ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন। ভাসমান ধাপে ফসল চাষের সুবিধা
ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে শাক-সবজি ফসল উৎপাদনের নতুন একটি কৌশল। বাংলাদেশে শীতকালে বেশি শাক-সবজি উৎপাদিত হয়। বর্ষার সময় দেশের বেশিরভাগ জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকার ফলে ফসল তথা সবজি আবাদ করা যায় না। তাই দেশের নীচু ও জলমগ্ন এলাকাতে ভাসমান ধাপ পদ্ধতির মাধ্যমে সহজেই শাক-সবজি উৎপাদন করা যেতে পারে।
যে সকল এলাকায় ভাসমান ধাপে ফসল উৎপাদন করা যায় সে এলাকাগুলো হলো – বরিশাল, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, গাইবান্ধা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ প্রভৃতি।এছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ জেলাগুলোর বন্যাপ্রবণ নিম্ন এলাকায় ভাসমান পদ্ধতিতে শাক-সবজি ও মসলা আবাদ করা যায়।
ধাপের আয়তনঃ প্রতিটি ছোট আকারের ধাপের দৈর্ঘ্য ২০ মিটার, প্রস্থ ২ মিটার ও উচ্চতা ১ মিটার হলে ভালো। প্রতিটি বড় আকারের ধাপের দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার, প্রস্থ ২ মিটার ও উচ্চতা ১ মিটার হওয়া উত্তম।
ভাসমান ধাপ তৈরির বিভিন্ন উপকরণঃ ভাসমান ধাপ তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে- কচুরীপানা। তাছাড়া আমন ধানের খড়, বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ যেমন- কুটিপানা, টোপাপানা, কাঁটা শ্যাওলা, সোনা শ্যাওলা, দুলালীলতা, বিন্দাললতা প্রভৃতি ব্যবহৃত হয় । এছাড়াও বাঁশ, নারকেলের ছোবড়ার গুড়া, তুষ, নৌকা প্রভৃতি প্রয়োজন।
ধাপে ফসল চাষের সময়কাল: যেসব এলাকা সারা বছর বা বছরের কিছু সময়ে জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকে এবং সেসব জলাবদ্ধ স্থানে যদি কচুরীপানা থাকে, তবে শুধুমাত্র সেই কচুরীপানা ব্যবহার করে সারা বছর ধাপ তৈরি করে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন বা সারা বছর উৎপাদিত হয় এমন সবজি ও সবজির চারা উৎপাদন করা যায়। সাধারণত মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে পার্শ্ববর্তী নদী, খাল অথবা জলাভুমি থেকে এই কচুরীপানা সংগ্রহ করা হয়। ভাসমান ধাপে সারা বছর ফসল উৎপাদন খুবই লাভজনক। যেসব এলাকায় সারা বছর জলাবদ্ধ থাকে না বা পানি থাকে না সেসব এলাকায় স্বাভাবিক নিয়মে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভাসমান ধাপে মৌসুমি সবজি চাষ করা যায়।
ভাসমান ধাপে ফসল চাষে কিছু অসুবিধার কথা মাথা রাখা ভালো। খুব বেশি স্রোতে ও গভীর পানিতে না করাই ভালো। ইঁদুর, জোঁকের আক্রমণ ও দুর্গন্ধের সৃষ্টি যাতে না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
ভাসমান ধাপে ফসল চাষের সুবিধা:
- বন্যা ও জলাবদ্ধ এলাকায় ভাসমান ধাপে সবজি ও মসলা চাষ একটি লাগসই প্রযুক্তি।
- নিচু ও পতিত জলমগ্ন অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনা যায়।
- স্থায়ী জলাবদ্ধ এলাকায় (খাল, হাওড় বা হ্রদ ) সারা বছর এ পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষ করা যায়।
- পরিবেশ বান্ধব ও জৈব পদ্ধতিতে ফসল আবাদ করা যায়।
- চাষের খরচ তুলনামুলকভাবে খুবই কম।
- সেচের প্রয়োজন পড়ে না।
- খুব কম সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করা যায়।
- পল্লীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও সহজেই পুষ্টির যোগান বাড়ানো যায়।
- দরিদ্র চাষিদের আয় বাড়ে।
- অতিরিক্ত বৃষ্টি ও মৌসুমী বন্যায় ফসলের কোনো ক্ষতি করে না।
- জলাবদ্ধ এলাকার জলজ আগাছা ও কচুরীপানার সদ্ব্যবহার হয়।
- পরিবারিক শ্রমের সদ্ব্যবহার হয়।
