About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

শসার চারা উৎপাদন ও চাষ পদ্ধতি। সার ও রোগ ব্যবস্থাপনা

Please don't forget to share this article

শসা বাংলাদেশের প্রধান ও জনপ্রিয় সবজিসমূহের মধ্যে অন্যতম। শসা প্রধানত সালাত ও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। শসার প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে ৯৬% জলীয় অংশ থাকে, ০.৬ গ্রাম আমিষ, ২.৬ গ্রাম শ্বেতসার, ১৮ মিঃ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.২ মিঃ গ্রাম লৌহ, ক্যারোটিন ৪০ মাইক্রোগ্রাম এবং ভিটামিন  সি ১০ মিঃ গ্রাম থাকে।

মাটি ও জলবায়ুঃ

শসা চাষের জন্য উর্বর দো-আঁশ মাটি উপযোগী। এছাড়া অম্লক্ষারত্ব ৫-৫-৬.৮ হওয়া  ভালো। শসা সারা বছর হলেও ২৫-৩০ সেঃ গড় তাপমাত্রায় শসা সবচেয়ে ভালো জন্মে। অধিক তাপমাত্রা, দীর্ঘ দিবস ও প্রখর রোদে বেশি পুরুষ  ফুল উৎপন্ন হয়। বিপরীত অবস্থায় স্ত্রী ফুল আগাম আসে ও বাশি স্ত্রী ফুল ফোটে।

শসার জাতঃ

বর্তমানে বাংলাদেশে বেশকিছু জাতের শসার চাষ হচ্ছে এর মধ্যে বিদেশি জাতের অধিকাংশই হাইব্রিড। বিএডিসি বারোমাসি ও পটিয়া জায়ান্ট নামের ২টি স্থানীয় জাতের শসা উৎপাদন করে থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশে কয়েকটি বেসরকারী সবজি বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই অনেকগুলো  বিশুদ্ধ জাত(op) ও হাইব্রিড (সংকর জাত) শসার জাত বাজার জাত করেছে। স্থানীয়ভাবে গ্রীন কিং, শিলা, আলাভী, বীরশ্রেষ্ঠ, শীতল, হিমেল, গ্রীন ফিল্ড, সানটং-৪, পান্ডা, ভেনাস, মাতসুরি, বাশখালী, মধুমতি, নওগা গ্রীন, লাকি-৭ ইত্যাদি জাত আমাদের দেশে চাষ করা হয়ে থাকে।

জীবন কালঃ

সাধারণত জাত ভেদে ৭৫ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত হতে পারে।

বীজ বপনের সময়ঃ 

বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শসার বীজ বপন করার জন্য উপযুক্ত সময়।

বীজের হারঃ

শসার বীজ বপনের জন্য হেক্টর প্রতি ৩-৪ কেজি বা শতক প্রতি ১২-১৫ গ্রাম বীজ লাগে।

শসার চারা উৎপাদনঃ

নার্সারী বা বীজ তলায় শসার চারা তৈরী করে জমিতে লাগানো যায়। শসার বীজ জমিতে বেড তৈরি করে বা পলিথিনের ছোট প্যাকেটে বপন করা যায়। যেভাবেই চারা উৎপাদন করা হোক না কেন আগে মাটিতে জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে। চারা লাগানোর ক্ষেত্রে আলাদাভাবে শসার চারা তৈরি করে নেওয়াই ভালো। ভালো জাতের বীজ বপনের আগে ১৫-২০ ঘণ্টা পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখলে বীজের খোসা নরম হয় ও ভালো গজায়। পলিব্যাগে, কলার খোলে বা বেড তৈরি করে চারা তৈরি করে নেওয়া যায়। প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ পুঁতে দিতে হবে।

তবে পলিব্যাগে চারা তৈরি করে নেওয়াই ভালো। পলিব্যাগে চারা তৈরির ক্ষেত্রে অর্ধেক গোবর ও অর্ধেক মাটি ৬x৮ ইঞ্চি সাইজের পলিব্যাগে ভরতে হবে। এরপর উক্ত মাটি দ্বারা পলিব্যাগ ভরতে হবে। পলিব্যাগের মাটি ভরাট করে উপরে ছাউনি দিয়ে রেখে দিতে হবে যাতে রোদ, বৃষ্টি না লাগে। মাঝে মাঝে পলিব্যাগের মধ্যে ঝাঁঝরি দিয়ে পানি সেচ দিয়ে পলিব্যাগের মাটি ভিজিয়ে জো আনতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি করে বীজ বপন করতে হবে। চারা বের হওয়ার পর গাছে ৩-৪ টি পাতা হলে প্রতি পলিব্যাগে একটি করে চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি (শতাংশ প্রতি)ঃ

সারের
নাম
মোট পরিমাণ জমি তৈরির সময় চারা রোপণের ৫-৬ দিন পূর্বে গর্তে চারা রোপণের ১০-১৫
দিন পরে
ফুল
আসার
সময়
ফল ধরার সময় ২বার (১৫ দিন পর)
 গোবর ৬০ কেজি ৩০ কেজি ২ কেজি
টিএসপি ৬০০ গ্রাম ৩০০ গ্রাম ১২ গ্রাম ৫ গ্রাম
ইউরিয়া ৭০০ গ্রাম  – ২০০ গ্রাম ২০০ গ্রাম ১০০  গ্রাম ১০০+১০০ গ্রাম

 

 এমওপি ৭০০ গ্রাম ২০০ গ্রাম ৩৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম
জিপসাম ৪০০ গ্রাম ৪০০ গ্রাম
দস্তাসার ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম  –
বোরাক্স ৪০ গ্রাম ৪০ গ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ৫০ গ্রাম ৮ গ্রাম

উল্লিখিত ছক অনুযায়ী শসা চাষের জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।

শসার চারা রোপণঃ

চারার বয়স ১৬-২০ দিন হলে পলিব্যাগ সরিয়ে মাদায় চারা রোপণ করতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি চারা থাকলে মাঠে লাগানোর ৬-৭ দিন পর অপেক্ষাকৃত দুর্বল চারাটি তুলে প্রতি মাদায় ১ টি করে চারা রাখতে হবে।

রোপণের দূরত্বঃ

সারি করে  শসার বীজ লাগানো যায়। সারি থাকে সারির দুরত্ব ১.৫ মিটার হতে হবে। প্রতি সারিতে চারা লাগাতে হবে ১.৫ মিটার পর পর।

শসা চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাশনঃ

শসা পানির প্রতি খুব সংবেদশীল। মাটিতে রস কম থাকলেই সেচ দেওয়া প্রয়োজন। তবে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগের পর সেচ দেয়া উত্তম। কেননা শসা গাছের মাটি শুকিয়ে গেলে ফুল ঝরে যায় এবং গাছ ঢলে পড়ে। আবার বর্ষাকালে ক্ষেতে পানি জমে থাকলেও শসার জন্য ক্ষতিকর। বৃষ্টি বেশি হলে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন নাই। কারণ শসা গাছে পানি জমে থাকলেই গাছের গোঁড়া পচে গাছ মরে যেতে পারে। সেজন্য নিকাশের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। তারের নেট অথবা সুতলী অথবা বাশের কঞ্চির সাহায্যে বাউনি দিতে হবে। বাউনি/মাচা নিকাশ নালার উভয় পাশের ২ বেড বরাবর ১টি দিলে চলবে।

শসার জমিতে আগাছা ও নিড়ানিঃ

শসা চাষের জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। প্রতিবার ইউরিয়া সার দেওয়ার পর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। গাছ লতানোর জন্য মাচার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ একটু বড় হলেই মাচা তৈরি করে দিতে হবে। রোগবালাই দমনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনাঃ

ডাউনি মিলডিউ শসার সবচেয়ে  ক্ষতিকর রোগ। এ রোগ হলে পাতার নিচে প্রথমে জলবসা গোল গোল দাগ পড়ে। পরে দাগগুলো শুকিয়ে বাদামি হয় ও ওপরে উঠে আসে। শেষে পুরো পাতাই শুকিয়ে ফেলে। এই রোগ হলে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। ফলের মাছি কচি শসা নষ্ট করে। ফলের মাছি পোকা নিয়ন্ত্রনের জন্য জমিতে বিষ টোপ বা সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ পাততে হবে। কৃমিজনিত  শিকড়ে গিঁট শসার একটি ক্ষতিকর রোগ। এ রোগ হলে শসা গাছ কম বাড়ে, শিকড়ে গিঁট হয়। প্রতি মাদায় ২ চা চামচ ফুরাডান ৫ জি কীটনাশক দিয়ে এই রোগ কমানো যায়।

ফসল তোলাঃ

শসার জাত ভেদে বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়।

ফলনঃ 

হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ২০ টন অর্থাৎ শতক প্রতি ৪০ থেকে ৮০ কেজি শসা তোলা যায়। খাওয়ার জন্য কচি থাকতেই সবুজ রঙের শসা তুলতে হবে।

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত