লুকলুকি বা টিপাফলের পরিচিতি। লুকলুকির ওষুধি গুনাগুণ ও দাম
লুকলুকি বা টিপাফল এক ধরনের টক মিষ্টি স্বাদের দেশীয় অপ্রচলিত ফল। এই ফলটি দেখতে আঙুর ফলের মতো। এই ফলের অন্যান্য নামগুলো হলো- টিপফল, টিপটিপানি, লুকলুকি, পেলাগোটা, প্যালা, পায়েলা, ঝিটকি, পলাগোটা, টরফই, পানিয়ালা, পানি আমলা, পাইন্না, পাইন্ন্যাগুলা, বেহুই ইত্যাদি। এর ইংরেজি নাম Indian plum বা coffee plum এবং বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia jangomas বা Flacourtia cataphracta. এটি নিচুভূমি এবং পাহাড়ি এলাকার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের ‘উইলো’ পরিবারভুক্ত বৃক্ষ। এটি একটি উৎকৃষ্ট ভেষজ ফল।
যেসব এলাকায় পাওয়া যায়ঃ পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ছাড়াও চট্টগ্রামের পটিয়া, বোয়ালখালী ও চন্দনাইশের পাহাড়ি ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে এ ফলের গাছ জন্মায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজারে এই ফল সচারাচর বিক্রি হয়ে থাকে। একসময় পার্বত্যাঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর দেখা মিললেও সংরক্ষণের অভাবে ফলটি হারিয়ে যাচ্ছে।
গাছ ও ফলের বর্ণনাঃ লুকলুকির গাছ খাটো থেকে মাঝারি আকারের বৃক্ষ। উচ্চতায় ৪-৫ মিটার হয়। গাছ ও ডালপালা কাঁটাযুক্ত। কাঁটাগুলো শাখান্বিত ও যুথবদ্ধ। ডালপালাতেও কাঁটা থাকে। পাতা একক, ডিম্বাকৃতি, কিছুটা লম্বাটে। অগ্রভাগ সূঁচালো। সবুজ রঙের পাতা কিছুটা ঢেউ খেলানো থাকে। পাতার কিনারায় সামান্য খাঁজ কাটা থাকে। গাছে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে। এর ফুল ছোট, সাদাটে সবুজ থেকে বেগুনী এবং সুগন্ধী। ফুল ফোটে গুচ্ছাকারে।
ফল গোলাকার মার্বেলের মতো, খোসা পাতলা ও মসৃণ। কাচা অবস্থায় সবুজ। কাচা ফলও খাওয়া যায়। ফল পাকে জুলাই-আগস্ট মাসে। পাকা ফলের সংরক্ষণ গুণ ভালো। ফল পাকলে লালচে বেগুনী রঙের হয়। পাকা ফলের ভেতরটা বাদামী বা কালচে গোলাপী রঙের। ভেতরে ৫-৬টি খুবই ছোট বীজ থাকে। আচার বা শরবত করেও এটি খাওয়া হয়। কাঠের জন্যেও এই গাছ চাষ করা হয়।
লুককুকিতে বিদ্যমান উপাদানঃ লুকলুকি ফলে রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ আয়রন। সালফার, ক্যালসিয়াম,ফসফেট ছাড়াও ১০ ভাগ রয়েছে ভিটামিন সি। অন্যান্য উপাদানও রয়েছে সমভাবে।
লুকলুকির ওষুধি গুনাগুনঃ ওষুধি ফল হিসেবে পাইন্ন্যাগুলার বেশ কদর রয়েছে। এ ফল খেলে হজমশক্তি ও লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। হৃদরোগীদের জন্য এটি উপকারী ভেষজ ঔষধের কাজ করে। তাছাড়া এর পাতা ও ফল ডায়রিয়া রোগের প্রতিরোধক। শুকনো পাতা ব্রংকাইটিস রোগের জন্য বিশেষ উপকারী। এর শিকড় দাঁতের ব্যাথা নিরাময়ে কাজ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কারো এসিডিটির সমস্যা থাকলে তা দ্রুত দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ফলের দামঃ বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি লুকলুকি ফলের দাম ৮০-৯০ টাকা।
ফলের পোকামাকড়ঃ ‘কুইন্সল্যান্ড ফ্রুট ফ্লাই’ (Bactrocera tryoni) নামক এক প্রকার মাছির আবাস ও আশ্রয় হিসেবে এই গাছের পরিচিতি রয়েছে।
লুকলুকি বা পাইন্ন্যাগুলা পাহাড়ি অঞ্চলেই ভালো জন্মে। এখানের আবহাওয়া ও মাটি লুকলুকি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে পতিত পাহাড়গুলোতে বাণিজ্যিকভাবে পাইন্ন্যাগুলা চাষ করা গেলে ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!