পুকুরে মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা এবং সেগুলো সমাধানের উপায়
পুকুরে মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। পানি দূষিত হয়, অক্সিজেন কমে যায়, গ্যাস সৃষ্টি হওয়াসহ নানা সমস্যার জন্য মাছের বিভিন্ন রোগ ও মড়ক দেখা যায়। ফলে মাছের উৎপাদন কমে যায়। এসব সমস্যা হওয়ার আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিলে মাছের উৎপাদন বাড়ানো যায়।
খাবি খাওয়া :অক্সিজেনের অভাবে মাছ পানিতে খাবি খায়। পানির ওপর ভেসে ওঠে। মাছকে খুব ক্লান্ত দেখায়। পানিতে সাঁতারকাটা, বাঁশ দিয়ে পানির ওপর পেটানো, হররা টেনে তলের গ্যাস বের করে দেওয়া, পুকুরে পাম্প বসিয়ে ঢেউয়ের সৃষ্টি করা। নতুন পানি সরবরাহ করেও অক্সিজেন বাড়ানো যায়। এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন ও কৃত্রিম অক্সিজেন দেওয়া যেতে পারে।
কার্বন-ডাই-অক্সাইডজনিত পানি দূষণ : পানিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে গেলে মাছের দেহে বিষক্রিয়া এবং শ্বাসকষ্ট হয়। খাবি খাওয়া প্রতিকারের মতো। তবে মাছ ছাড়ার আগে পুকুর তৈরির সময় অতিরিক্ত কাদা সরাতে হবে।
অ্যামোনিয়াজনিত সমস্যা : অ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে পানির রঙ তামাটে অথবা কালচে রঙের হয়। মাছের মজুদ ঘনত্ব কমাতে হবে। সার ও খাদ্য প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে।
নাইট্রোজেনজনিত সমস্যা : নাইট্রাইটের পরিমাণ বেড়ে গেলে মাছের দেহে অক্সিজেন সঞ্চালন বাধা প্রদান করে। বিষাক্ততার সৃষ্টি করে। এতে মাছের দেহ বাদামি রঙ ধারণ করে। মাছ খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়।
প্রতিকার : মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে ২৫০ মিলিগ্রাম/লিটার হারে লবণ দিতে হবে।
পিএইচজনিত সমস্যা : পানিতে পিএইচ বা অম্লমান কমে গেলে মাছের দেহ থেকে অনেক পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। মাছ খাদ্য কম খায়। পিএইচ বেশি হলে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায় এবং মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায়। ফলে দেহ খসখসে হয় এবং মাছ রোগাক্রান্ত হয়।
প্রতিকার : পিএইচ কম হলে চুন, ডলোমাইড বা জিপসাম ১-২ কেজি/শতাংশে প্রয়োগ করতে হবে। পিএইচ বেশি হলে পুকুরে তেঁতুল বা সাজনা গাছের ডাল তিন-চার দিন ভিজিয়ে রেখে পরে তুলে ফেলতে হবে। তেঁতুল পানিতে গুলে দেয়া যেতে পারে।
পানির ওপর সবুজ স্তর : পুকুরের পানির রঙ ঘন সবুজ হয়ে গেলে বা পানির ওপর শ্যাওলা পড়লে খাদ্য ও সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। প্রতি শতাংশে ১২-১৫ গ্রাম তুঁতে বা কপার সালফেট অনেক ভাগ করে ছোট ছোট পোটলায় বেঁধে রাখতে হবে। শতাংশপ্রতি ৮০০-১২০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে।
পানির ওপর লাল স্তর : পুকুরের পানির ওপর লাল স্তর পড়লে ধানের খড়ের বিচালি বা কলা গাছের শুকনো পাতা পেঁচিয়ে দড়ি তৈরি করে পানির ওপর দিয়ে ভাসিয়ে নিলে পরিষ্কার হয়।
পানির ঘোলাত্ব : পানি ঘোলা হলে মাছ খাদ্য কম খায়, চোখে দেখে না, প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় না, প্রজনন সমস্যা হয় ও রোগবালাই বেশি হয়। প্রতি শতাংশে ৮০-১৬০ গ্রাম ফিটকিরি দিতে হয়। পুকুর তৈরির সময় জৈবসার বেশি দিয়ে স্থায়ীভাবে ঘোলা দূর হয়। কলাপাতা ও কচুরিপানা রাখলেও ঘোলা কমে।
পানির ক্ষারত্ব : পানি ক্ষারীয় হলে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি কম হয়। মাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়। পুকুর তৈরির সময় ও পরে শতাংশ প্রতি ১-২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়াও ছাই ব্যবহার করলেও পানির ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ থাকে।
রোগবালাই : মাছের রোগবালাই প্রতিরোধের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা হলো-
♦ পুকুরের পরিবেশ ও পানির গুণাগুণ ঠিক রাখা
♦ জলজ আগাছামুক্ত রাখা
♦ পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ার ব্যবস্থা করা
♦ অনাকাঙ্ক্ষিত জলজপ্রাণি অপসারণ করা
♦ অতিরিক্ত কাদা সরানো
♦ দুই-তিন বছর পর পর পুকুর শুকানো
♦ চুন প্রয়োগ করা
♦ মাছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা
♦ প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা
♦ হররা টারা
♦ পাখি বসতে না দেওয়া
♦ জাল শোধন করে ব্যবহার করা
♦ রোগাক্রান্ত মাছ অপসারণ করা
♦ সবসময় ঢেউয়ের ব্যবস্থা করা।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!