ফল-মূল, শাকসবজি থেকে রাসায়নিক অবশিষ্টাংশ দূর করার কৌশল
বাজারের ফল-মূল, শাকসবজিতে কী পরিমাণ বালাইনাশক পাওয়া গেছে?
ফল-মূল ও ফসলের রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে ফসলকে রক্ষা করার জন্য এবং কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদনকে ধরে রাখার লক্ষ্যে কৃষক ভাইরা প্রতিনিয়তই কীটনাশক, ছত্রাকনাশক এবং আগাছানাশক ব্যবহার করছে। এসব রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের কারণে আমাদের দেহে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এছাড়া, ফসলে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের পর, বালাইনাশকের অপেক্ষমান সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই ফসল সংগ্রহ করলে ফসল বিষাক্ত রাসায়নিক বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ থেকে যেতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর কীটতত্ত্ব বিভাগের বালাইনাশক বিশ্লেষণ গবেষণাগারের প্রাপ্ত ফলাফল হতে দেখা যায়, বাজার হতে সংগৃহীত বিভিন্ন প্রকার সবজির নমুনা থেকে শতকরা ৩০- ৪০ ভাগ নমুনাতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে।
এদের মধ্যে শতকরা ১০-১২ ভাগ নমুনা থেকে প্রাপ্ত বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশের পরিমাণ সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার উপরে ছিল। তবে বাজারজাতকৃত বিভিন্ন প্রকার ফল (আম, লিচু, বরই ও পেয়ারার) নমুনাতে প্রাপ্ত বালাইনাশকের পরিমাণ শাকসবজিতে প্রাপ্ত বালাইনাশকের পরিমাণের চেয়ে অনেক কম।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদন হতে জানা যায়, বিশ্লেষণকৃত বিভিন্ন প্রকার ফলের নমুনাসমূহের মধ্যে শতকরা ৮-১০ ভাগ নমুনাতে বালাইনাশক পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে শতকরা ৩-৪ ভাগ নমুনা থেকে প্রাপ্ত বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশের পরিমাণ সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার উপরে ছিল।
ফল-মূল, শাকসবজি থেকে রাসায়নিক দূর করার কি কি কৌশল রয়েছে?
আমরা যে সমস্ত ফল-মূল বা শাকসবজি বাজার থেকে কিনে খাচ্ছি, হতে পারে সেসব ফল-মূল ও শাকসবজিতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশের পরিমাণ সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার (MRL) উপরে। কাজেই আমাদের বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ কিভাবে ফল-মূল এবং শাকসবজি হতে হ্রাস করা যায় তা অনুসরণ করা প্রয়োজন। আমরা গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ৪টি কৌশলের মাধ্যমে ফল-মূল, শাকসবজি থেকে শতকরা ৬০-৮০ ভাগ বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করতে পারি। কৌশলগুলো হলো:-
১. ফলমূল ও শাকসবজি ধৌতকরণ
২.সবজির খোসা ছড়ানো
৩.শাকসবজি রান্না করা
৪.ফলমূল ও শাকসবজি বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা
ফল-মূল, শাকসবজি থেকে রাসায়নিক দূর করার কৌশলগুলো সংক্ষেপে বলুন?
১. ফলমূল ও শাকসবজি ধৌতকরণ
গরম পানিতে ধৌত করলে ফল-মূল ও শাকসবজি হতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ ঠান্ডা পানির দ্বারা ধৌত করার চেয়ে বেশী দূর করা যায় । ধৌত করার সময় যদি ১ মিনিট হাত দিয়ে ভালভাবে ফল-মূল, শাকসবজি পরিষ্কার করা হলে (gentle rubbing) এ পদ্ধতির কার্যকারীতা আরো বৃদ্ধি পায়।
২. ফল-মূল ও সবজির খোসা ছাড়ানো
সাধারণত সবজির বাহিরের পাতা এবং ফল-মূল বাহিরের আবরনে তুলনামূলকভাবে বেশী বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ উপস্থিত থাকে। গবেষণায় দেখা যায় যে, খোসা ছাড়ানোর মাধ্যমে ৫০% বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায়। এ পদ্ধতিটি বেশী কার্যকর যেসব ফল ও সবজি খোসা ছাড়া ভক্ষণ করা হয় যেমন: শসা, কলা, পেঁপে, আম এবং লেবু জাতীয় ফল।
৩. শাকসবজি রান্না করা
এ পদ্ধতির কার্যকারীতা নির্ভর করে রান্নার সময়কাল, তাপমাত্রার পরিমাণ, খাদ্য দ্রব্যে পানি সংযোজনের পরিমাণ এবং রান্নার ধরণ (খোলা বা বন্ধ) এর উপর। সাধারণত: খোলা পদ্ধতিতে বাষ্পীভবন (Volatilization) এবং বন্ধ পদ্ধতিতে পানির সাথে রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে বিয়োজনের (Hydrolysis) মাধ্যমে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ হ্রাস পায়।
৪. ফল-মূল ও শাকসবজি বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক দ্রবনে ডুবিয়ে রাখা
i) লবণ পানির মিশ্রণে ডুবিয়ে রাখা:
গবেষণার প্রতিবেদন অনুসারে, ১ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম বা ২ চা চামচ খাবার লবণ (২% লবণ-পানির দ্রবন) মিশিয়ে ১৫ মিনিট পর্যন্ত ফল-মূল, শাকসবজি ডুবিয়ে রাখলে বালাইনাশকের ক্রিয়ার ধরনের উপর ভিত্তি করে শতকরা ৩০-৮০ ভাগ পর্যন্ত বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায়।
ii) ভিনেগার পানির মিশ্রণে ডুবিয়ে রাখা:
এক্ষেত্রে প্রথমে ৫% (শতাংশ) ভিনেগার দ্রবন তৈরী করতে হবে। এ জন্য ১ লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার সাদা ভিনেগার ঢেলে মিশিয়ে নিতে হবে। তৈরিকৃত দ্রবণে ফল-মূল ও শাকসবজি ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। অতপর, পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিলে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ ৪০-৮০ ভাগ কমে যাবে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!