About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

পাটের উচ্চ ফলনশীল জাত পরিচিতি এবং রোজেলা টি তৈরির পদ্ধতি

Please don't forget to share this article

পাট বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যময় আঁশ উৎপাদনকারী অর্থকরী ফসল। সেইসাথে পাটকে নবায়নযোগ্য পরিবেশ বান্ধব ফসলও বলা হয়। এক হেক্টর বা সাড়ে সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করলে তা তিন মাসে মোট ১৫ টন কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং ১১ টন অক্সিজেন প্রকৃতিকে দেয়। পাটের পাতা প্রতিনিয়ত জমিতে মিশে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে এবং মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখছে।

এছাড়াও, বাংলাদেশের জলবায়ু পাট চাষের জন্য এতটাই উপযোগী যে, পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম মানের পাট বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। আট থেকে দশ মিলিয়ন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।

পাটের জাত পরিচিতিঃ আঁশ ফসলের জন্য চার ধরনের পাট আছে যেমন-দেশী পাট, তোষা পাট, কেনাফ ও মেস্তা পাট। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট কতৃক উদ্ভাবিত পাট ও পাট জাতীয় ফসলের ৫৬ টি উন্নত জাত রয়েছে। যার মধ্যে দেশী পাট ২৮ টি তোষা পাট ১৯ টি, কেনাফ ৫ টি, ও মেস্তা ৪ টি। এই জাতগুলোর মধ্যে বর্তমানে ২৪ টি উন্নত জাত কৃষক পর্যায়ে প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল এবং কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় জাতগুলো এখন আমি আলোচনা করব।

দেশী পাট তোষা পাট কেনাফ মেস্তা
বিজেআরআই দেশী পাট-৫ বিজেআরআই তোষা পাট-৩ এইচসি-৯৫ এইচএস-২৪
বিজেআরআই দেশী পাট-৬ বিজেআরআই তোষা পাট-৪ (ও-৭২) বিজেআরআই কেনাফ-৩ বিজেআরআই মেস্তা পাট-২ (ভিএম-১)
বিজেআরআই দেশী পাট-৭ বিজেআরআই তোষা পাট-৫ (ও-৭৯৫) বিজেআরআই কেনাফ-৪(লাল কেনাফ) বিজেআরআই মেস্তা পাট-৩
বিজেআরআই দেশী পাট-৮ ও-৯৮৯৭ বিজেআরআইকেনাফ-৫ (ফাল্গুনী কেনাফ) বিজেআরআই মেস্তা পাট-৪ (ভিএম-২)
বিজেআরআই দেশী পাট-৯ বিজেআরআই তোষা পাট-৬ (ও-৩৮২০) এইচসি-২  
বিজেআরআই দেশী পাট-১০ বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি ১)    
সিসি-৪৫, ডি-১৫৪-২ বিজেআরআই তোষা পাট-৯ (সবুজ সোনা)    
সিভিএল-১      
বিজেআরআই দেশী পাট শাক-১      
বিজেআরআই দেশী পাট শাক-২      
বিজেআরআই দেশী পাট শাক-৩      

বিজেআরআই তোষা পাট-৯ (সবুজ সোনা) :  জাতটি সবুজ সোনা নামেও পরিচিত। এটি সম্পূর্ণ সবুজ ও চিকন পাতা বিশিষ্ট। এ জাতের পাতা সরু, লম্বাটে ও খাড়া হওয়ায় প্রতি একক জায়গায় অধিক সংখ্যক গাছ লাগানো যায়। এতে অন্য জাতের চেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়। বপনের উপযুক্ত সময় মধ্য মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিল। তবে ৩০ মার্চ-১০ এপ্রিলের মধ্যে বপন করলে আঁশের সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যায়। এটি আকালে ফুল আসা প্রতিরোধী ও আগাম কর্তন উপযোগী জাত। জীবনকাল ১০০-১১০ দিন যা অন্যান্য জাতের চেয়ে অনেক কম। জাতটিতে তুলনামূলক হলুদ মাকড় ও গোড়াপচা রোগ কম হয়। আঁশের মান ভালো ও রং উজ্জ্বল সোনালী। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.২৫ টন।

বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি ১): এ জাতের পাতা চকচকে ও লম্বা। বোটার উপরের অংশ লালচে এবং নিচের অংশ সবুজ। বপনের উপযুক্ত সময় মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ। জীবনকাল ১০০-১২০ দিন। গাছের ছালে ফাইবার বান্ডলের ঘনত্ব বেশি। এর আঁশ অধিক উজ্জ্বল ও শক্ত। বর্তমানে অন্যান্য উফসী জাতের চেয়ে ১৫-২০% বেশি ফলনশীল এই জাতটি রবি ১ নামে পরিচিত। না। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.৭২ টন।

ও-৯৮৯৭ (ফাল্গুনী তোষা): গাছ সম্পূর্ণ সবুজ, দ্রুত বর্ধনশীল ও আগাম বপনযোগ্য। পাতা ডিম্বাকৃতির লম্বাআটে। ফল সবুজ ও বীজের রং নীলাভ সবুজ। এটি উচ্চ ফলনশীল জাত। বপনের উপযুক্ত সময় ৩০ মার্চ-৩০ এপ্রিল । তবে  ফাল্গুনের শেষে পানি জমে থাকে না এমন উঁচু জমিতে চাষ করা যায় বলে একে স্থানীয়ভাবে ফাল্গুনী তোষাও বলে। হেক্টরপ্রতি বীজের হার ৫-৬ কেজি। বপনের ১৪০-১৫৫ দিনের পর গাছে ফুল আসে। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩ টন।

