বনসাই (Bonsai) তৈরির পদ্ধতি, গঠন, শ্রেনীবিভাগ এবং স্টাইলসমূহ
বনসাই (Bonsai) একটা জাপানী শব্দ। বন (Bon) অর্থ থালা জাতীয় অগভীর পাত্র এবং সাই (Sai) অর্থ গাছ। এর ইরেজী অর্থ Tree in a Tray । এর অর্থ একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ থালা জাতীয় অগভীর পাত্রে একটি বৃক্ষকে ছোট আকারে সুন্দর জীবন্ত প্রতিকৃতিকে লালন করা। এটা একটা জীবন্ত আর্ট। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর সৌন্দর্য বাড়ে।
বনসাই এর প্রথম প্রচলন হয় খৃষ্ট জন্মের অনেক আগে। ইউরোপে বনসাই চর্চা বেশি হলেও বনসাই তৈরির আদি স্থান চীন ও জাপান। দ্বাদশ শতাব্দীতে জাপানে বনসাইয়ের প্রচলন হয়। সম্প্রতি আমাদেরে দেশে বনসাই এর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। ছায়ায় বা হালকা ছায়ায় বনসাই ভালো হয়। তাই আজকাল ইউরোপে বনসাইকে Indoor Bonsai বলা হয়।
ছায়াঘরে বনসাই ভালোভাবে করা যায়। তবে
শীতকালে সরাসরি রোদ পাওয়া দরকার। তখন গাছের পাতা কমে গেলেও গাছকে রোদ খাওয়ানো
দরকার। বনসাই এর উচ্চতা ১৫-১২০ সেমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ১৫ সেমি উচ্চতার বনসাইকে
মেইম বা মিনি বনসাই বলে। কেবল থালা জাতীয় গাছ থাকলেই তাকে বনসাই বলা যাবে না। একটি
বনসাই এর মধ্যে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি থাকতে হবেঃ-
ক) গাছটি যত বয়স্ক হোক না কেন, আকারে বামন হতে হবে।
খ) শিকড়ে, কান্ডে, গুড়িতে, ছালে-বাকলে, শাখা-প্রশাখায়, পত্রে-পুষ্পে-ফলে এবং
ভঙ্গিমায় একটি প্রাচীন বৃক্ষের স্বাক্ষর বহন করবে।
গ) সব মিলিয়ে সেটি হবে প্রকৃতির বুকে বেড়ে ওঠা মহীরূহের ক্ষুদ্র সংস্করণ।
ঘ) টবের আকার, আকৃতি, রং এবং গাছটি মিলে একটি পরিপূর্ণ শিল্প হয়ে উঠবে।
ঙ) বনসাই বিশেষজ্ঞদের সৃষ্ট কিছু ব্যাকারণ বনসাই এর শরীরে থাকতে হবে।
শ্রেনীবিভাগঃ সাধারণত বনসাই এর আকার, আকৃতি, উচ্চতা. সংখ্যা ও পটের উপর
কান্ডের অবস্থান এবং শাখাপ্রশাখার বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে বনসাই এর শ্রেণীবিভাগ
করা হয়।
বনসাই কে দু’ভাগে ভাগ করা যায়ঃ-
(১) সাইকেই(Saikei)– থালা জাতীয় টবে গাছপালা পাহাড় পর্বত নদী ঝরণা ইত্যাদি
সহকারে একটি আকর্ষণীয় ভূমিরূপ তৈরি করাকে সাইকেই বলে। এটি উদ্ভিদ ও জড় পদার্থের
সমন্বয়ে করা হযে থাকে।
(২) সুইসেকি(Suiseke)– সুইসেকি হলো থালা জাতীয় টবে কেবল জড় পদার্থ দিয়ে
তৈরি ভূমিরূপ।
বনসাই স্টাইলঃ
