লিচু গাছে মুকুল থেকে ফল আসা পর্যন্ত করণীয় এবং বালাই ব্যবস্থাপনা
লিচু বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে চাষ হলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে দিনাজপুর, রংপুর, বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বেশি চাষ হয়। দিনাজপুরের সদর উপজেলার মাসিমপুরে চাষ করা হয় ‘বেদানা লিচু’ যা সুস্বাদু ও রসালো হওয়ায় দেশে ও দেশের বাইরে এর চাহিদা অনেক।
লিচু গাছে মুকুল আসা থেকে শুরু করে ফল ধরা পর্যন্ত পরিচর্যাঃ এবার আমি আপনাদের সাথে লিচু গাছে মুকুল আসার আগ থেকে ফল আসা পর্যন্ত প্রায় ৩ মাস যে ধরণের পরিচর্যা করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করব।
গাছের যথাযথ বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের জন্য সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। আপনারা অবশ্যই গাছের বয়স অনুযায়ী অর্থাৎ ১-৪, ৫-১০, ১১-২০ এবং ২০ বছর এর ঊর্ধ্বে কি পরিমাণ সার প্রয়োজন তা অনুসারে প্রয়োগ করবেন। সেক্ষেত্রে আপনারা নিকটস্থ উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তা নিতে পারেন। আমি আপমাদেরকে এখন ৫-১০ বছর বয়সের গাছের জন্য সারের প্রয়োগ মাত্রা বলব। গোবর ২০ কেজি, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম, টিএসপি ১২০০ গ্রাম , এমওপি ৮০০ গ্রাম, জিপসাম ২০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ২০ গ্রাম এবং বোরন সার ১০ গ্রাম বছরে ৩ কিস্তিতে লিচু গাছে প্রয়োগ করবেন। আপনারা ১ম কিস্তি বর্ষার শুরুতে ( ফল আহরণের পর ), ২য় কিস্তি বর্ষার শেষে (আশ্বিন- কার্তিক মাসে) এবং শেষ কিস্তি গাছে ফুল আসার পর প্রয়োগ করবেন।
মাটির ধরণ অনুসারে খরার সময় ১০-১৫ দিন পর পর নিয়মিত গাছে সেচ দিবেন। এছাড়াও গাছে মুকুল আসার আগে ১ বার, গাছে যখন ফল মটরদানার সমান হবে তখন ১ বার এবং মার্বেল আকার ধারণ করলে ১ বার মিরাকুলান প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি/ফ্লোরা প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করবেন।
আপনারা দেখবেন, লিচু গাছে ছত্রাকজনিত এ্যানথ্রাকনোজ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। যার কারণে গাছের কাণ্ড, পাতা ও ফল ক্ষত হয়ে শুকিয়ে যায় এবং কালো ও বাদামি বর্ণের হয়ে যায়। এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লিচু গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (আটোস্টিন/নোইন/এনকোজিম/ বেনডাজিম অথবা ম্যানকোজেব + কার্বেনডাজিম (কম্প্যানিয়ন/কেমামিক্স) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে গাছে ভালোভাবে স্প্রে করবেন।
আপনারা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন যে, লিচু গাছে মাইটের আক্রমণ বেশি হয়। পুর্ণ বয়স্ক ও বাচ্চা মাকড় কচি পাতায় আক্রমণ করে পাতার রস চুষে নেয়। ফলে পাতায় বাদামি রঙের মখমলের মতো এক ধরনের আবরন তৈরি হয়। পরবর্তীতে পাতা ভিতরের দিকে কুকড়িয়ে যায় এবং শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত ডালে ফুল, ফল ও নতুন পাতা হয় না। মনে রাখবেন, মাকড়ের আক্রমণ সাধারণত জুন-আগষ্ট মাসে বেশি হয়ে থাকে। আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লিচু গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে থেকেই ছত্রাকনাশকের পাশাপাশি এবামেকটিন জাতীয় মাকড়নাশক (ভার্টিমেক/ সানমেকটিন ) ১.২৫ মিলি/লিটার পানিতে বা থিওভিট/কুমুলাস ডি এফ বা রনভিট ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে ভালোভাবে স্প্রে করবেন। একইসাথে পিজিআর ( PGR ) ফ্লোরা ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছেভালোভাবে স্প্রে করবেন।
লিচু গুটি বা মটরদানার সমান হলে আপনাদের যেভাবে বললাম ঠিক সেভাবে আরেক বার কীটনাশক, ছত্রাকনাশক এবং পিজিআর ( PGR ) গাছে ভালোভাবে স্প্রে করবেন। ফলে রোগ ও পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যাবে।
এবার আপনারা ফল বৃদ্ধির সময় যে কাজটি করবেন তা হলো- জিংক সালফেট ১০ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩ সপ্তাহ পর পর গাছে স্প্রে করবেন। যার ফলে গাছে ফল ফাটা ও ফল ঝরা সমস্যা কমবে এবং ফলের আকৃতিও বড় হবে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!