- মৌসুম শেষে ধাপ পচিয়ে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার উৎপাদন করা যায় যা পরবর্তী ফসল উৎপাদনের সময় কাজে লাগে।
- একই জমিতে পরিকল্পিতভাবে শাক-সবজি, মাছ ও মসলা চাষ করা যায়।
ভাসমান পদ্ধতিতে ফসল চাষের অসুবিধাঃ
- খুব বেশি পানি হলে অনেক সময় ধাপ তলিয়ে যায়।
- বেশি স্রোতে অনেক সময় ধাপ স্থানচ্যুত হইয়ে যায়।
- জোয়ারের পানি বা লবণাক্ততায় ধাপের ক্ষতি হয়।
- ধাপে ইঁদুরের উপদ্রপ বেশি হয়।
- সময়মতো মানসম্পন্ন বীজ পাওয়া যায় না।
- মাঝে মাঝে রোগ ও পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়।
- কোন কোন স্থানে প্রাথমিকভাবে বেড তৈরির সময় পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় এবং জোকের আক্রমণ বেড়ে যায়।
- আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার সম্পর্কে কৃষকের আগ্রহ কম থাকে।
জানা গেছে, পাঁচটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষি আবাদকে ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে এফএও। বাংলাদেশের ছয়টি কৃষি পদ্ধতি সম্ভাবনাময় জিআইএএইচএস সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মধ্যে ভাসমান সবজি আবাদ পদ্ধতি কৃষি ঐতিহ্য সাইট হিসেবে এফএওর স্বীকৃতি পায় ২০১৬ সালে।
ভাসমান ধাপে ফসল চাষের এলাকা ও বর্তমান অবস্থাঃ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর ও বরিশালের বানারীপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা ভাসমান পদ্ধতিটি এখন সারা দেশের উপযুক্ত বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় যেখানে জলাবদ্ধতা কিংবা পানির পর্যাপ্ততা রয়েছে, সেখানেই এ পদ্ধতির আবাদ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৭টি জেলায় এ পদ্ধতিতে ব্যাপকভাবে আবাদ হলেও শিগগিরই এ পদ্ধতিতে আবাদ কার্যক্রম ২৪টি জেলায় সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে ডিএইর। বর্তমানে এ পদ্ধতির কার্যক্রম ২২টি উপজেলায় চলমান থাকলেও আগামী বছরগুলোয় তা উন্নীত করা হবে ৪৬টি উপজেলায়।
এক পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে এরই মধ্যে রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই লেককে এ পদ্ধতিতে চাষের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যেই গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, বরিশালের অন্যান্য এলাকা ছাড়াও সুনামগঞ্জের হাওড়, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাদারীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মানিকগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও রাঙ্গামাটির লেকগুলোকে এ চাষের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ধাপে যেসব ফসল চাষ করা যায়ঃ ভাসমান সবজি উৎপাদন ব্যবস্থায় শাক-সবজি যেমন— লালশাক, পুঁইশাক, শসা, বরবটি, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা ইত্যাদি উৎপাদন করা হয়। তবে এর মাধ্যমে লাউ ও লতাজাতীয় সবজি; বিশেষ করে চিচিঙ্গা, ঝিঙা, করলা ও মিষ্টি কুমড়া বেশি উৎপাদন হচ্ছে। তবে এ প্রক্রিয়ায় নতুন করে আদা, মরিচ, টমেটো ও হলুদ চাষের পরিকল্পনা ব্যাপক ভিত্তিতে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া গবেষণার মাধ্যমে আরো নতুন নতুন ফসলকে ভাসমান চাষের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।
ভাসমান বেডে মসলা ও সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন দেশের অনেক কৃষক। উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রি করে ইতোমধ্যে অর্থ উপার্জনও করেছেন তারা। বর্তমানে ভাসমান বেড স্থাপন করা হচ্ছে কচুরিপানা দিয়ে ধাপ বানিয়ে। সেই ধাপের ওপর লালশাক, পুঁইশাক, ডাটাশাক, গিমাকলমি, ঢেঁড়শ, সীম, লতিরাজ কচু, লাউ, হলুদ প্রভৃতি সবজি চাষ করা হচ্ছে।
