নিরাপদ ও মানসম্মত ফসল পেতে আমাদের করণীয় দিকসমূহ
নিরাপদ ও মান সম্মত ফসল পেতে জৈব কৃষির বিকল্প নাই। কেননা বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি জনবহুল দেশ যার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। তবে সনাতন কৃষির বদলে বর্তমানের কৃষি অনেকটাই আধুনিক। কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। কিন্তু কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে রাসায়নিক কীটনাশক ও সারের ব্যবহার নিরাপদ ফসল উৎপাদনে প্রধান বাঁধার সৃষ্টি করছে।
অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বাবহারের ফলে তা ফসলের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। ফলে ক্যানসার সহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধির প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। এছাড়া এদেশের ফসল রপ্তানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও উৎপাদিত ফসলে অতরিক্ত পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সুস্থ্য সবল অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী জাতি গঠন করতে হলে নিরাপদ উপায়ে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে জোর দিতে হবে।
সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য রাসায়নিক সারের ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এছাড়াও পোকামাকড় দমন ও রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য নানারকম বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়। উপযুক্ত বালাইনাশক সঠিক মাত্রায় যথাযথ ব্যবহার না করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে ফসল আর নিরাপদ থাকছে না। অনিরাপদ ফসল পুষ্টির পরিবর্তে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ ছড়াচ্ছে এবং দেশের বাইরে রপ্তানি ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করছে। তাই পরিমিত মাত্রায় সার ও বালাইনাশক প্রয়োগে সচেতনতা বৃদ্ধি করে নিরাপদ ও রপ্তানিযোগ্য ফসল উৎপাদন করতে হবে। মানসম্মত সবজি উৎপাদনের জন্য জৈব কৃষি কার্যক্রম ত্বারান্বিত করতে হবে।
কৃষি উৎপাদনে নিরাপদ খাদ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ হলো প্রয়োগকৃত রাসায়নিকের অবশিষ্টাংশ, দূষণকারী বস্তুর উপস্থিতি, পোকামাকড়, রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব, বাহ্যিক সংক্রামক ইত্যাদি। এছাড়া খাদ্যে অন্যান্য বস্তু যথা-ভারী ধাতব বস্তু বা বিষাক্ত দ্রব্যের উপস্থিতি বিষয়ক বিপত্তি বা ঝুঁকি খাদ্য শৃঙ্খলের যে কোনো পর্যায়ে ঘটতে পারে। তাই উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের প্রত্যেক স্তরেই নিরাপদ খাদ্য সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করতে হবে।
জৈব কৃষি তথা ফেরোমন ফাঁদ, পার্চিং, আইপিএম, আইসিএম, উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কৌশলের মাধ্যমে যথাসম্ভব বালাইনাশকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। জৈব বালাইনাশক যেমন নিম, নিশিন্দা, বিষকাটালী প্রভৃতির প্রয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে।
মাটির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য জমিতে জৈবসার যেমন কম্পোস্ট সার, কেঁচোসার ইত্যাদির প্রয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবর্তিত জলবায়ুতে নিরাপদ ফসল ও শাকসবজি উৎপাদন এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার, উচ্চমূল্যের ফসল চাষ, সর্জান পদ্ধতিতে সবজি চাষ, ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ, ছাদ কৃষি, মাশরুম চাষসহ অন্যান্য কর্মসূচি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। সেচের পানি বিতরণ ও প্রয়োগ পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
এছাড়াও, কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কৃষকের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করতে হবে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ভেজাল পণ্য মনিটরিং এবং ভেজাল পণ্যের মূল উৎস খুঁজে তাৎক্ষণিক মোবাইল টিমের মাধ্যমে দণ্ড ও জরিমানার বিষয়ে জোর দিতে হবে।
নিরাপদ ও রপ্তানিযোগ্য ফুল, ফল, সবজি ও অন্যান্য ফসল চাষ বাড়ানোর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের সহজ শর্তে স্বল্পসুদে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা অথবা সরকারি পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের শহরগুলোতে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন শাকসবজি, ফল ও অন্যান্য ফসল বিক্রয়ের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা কৃষক বাজার প্রতিষ্ঠাকরতে হবে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!