লেটুস পাতার পুষ্টিগুনসমূহ এবং লেটুসের নানাবিধ ব্যবহার
লেটুস আসলে কি? কারা প্রথম লেটুস পাতার চাষ শুরু করে?
লেটুস একটি বারোমাসি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ যা পাতাযুক্ত সবজি হিসাবে চাষ করা হয়। তবে কখনো কখনো কাণ্ড ও বীজের জন্যও এর চাষ হয়ে থাকে।
প্রাচীন মিশরীয়রা আগাছা থেকে সর্বপ্রথম লেটুস আবিষ্কার করে। লেটুসের বীজ ব্যবহার করে তেল তৈরী করা হত এবং এর রসালো পাতাগুলো খাবার হিসেবে ব্যবহার করত। তেলসমৃদ্ধ বীজের কারণে এই পাতা গ্রিক এবং রোমানদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় ল্যাকটুকা, যার ইংরেজী আধুনিক নামকরণই হল ‘লেটুস’। মূলত ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা লেটুসের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে। তবে বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে লেটুসের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করে।
আপনারা চাইলে বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সারযুক্ত মাটি ভরে অনায়াসেই এটি চাষ করতে পারবেন। ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণের মধ্যকাল পর্যন্ত লেটুসের বীজ থেকে চারা তৈরি করে টবে লাগাতে পারবেন। চারা লাগানোর ৩০ দিনের মধ্যেই এর পাতা খাওয়ার উপযোগী হয়।
লেটুস পাতায় কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে যদি আমাদের জানাতেন?
সুস্বাদু ও পুষ্টিতে ভরপুর লেটুস পাতায় সোডিয়াম, পটাসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন কে, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। লেটুসপাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন আছে। লেটুস পাতায় বিদ্যমান সোডিয়াম, ভিটামিন-বি ওয়ান, বি টু শরীরের যে কোনো অঙ্গে পানি জমে যাওয়া রোধ করে। হাত-পা ফুলে যাওয়া, কিডনির পাথর, কিডনির কার্যহীনতা, মূত্রথলির ইনফেকশন ও কিডনির ব্যথায় এই পাতা উপকারী। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এই পাতা। তাই রক্তশূন্য রোগীরা এ পাতা খাবার হিসেবে রোজ খেতে পারেন। লেটুসপাতা খুশকি কমাতে সাহায্য করে। শ্যাম্পুতে লেটুসপাতার গুঁড়া ব্যবহার করা হয়। রোদে পোড়াভাব দূর করতে এ পাতা থেঁতলে ত্বকে দিলে ত্বকের উপকার হয়। গর্ভবতী নারীরা কাঁচা লেটুসপাতা খেলে মা ও শিশু উভয়ের শরীরেই রক্তের মাত্রা বাড়ে। এটি চোখের ইনফেকশনজনিত সমস্যা কমায়। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। শরীর থেকে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ যেমন- হাঁচি, কাশি, কফ, হাঁপানি ও ফুসফুসের ইনফেকশন দূরে রাখতে নিয়মিত এই পাতা খাওয়া ভালো। কাঁচা বা ভাজা লেটুসপাতার সালাদ রক্ত পরিষ্কার করে, হৃৎপিণ্ডের শিরা-উপশিরার দেয়ালে চর্বি জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। এই পাতায় ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। এছাড়া ওজন কমাতে এ পাতা দারুন সাহায্য করে।
এবার লেটুস পাতার নানাবিধ নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে যদি আমাদের জানাতেন?
বেশির ভাগ লেটুস চাষ করা হয় তার পাতার জন্য এবং কিছু কিছু তার কান্ড ও বীজের জন্য উৎপাদন করা হয়, যা তেল তৈরি করতে কাজে লাগে। বেশিরভাগ লেটুস পাতা সালাদে ব্যবহৃত হয়। এই পাতা তেল এবং ভিনেগার দিয়ে রান্না করা যায়।এর ছোট পাতা কাঁচা খওয়া যায় এবং খাবারের আগে সালাদ হিসেবেও ব্যবহার হয়। এছাড়াও অন্যান্য সবুজ শাক, সবজি, মাংস এবং পনিরের সাথেও ব্যবহার হয়ে থাকে। লেটুস পাতা স্যুপ ও স্যান্ডউইচে ব্যবহার হয়। এর ডালপালা কাঁচা এবং রান্না উভয়ই খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। লেটুস বিভিন্ন ধরনের খাবারে ব্যবহৃত হয়, যা শিমের দই, মাংস, স্যুপ ও স্টিয়ার-ফ্রাই, প্লেইন বা অন্যান্য শাকসবজিসহ বিভিন্ন খাবারেও ব্যবহৃত হয়। স্যুপ তৈরিতে প্রাথমিক উপাদান হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়। সব ধরনের সবুজ পাতার সবজিতে কিছু না কিছু আয়রন রয়েছে। তাই খাবারের সঙ্গে পছন্দমতো উপায়ে লেটুস ব্যবহার করতে পারেন।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!