ধাপ তৈরির সময়কালঃ ভাসমান পদ্ধতিটি আষাঢ়-কার্তিক মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসের জন্য অত্যন্ত অর্থকরী ও লাভজনক। এসব অঞ্চলের জমিতে বছরের অগ্রহায়ণ-বৈশাখ মাস পর্যন্ত বোরো ধানের চাষ হয়। এরপর জ্যৈষ্ঠ-অগ্রহায়ণ মাস ৭-৮ মাস পর্যন্ত ৭-৮ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে এসব জমি। তাই এ সময় এখানকার মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। আষাঢ় মাসে কচুরিপানা সংগ্রহ করে স্তূপ করা হয়। জলাভূমিতে প্রথমে কচুরিপানা এবং পর্যায়ক্রমে শ্যাওলা, দুলালীলতা, টোপাপানা, কুটিপানা, কলমিলতা, জলজ লতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে ২-৩ ফুট পুরু করে ধাপ বা ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়। ধাপ দ্রুত পচানোর জন্যও সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়। এ ধাপ চাষের উপযোগী করতে ৭-১০ দিন প্রক্রিয়াধীন সময় রাখতে হয়।
ভাসমান বেড তৈরির পদ্ধতিঃ একেকটি ভাসমান ধাপ বেড কান্দি ৫০ থেকে ৬০ মিটার (১৫০ থেকে ১৮০ ফুট) লম্বা ও দেড় মিটার (৫ থেকে ৬ ফুট) প্রশস্ত এবং ১ মিটারের কাছাকাছি (২ থেকে ৩ ফুট) পুরু বা উঁচু বীজতলা ধাপ তৈরি করে তার উপর কচুরিপানা এবং পর্যায়ক্রমে শ্যাওলা, দুলালীলতা, টেপাপানা, কুটিপানা, কলমিলতা, জলজলতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া ও ক্ষুদ্রাকৃতির বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ পচিয়ে বীজতলার উপর ছড়িয়ে দেয়। সেখানেই বীজ বপন করে উৎপাদন করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির শাক আর দৌলা বা মেদা সাজানো চারা, এমনকি অল্প জীবনকাল সম্পন্ন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি। সারি সারি এসব বেড বা ধাপ জলজ বিলে অপরূপ রূপের মাধুরি ছড়িয়ে যেন নতুন এক সবুজের কারুকার্য খচিত মানচিত্র তৈরি করে।
দৌলা বা মেদাঃ ভাসমান বা ধাপ পদ্ধতিতে সরাসরি বীজ বপন সম্ভব না হওয়ায় কৃষকরা প্রতিটি বীজের জন্য এক ধরনের আধার তৈরি করেন। তারা এর নাম দিয়েছেন দৌলা বা মেদা। একমুঠো আধা পচা টেপাপানা বা ছোট কচুরিপানা, দুলালীলতা দিয়ে পেচিয়ে বলের মতো করে তার মধ্যে মধ্যে নারিকেল ছোবড়ার গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয় দৌলা। সাধারণত নারীরা দৌলা তৈরির কাজ করেন। এ দৌলার মধ্যে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে গর্ত করে বিভিন্ন সবজির অঙ্কুরিত বীজ পুঁতে মাচানে বা রাস্তার পাশে শুকনো জায়গায় রাখা হয়। এর আগে ভেজা জায়গায় বীজ অঙ্কুরিত করে নেয়া হয়। দৌলাগুলো এভাবে ৩ থেকে ৭ দিন লাইন করে রাখা হয়। ৭ থেকে ১০ দিন পর গজানো চারাগুলো ভালোভাবে বেরিয়ে আসলে ধাপে স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু হয় এবং ধাপে স্থানান্তর করেন।
ধাপ কৌশল ও যত্নঃ ধাপ তৈরির পর ধাপে জৈব উপকরণ দ্রুত পচাতে ব্যবহার করা হয় সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সার। এ ধাপ চাষের উপযোগী করতে সাত থেকে ১০ দিন প্রক্রিয়াধীন রাখতে হয়। একটি ধাপের মেয়াদকাল কম বেশি সাধারণত ৩ মাস। ধাপে অঙ্কুরিত চারা পরিপক্ব চারায় পরিণত হয় মাত্র ২০ থেকে ২২ দিনে। যে কারণে পুনরায় ব্যবহার করার জন্য ধাপগুলোর সামান্য পরিবর্তন করতে হয়। এরপর ৫ থেকে ৬ দিন পরপর ভাসমান ধাপের নিচ থেকে টেনে এনে নরম কচুরিপানার মূল বা শ্যাওলা টেনে এনে দৌলার গোড়ায় বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে দৌলাগুলো