About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

নারিকেলে মাকড়ের ( Mite ) আক্রমণ ও নারিকেল ঝরে যাওয়ার প্রতিকার

Please don't forget to share this article

নারিকেলে মাকড়ের ( Mite ) আক্রমণ বর্তমানে বাংলাদেশে খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। মাকড়ের কারণে নারিকেল চাষ অনেকাংশে ব্যহত হচ্ছে। যেখানে নারিকেল বাংলাদেশের অতি পরিচিত একটি অর্থকরী ফসল। নারিকেল গাছের পাতা , ফুল, ফল, কাণ্ড, শিকড়সহ মোটামোটি প্রতিটি অংশই কোন না কোন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। অথচ এই নারিকেল গাছে সারা বছরই রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দ্বারা নানা রকমের সমস্যা দেখা যায়। এর মধ্যে নারিকেলে মাকড়ের আক্রমণ নিয়ে কিছু তথ্য নিম্নরূপঃ

নারিকেলে মাকড় ( Mite ) আক্রমণের লক্ষণঃ

  • মাকড়ের আক্রমণে কচি ডাবের খোঁসা আক্রান্ত হয়ে বাদামী রং ধারণ করে এবং কচি অবস্থায় নারিকেলের খোলের ওপর ফাটা ফাটা শুকনো বাদামী দাগ পড়ে।
  • এছাড়াও নারিকেলের বোটার কাছ থেকে খোলের উপর আঁচড়ের মতো ফাটা বাদামী দাগ পড়ে এবং এসব ফাটা জায়গা থেকে আঠালো পদার্থ বের হয়।
  • মাকড় দ্বারা আক্রান্ত নারিকেল আকারে ছোট ও শক্ত হয়ে যায়।
  • মাইটের আক্রমণে ডাব ও নারিকেলের স্বাভাবিক রং থাকে না বরং ডাবের রং বেশি গাঢ় হয়ে বির্বণ হয়ে যায়।
  • মাকড় আক্রান্ত নারিকেল পরিপক্ব হওয়ার আগেই কুঁচকে বিকৃত হয়ে ঝরে পড়ে।
  • দুই মাস বয়সের নারিকেল মাকড় দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয় এবং ছয় মাস বয়স পর্যন্ত এরা আক্রান্ত ফল হতে রস চুষে খায়।
  • নারিকেল গাছে মাকড়ের আক্রমণের মাত্রা বেশি পরিমাণে হলে গাছ নারিকেল শুন্য হয়ে যায়। ফলে এই সময় মাইট খাদ্যের সন্ধানে গাছের কচি পাতায় স্থানান্তরিত হয়।
  • সব চেয়ে বেশি মাকড় থাকে নারিকেল গাছের ৩-৪ মাস বয়সের নারিকেলে।

মাকড়ের প্রতিকারঃ নারিকেল গাছে মাকড় সাধারণত বোঁটার কাছে বৃতির নিচে লুকিয়ে থাকে। তাই  মাকড়নাশক প্রয়োগ করলে এরা সহজে মরে না। গাছে নারিকেল না থাকলে মাকড় বেঁচে থাকতে পারে না। কচি নারিকেলে এরা সংজ্ঞবদ্ধ অবস্থায় থাকে। শীত মৌসুম হলো মাকড় দমনের উপযুক্ত সময়। তাই শীতের আগে আক্রান্ত ফল গাছ থেকে নামিয়ে ধ্বংস করে গাছের মাথায় কাঁদি সংলগ্ন এলাকায় মাকড়নাশক স্প্রে করে ঝাঁকসহ মাকড় ধ্বংস করা যেতে পারে। নিম্নে ৫ টি ধাপে মাকড় দমন ব্যবস্থাপনা দেখানো হলো-

প্রথম ধাপ : শীত শুরু হওয়ার আগে আশ্বিন- কার্তিক ( মধ্য অক্টোবর- মধ্য নভেম্বর ) মাসে নারিকেল গাছের বিকৃত ২-৬ মাস বয়সের সব নারিকেল কেটে গাছতলাতেই আগুনে পুড়িয়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে। যাতে করে সেসব অবর্জনা হতে মাকড় অন্য কোন গাছে বিস্তার ঘটাতে না পারে।

দ্বিতীয় ধাপ : আশ্বিন- কার্তিক ( মধ্য অক্টোবর- মধ্য নভেম্বর ) মাসে গাছের মাথা পরিষ্কার করার পর কাঁদি সংলগ্ন স্থানে এবং আশেপাশের কচি পাতায় ( সানমেক্টিন/ভার্টিমেক/ ওমাইট/ সুমাইট/ রনভিট/একামাইট ) ইত্যাদি মাকড়নাশক  ১.৫-২.০ মিলি/লিটার হারে পানির সাথে মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

তৃতীয় ধাপ : ফাল্গুন –চৈত্র ( মধ্য ফেব্রুয়ারি- মধ্য মার্চ ) মাসে প্রথমবার বার গাছে মাকড়নাশক প্রয়োগের পর ডাবের ২ মাস হলে একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার  নারিকেল গাছে মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে।

চতুর্থ ধাপ : তৃতীয়বার চৈত্র থেকে বৈশাখ ( মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে ) মাসে স্প্রে করার আগে পরিপক্ব ডাব ও নারিকেল সংগ্রহের পরে পূর্বের মতোই একই হারে মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে।
পঞ্চম ধাপ : জ্যৈষ্ঠ- আষাঢ় ( মধ্য মে – মধ্য জুন ) মাসে চতুর্থ ধাপের মতো করে গাছগুলোতে শেষবারের মতো মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে। এভাবে ৫টি ধাপে মাকড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

নারিকেল গাছে নারিকেল ঝরে যাওয়ার প্রতিকারঃ মাকড়ের  (Mite ) কারণ ছাড়াও ছত্রাকজনিত রোগের কারণেও অনেক সময় কচি অবস্থায় নারিকেল ঝরে যায়। তাই উপরে উল্লিখিত প্রথম ও দ্বিতীয় বার নারিকেল গাছে স্প্রে করার সময় অটোস্টিন/নোইন/এমকোজেম/কম্প্যানিয়ন ২.০ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও বর্ষার আগে ও পরে প্রতি গাছে  ১০০ গ্রাম এমওপি ও ২০ গ্রাম বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে নারকেল গাছ হতে দেড়হাত বা দুই হাত দূরে গোলাকার বা রিং পদ্ধতিতে ২০-৩০ সেমি গভীর নালা করে সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিয়ে সেচ দিতে হবে।

গাছে নারিকেল ধরলেও পানি না থাকা এবং খাওয়ার অনুপযোগী হলে করণীয়ঃ

  • গাছ ও গাছের গোড়া ভালো করে পরিষ্কার করে ইটের শুড়কি গোড়ায় চারিদিকে বিছিয়ে দিয়ে তার উপর মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • বোর্দো মিক্সার ( ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম তুঁতে + ১০০ গ্রাম চুন ভালোভাবে মিশিয়ে ) গাছে স্প্রে করতে হবে।
  • গাছে ২ ডালি পচা গোবর সার, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৭৫ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম পটাশ এবং ৪০ গ্রাম বোরন সার গাছের গোঁড়া থেকে দেড়হাত বা দুই হাত দূরে গোলাকার বা রিং বেসিন পদ্ধতিতে ২০-৩০ সেমি গভীর নালা করে সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিয়ে সেচ দিতে হবে।

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত