হলুদ মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণসমূহ|মাজরা পোকার দমন পদ্ধতি
মাজরা পোকাঃ বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরণের মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা যায় যথা:
১.হলুদ মাজরা পোকা
২.কাল মাথা মাজরা পোকা
৩.গোলাপী মাজরা পোকা
হলুদ মাজরা পোকাঃ হলুদ মাজরা পোকা দেখতে হলুদ বর্ণের হলেও পাখার একেবারে নিচের দিকে একটি করে কালো বর্ণের স্পট বা দাগ থাকে। হলুদ মাজরা পোকার কীড়ার মাথা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। হলুদ মাজরা পোকা পাতার উপরের অংশে ডিম দেয় এবং ডিমগুলো হলুদ বর্ণের হয়। হলুদ মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর হালকা ধূসর রঙের একটা আবরণ থাকে।
একটি হলুদ মাজরা পোকার জীবনে প্রায় ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। মাজরা পোকার জীবন চক্র চারটি স্তরে বিভক্ত। ডিম, কীড়া বা লার্ভা, পুত্তলী বা পিউপা এবং পূর্ণাঙ্গ পোকা। হলুদ মাজরা পোকার জীবনকাল প্রায় ৪০ থেকে ৬০ দিন। তাপমাত্রা ও বাতাসের আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে ৪৭ থেকে ৮৬ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
এক বছরে এরা প্রায় ৫ থেকে ৬ বার বংশবিস্তার করে থাকে। মাজরা পোকার ডিম ফুটে কীড়া হতে প্রায় ৬ থেকে ৮ দিন সময় লাগে। কীড়া অবস্থায় এরা প্রায় ২৪ থেকে ৩২ দিন পর্যন্ত সময় নেয়। সময়ে সময়ে আবার প্রায় ২৮ থেকে ৫৬ দিন পর্যন্তও কীড়া বা লার্ভা অবস্থায় থাকতে পারে। পরবর্তীতে পুত্তলীতে রুপান্তরিত হয়। পুত্তলিগুলো গাছের গোড়ার দিকে অবস্থান করে। প্রায় ৬ থেকে ১২ দিন পুত্তলী অবস্থায় থেকে এরা পূর্ণাঙ্গ পোকায় রুপান্তরিত হয়। পূর্ণাঙ্গ পোকা ৭ থেকে ১০ দিন বেঁচে থাকে।
কালো মাথা মাজরা পোকাঃ কালো মাথা মাজরা পোকা বাদামী ধূসর বর্ণের হয়। কালো মাথা মাজরা পোকার কীড়ার মাথা কালচে বর্ণের হয়ে থাকে। কালোমাথা মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর মাছের আঁশের মত একটা সাদা আবরণ থাকে, যা ডিম ফোটার আগে ধীরে ধীরে গাঢ় রং ধারণ করে।
গোলাপী মাজরা পোকাঃ গোলাপী মাজরা পোকার ঘাড়ের মধ্যে কেশর থাকে। গোলাপী মাজরা পোকার কীড়ার মাথা গোলাপী বর্ণের হয়ে থাকে। গোলাপী মাজরা পোকা পাতার খোলের ভিতরের দিকে ডিম পাড়ে।
হলুদ মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণসমূহ:
১। হলুদ মাজরা পোকা পাতার উপরে ও নীচে ডিম পাড়ে ও ডিমের গাদার উপর হালকা ধূসর রঙের আবরন পড়ে এবং ডিম ফুটে কীড়া বের হয়।
২। পোকার কীড়াগুলো কান্ডের ভেতরে থেকে খাওয়া শুরু করে এবং ধীরে ধীরে গাছের ডিগ পাতার গোড়া খেয়ে কেটে ফেলে। ফলে ডিগ পাতা মারা যায়। একে ‘মরা ডিগ’ বা ‘ডেডহার্ট ’ বলে। গাছে শীষ আসার পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের ক্ষতি হলে মরা ডিগ দেখা যায় এবং ডিগ টান দিলে সহজেই উঠে আসে।
৩। শীষ আসার পর মাজরা পোকা ক্ষতি করলে সম্পূর্ন শীষ শুকিয়ে যায়। একে ‘সাদা শীষ’, ‘মরা শীষ’ বা ‘হোয়াইট হেড’ বলে। যদি ভেতরের অংশ সম্পূর্ণভাবে কেটে না দেয় তাহলে ধান গাছের আংশিক ক্ষতি হয় এবং শীষের গোড়ার দিকের কিছু ধান চিটা হয়ে যায়।
৪। মাজরা পোকার আক্রমণ হলে, কান্ডের মধ্যে কীড়া, তার খাওয়ার নিদর্শন ও মল পাওয়া যায়, অথবা কান্ডের বাইরের রং বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কীড়া বের হয়ে যাওয়ার ছিদ্র থাকে।
৫। বোরো, আউস ও আমন ধানে এই পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায়।
মাজরা পোকার দমন পদ্ধতি:
১। মাজরা পোকার ডিমের গাদা সংগ্রহ করে নষ্ট করতে হবে।
২। ক্ষেতে ডালপালা পুতেঁ দিয়ে পোকা খেকো পাখির সাহায্যে পোকার সংখ্যা কমাতে হবে।
৩। আলোক ফাঁদের সাহায্যে পোকা দমন করতে হবে।
৪। জমিতে শতকরা ১০-১৫ ভাগ মরা ডিগ অথবা শরকরা ৫ ভাগ মাদা শীষ দেখা গেলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
৫। ধানের চারা লাগানোর ১৫ দিন পর ৩০ গ্রাম / একর বা ১০ গ্রাম/ বিঘায় ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজ ০.১৫ গ্রাম/ লিটার পানিতে গুলিয়ে নিয়ে পরিমাণমত ইউরিয়া সারের সাথে মিশিয়ে সমস্ত জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।
৬। ভিরতাকোর ৪০ ডব্লিউজি কার্যকারীতা ৩-৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয় তাই শীষ আসার পর মাজরা পোকা যাতে ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য চারা লাগানোর ৪০ দিন পর ভিরতাকো একই নিয়মে ২য় বার দিতে হবে।
৭। ভিরতাকো শেষ প্রয়োগ ও ফসল তোলার মাঝে ২১ দিন ব্যবধান রাখা উচিত।
৮। তিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি একর প্রতি ৩০ গ্রাম দেওয়া যায়।
৯। এ ছাড়াও ডারসবান ২০ ইসি ( ক্লোরপাইরিফস) ১ লিটার/হেক্টর অথবা গোলা ৪৮ ইসি ১০ মিলি/ ১০ লিটার অথবা মারশাল ২০ ইসি ( কার্বোসালফান) ১.১৫ লিটার/ হেক্টর অথবা কারটাপ ( সুমিটাপ ) ১.২ গ্রাম/ লিটার সানটাপ অথবা কার্বোটাফ৫ জি (কার্বোফুরান ) ১০ কেজি/ হেক্টর অথবা রিজেন্ট (ফিপ্রোনিল ) ১০ কেজি/ হেক্টর অথবা রিলোড ১৮ এস সি ৫ মিলি/১০ লিটার অথবা কেয়ার ৫০ এস পি (কারটাপ) ২৪ গ্রাম /১০ লিটার পানিতে দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!