মেহগনি গাছের ফল থেকে ভেষজ কীটনাশক তৈরির পদ্ধতি
মেহগনি (mahogany tree) meliaceae (নিম) গোত্রের অন্তর্গত Swietenia গণের কিছু প্রজাতি। এই প্রজাতিগুলোর মধ্যে তিনটি প্রজাতিকে বিশেষভাবে মেহগনি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। প্রজাতিগুলো হলো– Swietenia mahagoni (L.) Jacq., Swietenia macrophylla King, and Swietenia humilis Zucc।
বাংলাদেশ Swietenia mahagoni এবং Swietenia macrophylla প্রজাতি দুটির চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে Swietenia macrophylla জাতীয় গাছ বেশি দেখা যায়। এদের পাতা বেশ বড় বড় হয়ে থাকে এবং গাছগুলো প্রায় ৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
কৃষিতে ব্যাপক রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। তাই বর্তমানে রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব কীটনাশকের ব্যবহারের মাত্রা বাড়াতে হবে।
কীটনাষক হিসেবে মেহগনি ফলের ব্যবহারঃ এখানে গবেষণালব্ধ ফলাফল হতে মেহগনি ফল থেকে সংগৃহীত নির্যাস ও তেল ভেষজ কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার ও প্রয়োগ পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।
প্রথম পদ্ধতিঃ ২ থেকে ২.৫ কেজি মেহগনি ফল কুচি কুচি করে কেটে থেঁতলিয়ে মাটির চাড়িতে ১০ লিটার পানিতে ভালোভাবে ভেজাতে হবে। ৩-৪ দিন পর নির্যাসটি ব্যবহার উপযোগী হয়। নির্যাসটি কাপড়ে ছেঁকে অল্প পরিমাণ (৫০ গ্রাম) সাবান গোলা পানি অথবা ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে ফসলের ক্ষেতে স্প্রে করতে হবে।
ধান ফসলের জন্য মিশ্রণটি উপকারী। ধান ফসলের শুত্রু পোকা (মাজরা, পাতা মোড়ানো, বাদামি গাছ ফড়িং) দমনে নির্যাসটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া সবজিতেও (বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, টমেটো, শিম, বরবটি) নির্যাসটি ব্যবহার করা যায়। দ্বিতীয় বার আবার ৫ লিটার পানিতে ভিজিয়ে ৩-৪ দিন পর আর একবার ছিটানো যায়। নির্যাসের উচ্ছিষ্ট অংশ/ছোবড়া ভেষজ জৈব সার হিসেবে ধান ও সবজি বীজতলায় ব্যবহার করলে চারা উৎপাদনে পোকামাকড় কম হয়।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ মেহগনির আধাপাকা ফলের বীচি ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পরিমাণ গুঁড়া করে বা থেঁতলিয়ে তার সাথে ৫০০ গ্রাম ফলের বাকল গুঁড়া বা পাতা নিয়ে ৫ লিটার পানিতে ভালোভাবে একটি মাটির হাঁড়িতে ৪০-৪৫ মিনিট আগুনে জ্বাল দিতে হবে। জ্বালানোর সময় ৫ মিনিট পর ৫০ গ্রাম পরিমাণ কাপড় কাঁচা সাবান বা ডিটারজেন্ট, ১০ গ্রাম তুঁতে ও ৫ গ্রাম পরিমাণ সোহাগা মাটির হাঁড়ির মিশ্রণের ভেতর দিতে হবে।
একটি কাঠের বা বাঁশের কাঠি দিয়ে মিশ্রণটি নাড়তে হবে। এভাবে নির্যাস তৈরি হলে ঠাণ্ডা করে নির্যাস ৫ গুণ পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে ছেঁকে আক্রান্ত গাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে। এভাবে তৈরি নির্যাস ১-২ দিনের মধ্যে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এটি বেগুন ফসলের পোকা দমনের জন্য কার্যকারী। জাব পোকা, পাতা ছিদ্রকারী পোকা দমন এবং ছত্রাক রোগ দমনে বিশেষ উপকারী।
তৃতীয় পদ্ধতিঃ ২০০-২৫০ গ্রাম বীজ নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে ১ লিটার পানিতে ৩-৪ দিন ভিজিয়ে রেখে ছেঁকে নিয়ে আরো ৯ লিটার পানিতে মিশিয়ে নির্যাস তৈরি করে ১ চামচ জেট পাউডার মিশিয়ে ফসলের ক্ষেতে স্প্রে করা যায় (মাজরা, পাতা মোড়ানো ও বাদামি গাছ ফড়িং) দমনে কার্যকর।
গুদামজাত শস্যের জন্যঃ ২০০ গ্রাম মেহগনি ফলের বীচির গুঁড়া ১ মণ দানাজাতীয় শস্যের জন্য ব্যবহার করা যায় (রৌদ্রে ভালোভাবে বীচি শুকিয়ে গুঁড়া করতে হবে)। দানাজাতীয় শস্যের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে বায়ুশূন্য প্যাকেটে সংরক্ষণ করতে হবে।
ঔষধী গুন/উপকারিতাঃ
- ডায়াবেটিক রোগীরা রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মেহগনি ফলের বিচির ভেতরের সাদা শাঁস পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন। এতে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- মেহগনিগাছের বাকলের নির্যাস শক্তিবর্ধক এবং হজমশক্তি বাড়ায়।
- বিচি, ফল ও মূলের গুঁড়ো খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়।
- মেহগনি বীজের সাদা অংশ দিয়ে তেল তৈরি হয়। এই তেল ভেষজ কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!