দিশার সংগ্রামী জীবন । পর্ব-৩ । ভালোলাগার মতো গল্প
ভাইয়া সরি তোমাকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো। দিশার জন্য দেরি হয়ে গেলো। ইনায়া নিজে দেরি করে আমার ঘাড়ে দোষ চাপাবি না বলে দিলাম। ইশান দুজনকেই ধমক দিয়ে বলল তোরা কি এখানে ঝগড়া করতে এসেছিস। এজন্যই তো তোর এখানে আসতে ইচ্ছা করে না।
ইনায়া গোমড়ামুখ করে বলল সরি ভাইয়া। ভাইয়া তোমাকে তো আমার প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর সাথে পরিচয় করে দেওয়া হয়নি। এই হলো দিশা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড যার কথা আমি তোমাকে সবসময় বলি। দিশার বাসা কিন্তু রংপুরে। আর দিশা এটাই আমার ইশান ভাইয়া। ইশান বলল কি কি লাগবে লিস্ট করেছিস। না ভাইয়া, আমার মনে আছে। ঠিক আছে।
শপিং এর শেষ পর্যায়ে ওরা নীলক্ষেতে গিয়ে মেডিকেলের দরকারি কিছু বই কিনল।
পরে ইশান ওদের ২ জনকে ডিনারের জন্য রেস্টুরেন্টে নিয়ে গালো। ইশান ওয়াশরুমে ফ্রেশ হওয়ার জন্য যাওয়ার সময় বলে গেল মেনু দেখে তাদের পছন্দমত অর্ডার করতে।
এতক্ষণে দিশা একটু হাফ ছেড়ে বাঁচল। ইশান ভাইয়া সাথে থাকায় ও ইনায়ার সাথেও ঠিকমত মন খুলে কথা বলতে পারে নাই। ইনায়া দ্রুত কিছু অর্ডার দেনা রে। আমার ভালো লাগছে না। আমি হোস্টেলে যাব।
দিশা আমার ভাইয়ের চেহারা কি এতোটাই খারাপ যে ভালো লাগছে না তোর। মাগো মা আমি কি তাই বললাম, দাঁড়া তরে দেখাচ্ছি মজা বলেই যেই না ইনায়ার দিকে যাবে অমনি ইশানের সাথে দিশার ধাক্কা খাওয়ার উপক্রম। শপিং এর পুরো সময়ের মধ্যে এই প্রথম দিশাকে ভালোভাবে তাকালো।
ইশান দিশাকে আপাদমস্তক দেখে তো পুরাই হতবাক। মায়াবী চোখ, সদ্য ফুটন্ত গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট, এলোমেলো দীঘল কালো চুল সবমিলিয়ে ইশান কিছুক্ষণ আনমনা ও উদাসীনভাবে দিশার দিকে তাকিয়ে থাকার মূহূর্তে কবি কাজী নজরুল ইসলামের দুটো লাইন মনে পড়ে গালো-
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়া, সে কি মোর অপরাধ?
চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিনী বলে না তো কিছু চাঁদ।”
এদিকে দিশা তো লজ্জায় লাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইনায়া বলল ভাইয়া তুমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কল্পনার রাজ্যে চলে গেছ? আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। দিশার শরীর খারাপ লাগছে, আমরা খেয়ে দ্রুত হোস্টেলে ফিরব। ঠিক আছে। ইশান ডিনার শেষে দুজনকে হোস্টেলের গেটে নামিয়ে দিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসের হোস্টেলে ফিরল।
ইশান ফ্রেশ হয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিয়ে তুহিনকে শুভরাত্রি বলে ঘুমাতে আসল। মনে মনে ভাবল আমি মেয়েটার সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিত্ব এতটাই মুগ্ধকর যে, কিছুতেই ওর কথা মাথা থেকে যাচ্ছে না। কি করা যায়, ইনায়ার কাছে কি দিশার নাম্বার নিব। এমনটা করলে ইনায়া বুড়ি যে পাকনার পাকনা, শুধু শুধু আমাকে খেপাবে। তার চেয়ে বরং ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে তো ক্লাস আছে, প্রজেক্টের কাজ আছে। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা।
এদিকে রুমে এসে দিশার একটু জ্বর জ্বর লাগছিলো। বাসায় কথা বলার জন্য বাবাকে কল দিল। বাবা তোমরা কেমন আছ? মার কি পায়ের ব্যাথা কমেছে। বাবা দিয়ান কি ঠিকমত পড়ালেখা করে? তুই এতো ভাবিস না। আমরা সবাই বেশ ভালো আছি। শুধু কাজের চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তোর কাছে টাকা আছে নাকি শেষ। তুই তো আবার টাকা শেষ হলেও বলিস না। বাবা এমন কি কখনও হয়েছে যে আমার টাকা শেষ হয়ে তারপর তুমি টাকা পাঠিয়েছো। তুমি তো সবসময় আমার টাকা শেষ হওয়ার আগেই একাউণ্টে টাকা পেঠিয়ে রাখ। তুই যে কলিজার টুকরা আমার। মাকে একটু দাইও না বাবা।
হ্যালো, মা ভালো আছ তুমি? ভালো আছি রে সোনা মা। ওইখানে তোর কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো। সব ঠিকঠাক ছলছে তো? হ্যা মা, আমি ভালো আছি। বিশেষ কিছু দরকার হলে মামা-মামিকে বলবো। তাছাড়া, ইনায়া তো আছেই। কিছু লাগলে আমরা গিয়ে কিনে নিয়ে আসি। মা আমাকে নিয়ে বেশি চিন্তা কর না। মা সামনে সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ করে বাসায় চলে আসব। এবার ইনায়াকেও সাথে নিয়ে আসব। আচ্ছা, রাখি তাহলে। ভালো থাকিস মা বলেই কল কেটে দিল দিলারা।
দিশা কিছুক্ষণ পড়ালেখা করে নাপা টেবলেট খেয়ে শুয়ে পড়লো। পরের দিন ক্লাসে গেলো তারা। এভাবেই ব্যস্ততার মাঝে কেটে গেল সপ্তাহ।
ইশানের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। তুহিন, হিমু, নাহিদ, মাইশা, রত্না ও ইশান মিলে বান্দরবান ট্যুরের প্লান ওরা পরীক্ষার আগেই করে রেখেছিল।
আজ দিশার কথা আবার মনে পড়লো ইশানের। মনে মনে ভাবল তুমি হয়তো বা জানো না যে তোমার রূপের মধ্যে কি জাদু আছে যার প্রশংসা করে শেষ করা যাবে না। দিশা বেবি মন তো আমি তখনই হারিয়ে ফেলেছি যখন এক ঝলকেই তোমার ওই রূপ আমার নজর কেড়ে নিয়েছিল।
