দিশার সংগ্রামী জীবন |পর্ব- ৪ |ভালোলাগার মতো গল্প
ইনায়া বলল মাত্র এক হাজার টাকা। ভাইয়া তুমি কি আমাকে ফকিন্নী পেয়েছ? এতে কাজ হবে না বলে দেলাম কিন্তু। বুনু প্লিজ, এবার এটাতেই চালিয়ে নে, নেক্স টাইম বাড়াই দিব।
ওকে মনে থাকে যেন।দুই ভাই-বোনের কানাকানি দেখে দিশার ভীষণ বিরক্ত লাগছিল। না পেরে সে বলেই বসল তোদের ফিসফিসানি আর কতক্ষণ চলবে? থাক তোরা, আমি হোস্টেলে গেলাম।দিশা দোস্ত যাস না প্লিজ।
কঞ্জুসটার কাছে টাকা চাচ্ছি, দিতে চাইছে না। ইশান বলল আমি মোটেও কিপটে না। এবার কি খাবি বলে ফেল। এখন আর তোমার টাকা খরচ করব না।
কিন্তু যদি আঙ্কেল আন্টি দিশাকে আমাদের সাথে সাজেক ভ্যালি যেতে দেয় তাহলে আমাকে আর দিশাকে শপিং করার টাকা দিতে হবে। ওকে।
এবার চল তোদের হোস্টেলে দিয়ে আসি। আর শোন তোরা রাতে জানাস কিন্তু সাজেক যাবি কি না?
ইশান ওদেরকে দিয়ে হোস্টেলে ডিনার করে রুমে আসল। পরে তুহিন, হিমু, নাহিদ ও আফনানকে ইশান নিজের রুমে কল করে আসতে বলল।
কিছুক্ষণ পরে ওরা সবাই ইশানের রুমে এসে জরুরি তলবের কারণ জানতে চাইল। আমরা ফাইনালি কোথায় ট্যুরে যাব বান্দরবান নাকি সাজেক ভ্যালি? এ বিষয়ে সবার সাথে কথা বলার জন্য এবং তোদের সবার কার কি মতামত তা জানার জন্যই ডাকেছি।
আর মাইশা ও রত্নার সাথে ফোনে কথা বলে নিব আমরা। আফনান বলল আমার মনে হয় এই সময়টা সাজেক বেড়াতে গেলে ভালোই হবে।
কারণ আমার জানা মতে, বর্ষার শুরু থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত অর্থাৎ মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ থাকে বিধায় এসময় সজেক বেশি সুন্দর। তখন মেঘ ভেসে বেড়ায় এখানে সেখানে। দীর্ঘ আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত হলো সাজেক ভ্যালি যাবার।
তুহিন বলল, আজ মঙ্গলবার। তাহলে পরশু বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করলে কেমন হয়? বাকিরা সবাই একমত পোষণ করল।
এবার ইশান কাচুমাচু বলল আমার বোন ইনায়া আমারের এই ট্যুরের কথা শুনার পর থেকেই আমাকে জ্বালিয়ে মারছে সাথে যাওয়ার জন্য। আবার ওর একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড দিশাকেও সাথে নিতে চায়। যদিও দিশা এখন কিছু জানাই নাই।
তুই এতো ফরমাল হইতাসোস কেন, তোর ছোট বোন তো আমাদের বোন। ওরা গেলে আমাদের অসুবিধা নাই। ইশান শুনে তো সেই খুশি হলো। এরপর যে যার রুমে চলে গেল।
ফোনটা হাতে নিতেই ইশানের মা তামান্না চৌধুরীর কল আসল। হ্যালো, মা কেমন আছ? বাবা কেমন আছে? ভালো। তুই কেমন আছিস বাপধন। তোদের দুই ভাই বোনের পরীক্ষা তো শেষ। তোরা বাসায় চলে আয়।মা, আমি বন্ধুদের সাথে সাজেক যাব পরশুদিন।
এটা বলার জন্য এখনই বাবাকে কল দিতাম। মা, ইনায়াও তো পরীক্ষা শেষ। আর আমাদের সাথে আমার ডিপার্ট্মেন্টের দুইজন মেয়েও যাবে। তাই বলছিলাম যে, বুনুকেও আমাদের সাথে নিয়ে যাই। তাহলে তো ভালোই হয়।
শোন বাবা, ইনায়া তো মনে হয় না যে দিশাকে ছাড়া একা যাবে। তাই দিশাকেও নিয়ে যাস যদি ওর বাসা থেকে অনুমতি দেয়। থ্যাঙ্ক ইউ মা। বাবা কি করে? তোর বাবার আজ কাজের খুব চাপ ছিল অফিসে। শরীর টাও নাকি একটু মেজমেজ করছিল। তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছে।
আমি তোর বাবাকে কাল তোদের ট্যুরের কথা জানিয়ে দিব আর সাথে টাকাও পাঠাতে বলব। বাবার জ্বালায় তো লাইফে একটা টিউশনিও করাতে পারলাম না। বাবার ভাস্যমতে, টিউশনি করালে নাকি আমার লেখাপড়ার ক্ষতি হবে, আরো কত কি। তাই কি আর করা এখন শুধু টাকাই পাঠাও। ঠিক আছে বাপধন, রাখি তাহলে। ওকে মা।
এদিকে দিশার রুমে ইনায়া বসে আছে। ইনায়া দিশাকে অনেকটাই সাজেক যাওয়ার জন্য মোটিভেট করে ফেলেছে। কিন্তু সে ভয়ে এই কথা বাসায় বলতে পারছে না। এদিকে ইশান ভাইয়াকেও তো জানাতে হবে।অবশেষে, দিশা সাহজ করে বাবাকে কল দিল।
দেলোয়ার হোসেন ফোন ধরেই বলল, কেমন চলছে মামনি। কবে বাসায় আসবে। কাল কি রংপুরে আসার প্লেনের টিকিট করে দিব?বাবা, আমি ভালো আছি আর পরীক্ষাও ভালো দিয়েছি। এবারেও আমি টপ করব ইনশাল্লাহ। বাবা, বলছিলাম কি আমি কয়েক দিন পরে বাসায় যাই। কেন রে মা? কোন কাজ আছে ওখানে তোর? বাবা, আমি সাজেক মানে ইনায়ার সাথে সাজেকে পরশুদিন বেড়াতে যেতে চাই যদি তুমি আর মা অনুমতি দাও।
সেকি মামনি এতো দূরে একা একা যাবি, তা কি করে হয়। তোর মা শুনলেও যেতে দিবে না। আমার মনে হয় তুই বাসায় চলে আয়। ঠিক আছে বাবা, তুমি যা ভালো মনে করো। রাখি বাবা, ভালো থেকো।ফোন রেখেই বলেছিলাম না তরে আমাকে যেতে দিবে না।
আমি হলাম আমার বাবা রাজকন্যা। তুই একা চলে যা দোস্ত। তুই না গেলে আমি যাব না। দোস্ত আমি একবার ট্রাই করে দেখি আন্টিকে ফোন দিয়ে।ওকে। ইনায়া কল দিয়েই আন্টিকে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিঙ্গাসা করেই বলল আন্টি একটা আবদার ছিল। আমি ইশান ভাইয়া ও তার ফ্রেন্ডদের সাথে সাজেক যাব। তাই বলছিলাম দিশাও আমার সাথে যাক। আন্টি আমি দিশাকে চোখে চোখে রাখব। প্লিজ আন্টি, প্লিজ।
ফোনটা দিশাকে দাও তো মা। দিশা মামনি কেমন আছ? ভালো মা। তুই কি সাজেক ইনায়ার সাথে যাতে চাস? ওদের ট্রিপে কি তোরা বাদে বুয়েটের কোন মেয়ে যাবে। হ্যা মা, দুইটা আপু আর চারটা ভাইয়া যাবে। তোর বাবার সাথে কথা বলেছিস? হু, কি বলেছে বাবা। যেতে মানা করেছে।আচ্ছা। আমার রাজকন্যার কি ইচ্ছা? তুমি আর বাবা যা বলবে সেটাই হবে মা। ওকে, আমি তোর বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করাব।
তবে এক শর্তে। ইনায়াকে ফোন দাও, জি আন্টি বলেন, শোন মা আমি তোমাদের সাথে দিশাকে যেতে দিব তবে তার আগে ইশানকে বল আমার সাথে কথা বলতে। ওকে আন্টি।
ইনায়া ফোন রেখে খুশিতে দিশাকে জোড়িয়ে ধরে বলল দোস্ত ফাইনালি আমরা যাচ্ছি। তবে একটু টেনশন আছে। আন্টি ইশান ভাইয়ার সাথে কথা বলে ফাইনাল যানাবে। দিশা বলল ওকে। ইনায়া তার ভাইয়াকে সবকিছু বলার পরে দিশার মাকে কল দিতে বলল। ঠিক আছে বুনু। আমি কথা বলে আপডেট জানাব।
ইশান কল দিল দিলারা হোসেনকে। হ্যালো, আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি, আমি ইশান, ইনায়ার বড় ভাই। ওয়ালাইকুমুস সালাম, কেমন আছ বাবা। জি আন্টি ভালো। তোমাদের ট্যুরে কথা শুনলাম। দেখ বাবা, দিশাকে আমরা কখনও একা কোথায় যেতে দেইনি। ট্যুরে গেলে তুমি কি বড় ভাইয়ের সব দায়িত্ব নিতে পারবে। যদি তুমি কথা দাও তোমার বোনদের যেভাবে নিয়ে যাবে সেভাবে ফেরত আনবে, তাহলে যেতে দিব। আমি কথা দিলাম আন্টি, আমি ওদের দুজনকে দেখে রাখব। ঠিক আছে বাবা।
ফোন রেখে দিশার বাবাকে সবটা বলল। দেলোয়ার হোসেন বলল কেন তুমি রাজি হলে? দেখো দিশার বাবা, মেয়ে কখনও আমাদের কথার বাইরে কিছু করে না। সন্তানেরা সারা জীবন শুধু বাবা মার কথা শুনবে আর বাবা মা সন্তানদের কোন আবদার রাখবে না তা কি হয় বলো।আমি ওর মা। আমার মেয়ের সব না বলা কথা আমি বুঝি। তাই যেতে দিতে রাজি হয়েছি। কাল মেয়ের একাউন্টে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিও। যথা আজ্ঞা মহারানী। ……………
চলবে………………………
দিশার সংগ্রামী জীবন
পর্ব-৪
লেখকঃ নাজনীন আফরোজ
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!