একে অপরের সাথে গায়ে গায়ে লেগে থাকে, আর জীবনের সঞ্জিবনী শক্তি পায় এখান থেকে। এ যেন পরম মমতায় উদ্ভিদের যান্ত্রিক শক্তি প্রদানের ব্যবস্থা। এরপর শুধু চারাগুলোর বেড়ে উঠার গল্প। কিন্তু এযে তরতর করে চারাগুলোর বেড়ে উঠা, এজন্য করতে হয় নিয়মিত পরিচর্যা আর যত্নআত্তি। এর মধ্যে পড়ে প্রতিদিন ধাপে হালকা করে পানি সেচ দেয়া। যাতে করে চারার গোড়া শুকিয়ে না যায়, সজীব থাকে। আর অল্প পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটানো। এভাবে মাসাধিক কাল যত্ন শেষে বিক্রির জন্য তৈরি হয়। বীজতলার মালিকরা অপেক্ষা করেণ মহাজন ফড়িয়ার জন্য।
এভাবেই বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়। একটি অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় রোপণ করার ২০-২২ দিনের মাথায় পূর্ণবয়স্ক চারায় রূপান্তরিত হয়। ১ সপ্তাহের মধ্যে কৃষক বা চারার পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান এসব চারা। জৈবসারে উৎপাদিত এসব চারার উৎপাদন খরচ পড়ে ১ থেকে দেড় টাকা। ১ হাজার চারা আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। শাকসবজি বড় হলে চাষিরা ধাপ থেকে তুলে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। পুরনো ধাপ কিনে কৃষকরা এর স্বল্প জীবনকালীন বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ করেন। তাছাড়া পানি কমে গেলে এসব ধাপ মাটির সাথে মিশে জৈবসার হিসেবে কাজে লাগে মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ায়।
আয় ব্যয়ঃ সাধারণভাবে ৫০ থেকে ৬০ মিটারের একটি সারি, দল বা ধাপ তৈরি করতে খরচ হয় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। এ ধরনের একটি ধাপ তৈরির জন্য একজন মানুষের ২৫০ টাকা মজুরি হিসেবে ৬ দিন ৮ থেকে বা ১০ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয়। ধাপের জন্য ১ হাজার টাকার কচুরিপানা, ১ হাজার টাকার দুলালীলতা, ১ হাজার টাকার টেপাপানার দরকার হয়। ধাপে একজন কৃষক একটি বেড থেকে প্রথম ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যে আয় করেন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। ধাপে ৬ ইঞ্চি দূরত্ব করে ১টি চারা স্থাপন করলে ১টি সারিতে মোট ২ হাজার ৪৫০টি চারা রোপণ করা যায়। প্রতি চারা পাইকারি ৩ টাকা বিক্রি করা হয়। পুনরায় ধাপ প্রস্তুত না করে প্রথমবার ব্যবহৃত ধাপ আবার অন্য কৃষকের কাছে বিক্রিও করে দেয়া যায় বা দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যায়। প্রথমবার ব্যবহৃত ধাপ বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়। অনেকে ধাপ পদ্ধতি হতে বছরে একর প্রতি ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ করেন। ১০০ ফুট লম্বা একটি ধাপ তৈরি এবং চারা উৎপাদনে ৫ মাসে ব্যয় হয় ১৫ হাজার টাকা। ধাপ থেকে চারা বিক্রি করা হয় ২৫ হাজার টাকা।
এসব উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার নারী শ্রমিক এ চারা উৎপাদনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। একজন ধাপ শ্রমিক প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় করেন। প্রতিদিন মহিলারা গড়ে ১ হাজার থেকে ২ হাজার দৌলা তৈরি করতে পারেন। এ কাজে একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পান। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এ পদ্ধতির চাষাবাদে তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারে না। একধাপে এক মৌসুমে চারা উৎপাদন ও বিক্রি করে একরে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ থাকে।
উৎসঃ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!