- রীতি সিদ্ধ সোজা খাড়া ভঙ্গিমা (Formal Upright Style)- কাণ্ডের গোড়া থেকে আগা একই সরলরেখায় অবস্থান করে। একেবারে খাড়া কান্ডের শাখাপ্রশাখা কান্ডের ১/৩ ভাগ বাদ দিয়ে উৎপন্ন হবে। শাখাগুলো ডানে বামে কাণ্ডের সাথে ৯০ ডিগ্রী কোণে অবস্থান করে। যেমন- দেবদারু, জুনিপেরাস।
- রীতি বর্জিত মামুলী খাড়া ভঙ্গিমা (Informal Upright Style)- কাণ্ড এখানে কিছুটা আঁকাবাকা থাকে। এর কান্ডের নীচের দিকে বড় এবং উপরের দিকে ছোট বাঁক দেখা যায়। শাখা প্রশাখা সমেত বনসাইটি কোনাকৃতি হয়। যেমন- অশ্বথ, লেবু , পাতি নিম ইত্যাদি।
- হেলানো কান্ড (Slanting Style) – ডগা সমেত বনসাইটি ১০-৪৫০ কোন পর্যন্ত একদিকে হেলে থেকে ফরমাল আপরাইট ষ্টাইলে ৯০০ কোণে খাড়া থাকে। পুকুর ধারে এ ধরণের ষ্টাইলে গাছ দেখা যায়।
- ঝড়ের বেগে হেলানো ভঙ্গিমা (Wind wept Style) – ঝড়ের বেগে হেলে পড়া গাছের মত দেখতে হয়।
- বয়স্ক বৃক্ষের ভঙ্গিমা ( Split trunk Style) –এই ভঙ্গিমাটি বৃক্ষের বয়সের ফলে সৃষ্টি হয়। খুব পুরানো বয়স্ক পর্ণমোচী বৃক্ষের কান্ড ফাঁপা হয়ে যায় এবং অরেক সময় ফেটে চ্যালা হয়, এতে অনেক পশুপাখী আশ্রয় নেয়, চিরহরিৎ ব্যক্তবীজি বৃক্ষের এই অবস্থার এটি একটি শৈল্পিক রূপ।
- কাষ্ঠল কান্ডযুক্ত জ্বরাগ্রস্ত- বৃক্ষের ভঙ্গিমা ( Drift wood Style) – পরিণত অবস্থায় বৃক্ষের চাল সরে গেলে হুবুহু প্রকৃতিতে জ্বরাগ্রস্ত- বৃক্ষের চেহারা নেয়। গুঁড়িযুক্ত বনসাই ক্যাসকেড (Cascade)। এই স্টাইলে গভীর টব ব্যবহৃত হয়। গোড়ার কাণ্ড হতে টব বেশ উঁচুতে উঠে জলপ্রপাতের মত নিচুতে টবের নিচে নেমে আসে।
- সেমি কাসকেড (Semi Cascade) – ক্যাসকেডের মতই,তবে আগা সাধারনত টবের উপরের মাটির লেভেল থেকে নিচে যায়না।
- জোড় কাণ্ড (Twin Trunk) – দুটো কাণ্ডের একই শিকড় থাকে। একটি কাণ্ড অন্যটির চেয়ে ডাবল মোটা হবে এবং সেটা লম্বায়ও অন্যটির ডাবল হবে।
- বনবীথি (Group Style Yose-se) – এ স্টাইলে ৩-৯ টি বা বিজোড় সংখ্যক গাছ একই টবে বসানো হয়। সবগুলো গাছ অসমান হবে এবং গাছগুলো আগে পিছে থাকবে।
- কাণ্ড পেচানো (Twisted Trunk) – এতে কাণ্ডগুলো পরস্পর পেচানো থাকে।
- ক্রমাগত জোরে বায়ু বইতে থাকলে গাছগুলোকে যেমন একদিকে হেলে থাকতে দেখা যায় ঠিক তেমন ভঙ্গিমা।
- শিলাশ্রয়ী ভঙ্গিমা (Clasped to Stone Style) – এই ভঙ্গিমায় একাধিক গাছ একটি অমসৃণ টিলা সদৃশ পাথরের গহবরে অবসি’ত হবে। গাছগুলোর শিকড় গহবরের মধ্যেই থাকে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!