বিজেআরআই দেশী পাট-১০: পাতা ডিম্বাকৃতির লম্বাআটে। কান্ড ও পাতার বোটা সবুজ রঙের। দ্রুত বর্ধনশীল ও আগাম বপনযোগ্য জাত। বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ মার্চ-৩০ এপ্রিল। জীবনকাল ১০৫-১১৫ দিন। এটি অধিক লবনাক্ততা সহনশীল জাত। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩ টন। উঁচু, নিচু সব জমিতেই চাষ উপযোগী।

বিজেআরআই দেশী পাট-৯: গাছ সবুজ, পাতার বোঁটার উপরিভাগ হালকা লাল। দ্রুত বর্ধনশীল ও আগাম বপনযোগ্য জাত। বপনের উপযুক্ত সময় ৩০ মার্চ-১৬ এপ্রিল। জীবনকাল ১১০-১২০ দিন। এটি কম লবনাক্ততা সহনশীল এবং মোজাইক রোগ প্রতিরোধী জাত। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩ টন। বাংলাদেশের উঁচু, নিচু সব জমিতেই চাষ করা যায়। আঁশ তুলনামূলক সাদা ও কম কাটিংযুক্ত ভালো মানের।

বিজেআরআই দেশী পাট শাক-১, ২, ৩: এই জাতগুলো  শাক হিসেবে খাওয়ার উপযোগী এবং এদের পাতা মিষ্টি স্বাদযুক্ত। গাছ খুবই খাটো হওয়ায় আঁশ পাওয়া যায় না। সব জায়গায় চাষ করা যায়। বীজ বপনের মাত্র ২৫-৩৫ দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয়। এ জাতগুলো ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে আগস্ট পর্যন্ত চাষ করা যায়। বিজেআরআই দেশী পাট শাক-২ এর গাছে ক্যানোপি কম থাকায় অল্প জায়গায় অনেক গাছ থাকতে পারে।

বিজেআরআই কেনাফ-৪: এই জাতটির প্রচলিত নাম লাল কেনাফ। এর কান্ড লাল, পাতার রঙ খয়েরী সবুজ এবং বোঁটার উপরিভাগ লাল। বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ মার্চ-১৫ মে। এটি খরা ও জলাবদ্ধতা সহনশীল জাত। কেনাফের অন্যান্য জাতের চেয়ে এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। আঁশের মান ভালো ও মাখন সাদা। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.৩ টন।

বিজেআরআই কেনাফ-৫: এর চলতি নাম (ফাল্গুনী কেনাফ) । এর কান্ড লালচে সবুজ, বোঁটা এবং পত্রফলক সবুজ। কান্ড ও পাতায় কাটা ও শুং তুলনামূলক কম। এটি জলাবদ্ধতা সহনশীল এবং চরাঞ্চল ও উপকূলীয় অঞ্চলের চাষ উপযোগী জাত। এ জাতটি ছাতরা পোকার এবং কাণ্ড ও গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধী। এর আঁশের মান ভালো এবং অধিক ফলনশীল।

বিজেআরআই মেস্তা পাট-২ (ভিএম-১) ও ৪ (ভিএম-১): এই জাত দুটোর পাতা ও ফলের বৃতি টক ও সুস্বাদু। ফলটি টক হওয়ায় স্থানীয়ভাবে একে চুকাই, চুকুর, মেস্তা বা টক ফল বলা হয়। বিজেআরআই মেস্তা পাট-৪ এর ফলগুলো সুচালো ও লালচে সবুজ রঙের হয় এবং বিজেআরআই মেস্তা পাট-২ এর ফলগুলো সুচালো ও গাঢ় লাল হয়ে থাকে। দুটো জাতেরই গাছ খর্বাকৃতি, ঝোপালো এবং পাতার সংখ্যা বেশি। পাতা শাক হিসেবে এবং ফলগুলো চা, জ্যাম, জেলী, জুস, আচার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ এপ্রিল-৩০ জুন (পাতার জন্য) এবং জুলাই –সেপ্টেম্বর (বৃতির জন্য)। চারা রোপণেরে ৬০ দিন থেকে পাতা ও ফল আসার পর বৃতি সংগ্রহ করা যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়।

রোজেলা টি তৈরির পদ্ধতিঃ বিজেআরআই মেস্তা পাট-২ ও ৪ অর্থাৎ চুকুর গাছ থেকে কুঁড়ি সংগ্রহ করে বীজ ফেলে পাপড়ি পৃথক করতে হবে। পরে পাপড়িগুলো ভালোভাবে ধুয়ে বয়েল করতে হবে। এরপর ড্রায়ার মেশিনে শুকিয়ে নিতে হবে। এক কাপ চা তৈরি করতে দুই-তিনটি পাপড়ি নিতে হয়। গরম পানিতে পাপড়িগুলো ছেড়ে কিছুক্ষণ পর চামচ দিয়ে নেড়ে প্রয়োজন মতো চিনি মিশিয়ে এই চা তৈরি করা যায়।

তথ্যের উৎসঃ বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট

রেশমা আফরোজ

৩৫ তম বিসিএস (কৃষি)

উপজেলা কৃষি অফিসার (এল আর)

প্রশিক্ষণ উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত