দিশার সংগ্রামী জীবন |পর্ব-৬ | ভালোলাগার মতো গল্প
ইশান মনে মনে তো ভীষণ খুশি, এই সুযোগে দিশার কয়েকটা ছবি পাওয়া গেল। একটু পরে ইনায়া চলে আসল। দিশাঃ এই বুঝি তোর আসার সময় হলো। কেন রে? ভাইয়া কি করে বিরক্ত করেছে নাকি খাম্বার মত দাড়িয়ে ছিল। ও মা, আমি কি তাই বললাম নাকি।
ভাইয়া এবার তুমি যেতে পার। আর শোন, আমাদের খুব ক্ষুধা লাগছে। ওকে বুনু, আমি ফ্রেশ হয়ে দ্রুত দুপুরের খাবারের জন্য বের হব। তোরা রেডি থাকিস।
রুমে আসতেই আফনান বলল মামা ট্রেন ঠিক লাইনেই চলছে। চালিয়ে যা মামা, হাল ছাড়া যাবেনা, সফলতা একদিন আসবেই। মিলিয়ে নিস দোস্ত, বিখ্যাত জ্যোতিষী আফনানের ভবিষ্যতবানী, বলেই হো হো করে হেসে উঠল আফনান। আরে বেটা, রাখতো তোর ফাসলামো বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেল। তারপর, এক ঘণ্টার মধ্যে সবাই কোটেজের বাইরে একসাথে হলো।
বাঁশের চোঙে পাহাড়ি মুরগি রান্না, সবজি ও ডাল দিয়ে সবাই দুপুরের খাবার শেষ করল।এমন সময় ইনায়ার মা কল দিয়ে বলল, তোরা কেন বাঁধনকে সাথে নিয়ে গেলি না। মেয়েটা শোনার পর থেকে কান্নাকাটি করে বলছে খালামনি ইনায়া আর ইশান আমাকে না নিয়েই চলে গেল। সরি আম্মু, পরে কোথাও গেলে বাঁধন আপুকে সাথে নিব বলে কথা শেষ করল।
আপনাদের তো বলাই হয় নাই, বাঁধন হলো ইনায়ার একমাত্র খালার একমাত্র মেয়ে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বিবিএ শেষ করলো। ইশান ও বাঁধন সমবয়সী। বাঁধনের বাবা বজলুল রহমানের জুয়েলারির বিজনেস। উনার বসুন্ধরা ও যমুনা ফিচার পার্কে বাঁধন জুয়েলারি লিঃ নামে শোরুম আছে। আর ওর মা গৃহিণী। ঢাকার গ্রীন রোড়ে ওদের নিজেদের বাড়ি আছে।
ইশান বলল মা কি বলে রে। ভাইয়া বাঁধন আপু নাকি কান্না করছে, আমরা কেন তারে নিয়ে আসি নাই। তাই তোমার মায়েরও ভীষণ মন খারাপ। ইশান বলল আমি তো ভুলেই গেছিলাম, কিন্তু তুই তো বাঁধনকে বলতে পারতিস।
ইনায়া বলল মোটেই না ভাইয়া, কারণ তুমি ভালো করেই জান যে আমি ওই শাকচুন্নিটাকে মোটেই পছন্দ করি না।সারাক্ষণ কেমন ঢং করে কথা বলে আর তোমার গা ঘেঁষে ঘুরে। বাবা ওরে খুব একটা পছন্দ করে না। কিন্তু মা তো বাঁধন বলেই অজ্ঞান। জানো ভাইয়া, মা ও খালামনি মিলে প্লান করেছে বাঁধন আপুর সাথে তোমার বিয়ে দেওয়ার। আমি কিন্তু বলে দিলাম ওই শাকচুন্নিকে আমি ভাবি বানাবো না।
বুনু, তাহলে তুই কারে ভাবি বানাবি বলে ঠিক করেছিস। এর উত্তর আমি পরে দিতেছি, আগে বল তুমি কি বাঁধন আপুকে পছন্দ কর। আচ্ছা, আমার বোন তো দেখি বড় হয়ে গেছে। আমি বাধনকে খালাতো বোন হিসেবে পছন্দ করি কিন্তু বউ বানানোর কোনো ইচ্ছা নাই।এবার বল কারে ভাবি বানাবি। অবশ্যই দিশাকে ভাবি বানাতে চাই যদি তোমার ভালো লাগে। ভাইয়া দিশাকে তোমার পছন্দ হয়েছে। হু, অনেক ভালো লাগে। কিন্তু কিভাবে বোঝাব তাকে। এই কদিনেই দিশাকে মোটিভেট করার চেষ্টা করিও। ওকে বুনু।
এবার আফনান আসে বলল কিরে ব্যাটা সারাক্ষণ তো দেহি তোরা ভাই বোন মিলেই গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করস। আমাগো কি তোরা চোখে দেখস না। ইনায়া বলল, না ভাইয়া তেমন কিছু না। আম্মু কল করেছিল তো আমাকে, তা নিয়েই একটু কথা বলছিলাম। থাক হয়েছে।
এবার চল ঘুরাঘুরি শুরু করা যাক। কারো কোটেজে যাওয়ার প্রয়োজন হলে আধা ঘন্টা সময় দেওয়া গেল। আধা ঘন্টা পরেই সবাই আবার কোটেজের বাইরে এখানে জমায়েত হব।দিশা বলল আমার খুব মাথা ধরেছে। ইনায়া দোস্ত চা খেতে মন চাইছে। নো অরি, বাইরে গেলে খাব।
বিকালে সবাই চা খেতে চাইলো। মাইশা ওঁ নাহিদ বলল, আদিবাসীদের হাতে বানানো বাঁশের চোঙে চা খেয়ে নাকি অন্যরকম স্বাদ। চল চা চক্র হয়ে যাক।চায়ে চুমুক দিতে দিতে রত্না বলল, চোখের সামনে মেঘ ও পাহাড়ের মাঝে সূর্যের লুকোচুরি দেখতে অসাধারণ লাগছে, তাই নারে তুহিন।ঠিকই বলেছিস দোস্ত। এখানে না আসলে জীবনের আট আনাই বৃথা হয়ে যেত।……………… চলবে
দিশার সংগ্রামী জীবন
পর্ব-৬
লেখকঃ নাজনীন আফরোজ
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!