আর তোর সইছে না, কিছু একটা করতে হবে বলেই ইনায়াকে কল দিয়ে বলল আমি তোর হোস্টেলের গেটে থাকব ঠিক ১৫ মিনিটের মধ্যে। আজ দেরি করলে তোর খবর আছে। আর শোন তোর ফ্রেন্ড দিশাকেও নিয়ে আসবি কিন্তু। ইনায়া ভংচি কেটে বলল ভাইয়া তোর কাহিনী আমি মেয়েবি বুঝে গেছি। তোর মত গাধী সবসময় একটু বেশিই বোঝে। অকে আমি একাই নিচে নামব তাহলে। আরে না না তুই না আমার লক্ষি বোন, প্লিজ এমন করিশ না। আপ হুয়ি না বাত…ভাবে দেখব।
ফোনটা রেখেই দিশার রুমে গিয়ে বলল চল নিচে গিয়ে চা খেয়ে আসি। একটানা পরীক্ষা দিয়ে টায়ার্ড। চল না দোস্ত। বাবা রে যে মেয়ে যদি বলি ইশান ভাইয়া আসবে তাহলে তো যাবেই না।
দুজনে গেটের কাছে যেতেই ইশানের সাথে দেখা। কেমন আছ দিশা? পরীক্ষা কেমন হয়েছে। জি ভাইয়া ভালো। পাশ থেকে ইনায়া বলল এখানে আরো একজন আছে তা তো কারো চোখে পড়বে না। তোর সাথে তো ডেইলি কথা হয় বুনু, তাই আর কি।
প্রথম বর্ষের প্রফ ফাইনাল দিয়ে দুজনেই রোগা পটকা হয়ে গাছিস বুনু। চল তোদের দুটোকে কিছু খাওয়াই। দিশা বলল আমার খুব মাথা ধরেছে, আমি কফি খাব। অকে । আগে কফি হয়ে যাক। ইনায়া বলল ভাইয়া তোমার পরীক্ষা কেমন হয়েছে। ভালো। দিশা জানতে চাইল সামনে আপনার কি প্লান। বাইরে চলে যাবেন নাকি বিসিএস দিবেন? বাবা মার ইচ্ছা পুরণের জন্য একবার বিসিএস দিব নাহলে বাইরে চলে যাব হায়ার স্টাডির জন্য।
তোদের দুজনের জন্য একটা দারুণ অফার আছে। আমরা ছেলে ও মেয়ে ফ্রেন্ডরা মিলে বান্দরবান নাহলে ছাজেক ট্যুরে যাব। চাইলে আমাদের সাথে যেতে পারিস। দিশা বলে উঠল ভাইয়া আমি তো ইনায়াকে নিয়ে রংপুরে যেতে চাই। এখনি জানাতে হবে না। আঙ্কেল আন্টির সাথে কথা বলে রাতে নানালেও চলবে। ঠিক আছে ভাইয়া।
ইশান কফিতে চুমুক দিতে দিতে চুরি চুরি করে দিশার দিয়ে তাকালো যা ইনায়ার দৃষ্টিকে ফাঁকি দিতে পাড়ল না। ইশান মনে মনে ভাবল “তোমার চোখের সেই মায়ায় আমি প্রতিনিয়ত ডুবে যাচ্ছি দিশা। তুমি আমার হৃদয়ের সেই মিষ্টি গান, যা আমি প্রতিদিন শুনতে চাই।”
ইশান আজ মনের মধ্যে সাহস জুটিয়ে বাহানা বানিয়ে বলেই ফেলল যে দিশা তোমার মোবাইল নাম্বারটা দাও। কারণ মাঝে মাঝে আমি ইনায়াকে ফোনে পাই না, মোবাইল অফ দেখায় তখন তোমার ফোনে কল দেওয়া যাবে। জি ভাইয়া বলেই নাম্বারটা ইশানকে দিয়ে দিল।
ইশান তো আজ খুশিতে আত্মহারা। ঠিক সেই সময় ইনায়া ইশানের হাত ধরে একটু সরে গিয়ে বলল ভাইয়া ভেবেছিলাম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে মানুষ কাঠখোট্টা টাইপের হয়। তা আজ ভুল প্রমানিত হয়েছে। তোমার আক্টিভিটি দেখে মনে হচ্ছে তুমি ঢাবির নাট্যকলার স্টুডেন্ট।
ভাইয়া একটা গোপন কথা বলব। বলে ফেল বুনু। দিশাকে আমি ভাবী বানাতে চাই। ও আমার খুবই প্রিয়। সমস্যা একটাই দিশা আঙ্কেল আন্টির উপর এতোটাই ডিপেন্ডেন্ট যে বাল্যকাল থেকে এখন অব্দি ওর জীবনের সকল সিদ্ধান্ত নেন ওর বাবা-মা।
তাই ফ্রি এডভাইস দিশাকে ইমপ্রেস না করে ওর বাবা-মাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা কর ডিয়ার ভাই।
তোর এই গুড আইডিয়ার জন্য আপাতত এক হাজার টাকা বকশিস দিলাম। ………………………চলবে…………………………………………
লেখকঃ নাজনীন আফরোজ
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!