দিশার সংগ্রামী জীবন । পর্ব-২ । ভালোলাগার মতো গল্প
দেখতে দেখতে দিশার মেডিকেলে ভর্তির দিন চলে আসল। দিশার বাবা ডা: দেলোয়ার হোসেন মেয়েকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানোর জন্য মেয়ের সাথে যাবে বলে অফিস ছুটি নিয়েছেন।
তিনি দিশার মা (দিলারা হোসেন ) কে বললেন মেয়ের সবকিছু ঠিকমত গুছিয়ে দিতে।
এদিকে দিয়ান তার বাবার সাথে ঢাকা যাওয়ার বায়না ধরল। আপনাদের তো বলাই হয়নি যে, দিয়ান হলো দিশার ছোট ভাই। ৫ম শ্রেণীতে রংপুর জিলা স্কুলে পড়ে।
দিলারা মেয়েকে ঢাকা যাওয়ার আগের রাতে অনেক বোঝালেন। বললেন দিশা তুই শুধু মন দিয়ে পড়ালেখা করবি। তোর বাবার ইচ্ছে তুইও তাঁর মতো সফল নিউরো সার্জেন্ট হবি।
চলার পথে অনেক বাঁধা বিপত্তি আসবে, তোকে অনেকেই প্রেমের ফাঁদে ফেলতে চাইবে, অনেকে ক্লাসমেট হয়তো কষ্ট দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবে, হয়তো টিচারের কোন ব্যবহারে আঘাত পেতে পারিস। কেননা হাতের পাঁচ আগুল যেমন সমান না, তেমনি দুনিয়ার সব মানুষ সমান না।
তুই কখনও ভেঙ্গে পড়বি না মা, তোর বাবা আর আমি সবসময় তোর পাশে আছি।
এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হলো আমাকে আমি করে গড়ে তোলা। এমনভাবে নিজেকে জীবনে গড়ে তুলবি যে, তুই হেঁটে গেলে যেনো মানুষ দুইবার তাকিয়ে দেখে।
কারো সাথে কথা বলার সময় সবসময় চোখে চোখ রেখে সত্য কথা বলবি, অসহায়ের পাশে দাড়ানোর মানুষিকতা রাখবি।
আমার সোনা মেয়েকে একটু বেশিই জ্ঞান দিয়ে দিলাম। না মা তুমি মন্দ কিছু বল নাই। আমি সবসময় তোমার কথাগুলো মনে রাখব মা। যা এবার ঘুমিয়ে পড়।
পরের দিন সৈয়দপুর থেকে বিমানে করে সবাই ঠিকমত ঢাকায় পৌঁছে উত্তরায় ১৮ নম্বর সেক্টরে দিশার মামার বাসায় উঠল। দিশার মামা ও মামি আশিক সাহেব ও ঝর্ণা সবাইকে দেখে অনেক খুশি হলো এবং তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ খেতে ডাকল।
বিকালে সবাই নিচে একটু ঘুরাঘুরি করল। সবচেয়ে মজা করল দিয়ান ও আয়ান। আয়ান ও আয়েশা হলো দিয়ানের মামাতো ভাই-বোন।
আয়ানও ৫ম শ্রেনীতে মাইলস্টোন স্কুলে পড়ে এবং আয়েশা একই স্কুলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। আয়ান ও দিয়ান মিলে জমিয়ে নিচের মাঠে সন্ধ্যা অবদি ফুটবল খেললো।
দিশার মামা আশিক আহমেদের আমদানী-রপ্তানীর বড় ব্যবসায়া রয়েছে। দিশার মামা বললেন, মামনি তুমি যতদিন না হোস্টেলে সিট পাবে ততদিন আমাদের এখানে থেকে ক্লাস করবে।
ঠিক আছে মামা। দিশার বাবা মা ডিএমসি ( DMC) তে মেয়েকে ভর্তি করিয়ে অরিয়েন্টেশন শেষ করে হোস্টেলের ব্যাপারে কথা বলে রংপুরে স্বপরিবারে ফেরত আসলেন।
দিশা মামার গাড়িতে করে প্রথম দিন ক্লাসে গিয়ে কয়েকজন ক্লাসমেটের সাথে আলাপ হলো। হ্যালো আমি ইনায়া, আমার বাসা দিনাজপুর সদরে, বালুবাড়িতে।
তোমার বাসা কোথায়? আমার বাসা মুন্সিপাড়া রংপুরে। আমার নাম দিশা হোসেন। খুব ভালো হলো আমাদের বাসা পাশাপাশি। ঠিকই বলেছো।
ইনায়া তোমার পরিবারে কে কে আছে? আমি, ভাইয়া, বাবা আর মা। বাবা মা দিনাজপুরেই থাকেন। মা কলেজের লেকচারার আর আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার, বিএডিসিতে কর্মরত আছেন। ইশান ভাইয়া বুয়েটে ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।
ভাইয়া আমার সাথে দেখা করতে আসলে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।
আচ্ছা। তুমি কি হোস্টেলে উঠে গেছো ইনায়া? হু। ভালো করেছো। আমিও কাল থেকে হোস্টেলে থাকব। দিশা এখন মামার বাসা থেকে হোস্টেলে উঠে গেছে।
পুরো দমে ক্লাস পরীক্ষা চলছে। বাসায় প্রতিদিন বাবা মা ও ভাইয়ের সাথে কথা বলাটা দিশার ডেইলি রুটিনের মাঝে অন্যতম একটা কাজ।
ইনায়া ও দিশা পাশাপাশি রুমে সিট পাওয়ায় এবং একই এলাকার হওয়ায় তাদের মাঝে বেশ ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে।
ইনায়া হনহন করে দিশার রুমে এসে বললো তুই তাড়াতাড়ি রেডি হও। ইশান ভাইয়া ২০ মিনিটের মধ্যে হোস্টেলে আসবে।
তো আমি রেডি হয়ে কি করব শুনি? আমি ভাইয়ার সাথে শপিং এ যাব আর তুইও আমাদের সাথে যাবি।
আমার শরীরটা ভালো লাগছে নারে। তোরা যা মার্কেটে। প্লিজ দিশা চল নারে। আমি তকে না নিয়ে যাব না। ঠিক আছে যা ভাইয়া আসলে কল দিস।
রেডি হয়ে দুজনে মিলে গেটের কাছে এসে দেখল ইশান দাডিয়ে মোবাইল টিপছে। ইশানের পরনে ছিল ব্ল্যাক জিন্স ও রেড টি শার্ট। যেমন লম্বা গড়ন তেমনি পাতলা ছিপছিপে চেহারা। গায়ের রং ফর্সা এবং চুলগুলো হালকা কোঁকড়ানো।
এক কথায় যেকোনো মেয়েই এক দেখায় প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো মায়াবী চেহারা ইশানের। …………চলবে…………………………।
লেখকঃ নাজনীন আফরোজ
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!