা ৯.৫ মিটার দূরে দূরে প্রতি হেক্টর জমিতে ১২৮ টি চারা রোপণ করা যায়। বীজ হতে চারা তৈরি করতে ১ বছর সময় লাগে। চারা রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যে ফল ধরে। রোপণকৃত চারা ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত ফল দিতে পারে। ৯.৫ মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গর্ত করতে হবে। প্রতিটি গর্তের আকার ২×২×২ ঘন ফুট। প্রতিটি গর্ত ৫-৬ কেজি জৈব সার (গোবর) দ্বারা ভরাট করতে হবে। জৈব সার শোধন করার জন্য একদিন (২৪ ঘণ্টা) তামাক পাতা ভেজানো পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিটি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রাথমিক মাত্রা হিসাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে চারা রোপণের আগে অবশ্যই গতের্র জৈব সার বা কম্পোস্ট ভালোভাবে ওলট-পালট করে গ্যাস বের করে দিতে হবে যাতে চারা গাছের কোন ক্ষতি না হয়। চারা রোপণের পর সবসময় মাটিতে যাতে পানি থাকে সেজন্য সেচ দিতে হবে।
ফল সংগ্রহ: সারা বছরই পাম গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। তবে মাসে তিন বার বা ১০ দিন পর পর ফল সংগ্রহ করা ভালো। প্রতি হেক্টর জমিতে বছরে ৪ টন পাম অয়েল উৎপাদিত হয় কিন্তু বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ও অষ্টেলিয়াতে ৭ টন/হেক্টর পাম অয়েল উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে।
তেল প্রস্তুত: পাম অয়েল ফল থেকে হাতে ও মেশিনে তেল সংগ্রহ করা যায়। প্রথমে পাকা ফল গাছ থেকে কাঁদিসহ কেটে নামিয়ে পরিস্কার করতে হবে। তারপর ফলগুলোকে পাত্রের মধ্যে পানিসহ ফুটাতে হবে অথাবা পেশারকুকারে দিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধো করে নিতে হবে। এতে ফলগুলো নরম হয়ে যাবে। এবার নরম ফলগুলোকে হাতে চেপে রস বের করতে হবে। তারপর পানি মিশ্রিত এ রসকে একটি পাত্রে রেখে চুলায় কিছুক্ষণ তাপ দিলে রসে বিদ্যমান পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে যাবে এবং পাত্রের মধ্যে পাম তেল জমা থাকবে। এভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তেল ছেঁকে বোতলে সংগ্রহ করে রাখলে ছয় মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
পাম তেলের ব্যবহার: পরিশোধিত পাম তেল গন্ধহীন হওয়ায় এর দ্বারা ভাজা খাদ্যেও স্বাভাবিক গন্ধ বজায় থাকে। বিস্কুট, কেক, আইসক্রীমসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার তৈরিতে পাম তেলের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। চর্বি উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে পাম তেল সকলের পছন্দনীয়। পাম তেল থেকে তৈরি হয় সলিড ফ্যাট যেমন বনস্পতি যা স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম কারণ পাম তেলকে হাইড্রোজিনেশন করার প্রয়োজন হয় না বলে এতে ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাটি এসিড থাকে না। পাম গাছের কাণ্ড, পাতা, ফলশূন্য কাঁদি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করা যায়। পাম তেল ভোজ্য তেল ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। সাবান, ডিটারজেন্ট, ফ্যাটি এসিড, ফ্যাটি এ্যলকোহল, গি্লসারল উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। পাম গাছের পাতা ও ফলশূন্য কাঁদির আঁশকে প্রক্রিয়াজাত করে মধ্য ঘনত্বের ফাইবার বোর্ড ও চিপবোর্ড তৈরি করা যায়। পাম গাছের গুঁড়ি থেকে চমৎকার আসবাবপত্র করা যায়। পাম গাছের পাতা মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করে।
সম্ভাবনাঃ কৃষিতে সম্ভাবনাময় দেশ বাংলাদেশ। নানাবিধ ফসলের পাশাপাশি একটি নতুন সম্ভাবনার নাম পাম অয়েল চাষ। শস্যের নিরাপত্তার পাশাপাশি বর্তমানে ভোজ্যতেলের নিরাপত্তাও নিশ্চত করার দিকে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বর্তমানে তেল উৎপাদন বা বিক্রয়ের তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় পাম চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। যার কারণে চাষিদের অনেকই পাম চাষ থাকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সরকারিভাবে এই পাম থেকে তেল উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হলে পাম অয়েল দিয়ে দেশে তেলে চাহিদা পূর্ণ করা সম্ভব।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!