মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ, টমেটোর প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ
মালচিং কি এবং কিভাবে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করা হয়?
‘মালচ ‘ কথার অর্থ হলো মাটি ঢেকে দেওয়া। মূলত পুরানো, শুকনো বা কাঁচা পাতা, খড়, কচুরিপানা ইত্যাদি দিয়ে মাটি ঢেকে দেওয়ার পদ্ধতিই হলো মালচিং যা আগে থেকেই আমাদের দেশে চালু ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশে প্লাস্টিক মালচিং বা মালচিং পেপার এর ব্যবহার শুরু হয়েছে, যা আধুনিক চাষাবাদের একটি উন্নত পদ্ধতি। মালচিং পেপার হলো বিশেষ এক ধরনের পলিপেপার বা পলিথিন, যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতে হলে প্রথমে জমি তৈরি করে মাটির সঙ্গে প্রয়োজন মতো সার মিশিয়ে নিয়ে বেড তৈরি করতে হবে। বেডের প্রস্থ হবে এক মিটার। এক বেড থেকে অন্য বেডের দূরত্ব হবে ৩০ সেন্টিমিটার। এরপর জমিতে তৈরি করা সবকটি বেড মালচিং পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পলিথিনের নিচে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে তাই বেডের চারপাশে পলিথিনের উপরে ভালোভাবে মাটিচাপা দিতে হবে। বেডে চারা রোপণের জন্য ১৮ ইঞ্চি দূরত্ব রাখতে হবে। চার ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দিয়ে ছিদ্র করে ওই ছিদ্রে টমেটোর চারা রোপণ করতে হবে। মালচিং পেপার কেনা ও প্রতিস্থাপন বাবদ বিঘা প্রতি জমিতে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের সুবিধা কি কি?
ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী। চাষের জমিতে প্রায় ১০-২৫ ভাগ আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা যায়। বীজ থেকে অঙ্কুরোদ্গম দ্রুত সম্পন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে অতিরিক্ত বৃষ্টি কিংবা সূর্যের আলো দুটো থেকেই ফসলকে রক্ষা করা যায়। জমিতে বা গাছের গোড়ায় আগাছা হয় না। রোগবালাই কম হওয়ায় কীটনাশক ব্যবহার কমে এসেছে। এ পদ্ধতিতে শিকড়ের কাছের স্থানে সার প্রয়োগ করায় চাষের জমিতে সার ও পানির অপচয় কমে যায়। ফলে সেচ খরচও কমবে। এভাবে, উৎপাদন খরচ কমিয়ে দ্বিগুণ লাভবান হওয়া যায়। মালচিং পদ্ধতিতে সারাবছরই টমেটো চাষ যায় এবং ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। প্লাস্টিক মালচিং এর প্রতিফলিত আলো ফলের রং ধারনে সহায়তা করে। একই মালচিং পেপার একাধিক সবজি ও ফসল চাষে ব্যবহার করা যায়।
কিভাবে টমেটোর প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ করা যায়?
প্রক্রিয়াজাতকরণ : টমেটো বিভিন্ন পণ্যে বা খাদ্য শিল্পে প্রক্রিয়াজাত করা হয় যেমন টমেটোর রস, টমেটো কেচাপ, টমেটো পেস্ট, টমেটো পিউরি এবং শুকনো টমেটো স্লাইস তৈরির মাধ্যমে।
সংরক্ষণ : পাকা টমেটো ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়। পাকা টমেটো ১০-১৩ °C (৫০-৫৫°F) এবং শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় ২-৩ সপ্তাহের জন্য হিমাগারে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আবার, টমেটো দিয়ে সস, জাম/ জেলি বানিয়েও সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়া, টমেটোর পাল্প সংরক্ষণ পদ্ধতিতেও টমেটো সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে পাকা টমেটো পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে কেটে টুকরো করে পাত্রে নিয়ে ১০-১৫ মিনিট কাঠের হাতা দিয়ে পিষে পাল্প বের করতে হয়। পরে চালনি দিয়ে ছেঁকে পাল্প থেকে বীজ ও খোসা আলাদা করে পাত্রে তাপ দিয়ে ঘন করতে হবে। আবার ১ কেজি টমেটো পাল্পে ১ গ্রাম সোডিয়াম বেনজয়েট এবং ২ গ্রাম সাইট্রিক এসিড যোগ করতে হবে। এরপর ঘন পাল্প বায়ুরোধী ও জীবাণুমুক্ত পাত্রে সংরক্ষণ করতে হয়। এভাবে সংরক্ষণ করলে ৩-৪ মাস জীবাণুমুক্ত রাখা যায়। এই সংরক্ষিত পাল্প পরবর্তিতে সকল প্রকার রান্না ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহার করা যায়।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!