ব্রি হাইব্রিড ধান ৫ এর বৈশিষ্ট্য ও চাষাবাদ পদ্ধতি (বোরো ধানের নতুন জাত)
ব্রি হাইব্রিড ধান ৫ হলো ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কতৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের বোরো ধান। পিতৃ মাতৃ সারি দেশীয় ভাবে উদ্ভাবিত বিধায় জাতটির রোগ প্রতিরোধ ও বৈরী পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা বেশি।
জাতের বৈশিষ্ট্যঃ
- এই জাতের ধান গাছের কাণ্ড শক্ত বিধায় ঢলে পড়ে না।
- পূর্ণ বয়স্ক গাছের উচ্চতা ১০৫-১১০ সেমি হয়ে থাকে।
- গাছের গোড়া খয়েরী রঙের এবং দানায় কাঁচা অবস্থায় লাল বর্ণের টিপ বিদ্যমান।
- স্বাভাবিক অবস্থায় গাছ প্রতি গুছির সংখ্যা ১২-১৫ টি।
- দানার আকৃতি সরু ও লম্বা।
- চালে প্রোটিনের অংশ ৯% এবং ভাত ঝরঝরে।
- চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৩.৪%।
- উভয় মৌসুমে জাতটির বীজ উৎপাদন সম্ভব এবং লাভজনক। আমন ও বোরো মৌসুমে পিতৃ ও মাতৃ সারির জীবনকালের পার্থক্য যথাক্রমে ৮ দিন ও ১৪ দিন।
- আমন মৌসুমে বীজ উৎপাদনে হেক্টর প্রতি ফলন ১.৫-২.০ টন এবং বোরো মৌসুমে ২.৫- ২.৮ টন।
জীবনকালঃ ব্রি হাইব্রিড ধান ৫ এর গড় জীবনকাল ১৪৪ দিন।
ফলনঃ এ জাতের গড় ফলন ৮.৫-৯.০ টন/ হেক্টর।
চাষাবাদ পদ্ধতিঃ
বীজতলায় বীজ বপনঃ বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ ১ থেকে ৩০ অগ্রহায়ণ।
চারা রোপণঃ ১-৩০ পৌষ ( ১৫ ডিসেম্বর- ১৫ জানুয়ারি )
বীজের হারঃ ১৫ কেজি/ হেক্টর
চারার বয়স ও রোপণ দূরত্বঃ এ জাতের ধানের ক্ষেত্রে ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা ২০X ১৫ সেমি দূরে দূরে রোপণ করতে হবে।
প্রটি গোছায় চারার সংখ্যাঃ প্রতি গোছায় ১-২ টি করে চারা রোপণ করতে হবে।
পুনঃরোপণ (Gap filling)ঃ চারা লাগানোর ৫-৭ দিনের মধ্যে মরা গুছির জায়গায় পুনঃরোপণ (Gap filling ) করতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ ( কেজি/বিঘা ) নিম্নে বর্ণিত সারের পরিমাণ অনুযায়ী জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম | সারের পরিমাণ |
ইউরিয়া | ৩৬ |
টিএসপি | ১৭ |
এমওপি | ১৬ |
জিপসাম | ৯ |
জিংক সালফেট ( দস্তা ) | ১ |
শেষ চাষের সময় সবটুকু টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও ২/৩ এমওপি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার সমান ৩ কিস্তিতে যথা- চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর ১ম কিস্তি, ৩০-৩৫ দিন পর ২য় কিস্তি এবং ৫০-৫৫ দিন পর ৩য় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ১/৩ এমওপি ২য় কিস্তি ইউরিয়ার সাথে প্রয়োগ করতে হবে।
আগাছা দমনঃ আগাছা দমনে আগাছানাশক ব্যবহার করলে প্রথম কিস্তির ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সাথে অনুমোদিত আগাছানাশক সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। ক্ষেতে সেচ দিয়ে পানি ১০-১৫ দিন বেঁধে রাখতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ সার উপরি প্রয়োগের পূর্বে জমি ২-৩ বার শুকনা দিতে পারলে অধিক কুশি পাওয়া সম্ভব। থোর থেকে দুধ আসা পর্যন্ত জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে। জমিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ প্রদান করতে হবে।
রোগ বালাই দমনঃ পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দমন করতে হবে। তবে রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ যদি বেশি পরিমাণে হয় তাহলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!