About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

স্কোয়াশের চাষ পদ্ধতি ও উৎপাদন খরচ। রোগ ও বালাই ব্যবস্থাপনা

Please don't forget to share this article

স্কোয়াশ মূলত একটি শীতকালীন সবজি। এটি বিদেশি জনপ্রিয় সবজি। দেখতে বাঙ্গির মতো লম্বা ও সবুজ। মিষ্টি কুমড়ার মতো এক ধরণের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। এটি সবুজ ও হলুদ দুই ধরনের রঙের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে নতুনভাবে এটি চাষ শুরু হয়েছে। ভারতে চাষাবাদ হচ্ছে এরকম কয়েকটি জাতের -zucchini (Cucurbita pepo) একটি জনপ্রিয় জাত।

পুষ্টিগুণ ও ব্যবহারঃ স্কোয়াশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ  আছে। এর পাতা ও কাণ্ড সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। সামার স্কোয়াশ তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে।সামার স্কোয়াশ চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব।

স্কোয়াসের জাত : বারি স্কোয়াশ-১ জাতটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কতৃক অবমুক্ত হয়েছে। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫-১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। নলাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল। গড় ফলের ওজন ১.০৫ কেজি। এ জাতের জীবনকাল ৮০-৯০ দিন। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৪৫-৫০ টন।

জলবায়ু ও মাটিঃ স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ উপযুক্ত। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই মিষ্টি কুমড়া জন্মায়। অতএব সেসব জায়গায় স্কোয়াশ চাষ করা যাবে।

স্কোয়াশ চাষের জমি তৈরিঃ

  • ভালো ফলন পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে।
  • মাটি ও জমির প্রকারভেদে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
  • শীতকালীন চাষের সময় জমিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে প্রয়োজনে জমি চাষের আগে সেচ দিয়ে নিতে হবে।

বীজ বপনের সময় : শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য ভাদ্র মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে আশ্বিন মাসে (আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ) জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা হয়।

বীজের হারঃ এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ছোট সাইজের বীজ হলে ৩০০ গ্রাম / ২৪০০-২৫০০ টি  বীজ লাগবে। বড় সাইজের বীজ হলে ৫০০ গ্রামের মতো লাগতে পারে । শতক প্রতি ১০ গ্রাম বীজ লাগতে পারে। বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানী স্কোয়াসের বীজ বাজারজাত করছে।

সবজির ওজনঃ সাধারণত স্কোয়াশের ওজন  ৭০০-৮০০ গ্রাম বা লম্বায় ৭/৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। বেশি বড় সাইজ করলে সবজি হিসাবে স্বাদ ও মান পরিবর্তন হয়ে যায় । এছাড়াও ২-৩ টি স্কোয়াশের ওজন প্রায় ১ কেজি। প্রতিটি স্কোয়াশ বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকায়।

ফুল ও ফল আসার সময়ঃ বীজ রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই গাছ বেড়ে ওঠে এবং রোপণের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হবে। বীজ লাগানো থেকে ফল তুলতে সময় লাগে দুই আড়াই মাস। ফুল ও ফল দেখতে অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো। ৫৫-৬০ দিনের ভিতর স্কোয়াশ বাজারজাত করা যায়।

সার ব্যবস্থাপনাঃ (শতাংশ প্রতি)

সারের নাম পরিমাণ
গোবর ৮০ কেজি
ইউরিয়া ৭০০ গ্রাম
টিএসপি ৭০০ গ্রাম
এমওপি ৬০০ গ্রাম
জিপসাম ৪০০ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৫০ গ্রাম
বোরাক্স ৪০ গ্রাম
দস্তা ৫০ গ্রাম
  • জমি তৈরির সময় গোবর ২০ কেজি, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম, এমওপি ২০০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৫০ গ্রাম, বোরাক্স ৪০ গ্রাম, দস্তা ৫০ গ্রাম শতাংশ প্রতি প্রয়োগ করতে হবে।
  • চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বে মাদা প্রতি গোবর ১০ কেজি, টিএসপি ৬০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৮ গ্রাম;
  • চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর মাদা প্রতি ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম এমওপি;
  • চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
  • জমিতে কেঁচোর চলাচল বেশি হলে দানাদার বিষ ব্যবহার করতে হবে জৈমি তৈরির আগে।

স্কোয়াশের বপন এবং রোপণ প্রযুক্তি:

স্কোয়াশ বীজ সরাসরি জমিতে রোপণ করা যায়। তবে ছোট আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে বা প্লাস্টিক ট্রেতে করে তা জমিতে রোপণ করলে ভালো হয়। এছাড়াও স্কোয়াশের বীজ মাদায় বপন করা যায়। প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে একটি মাদায় ২-৩ টি বীজ বপন করা হয়। বীজ বোপন বা চারা রোপণ করার সময় গাছ থেকে গাছে দুরুত্ব ১.৫ ফুট এবং একটি গাছের লাইন থেকে অন্য গাছের লাইনের দুরুত্ব হলো ৩ ফুট । বীজ প্রায় ১ ইঞ্চি গভীরে বপন করতে হবে। চারা গজানোর পর মাটি তুলে ৬-১২ ইঞ্চি উঁচু করে দিতে হবে এবং ১-২ ফুট প্রশ্বস্ত করতে হবে। বীজ বপনের ৪-৬ সপ্তাহ পরে ফল ধরা আরম্ভ হবে। স্কোয়াশ চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে রাখতে হবে। জৈব সার বলতে পুরানো পচা গোবর সার হতে পারে বা কেঁচো জৈব বা ভার্মি জৈব সার হতে পারে । বীজ বপন করার ১০-১৫ দিনের ভিতর চারা বের হয়ে গাছ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাবে।

সেচ ও নিষ্কাশন পদ্ধতিঃ

  • সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।
  • স্কোয়াশ গাছ সপ্তাহে ২ ইঞ্চি পানি শোষণ করে থাকে। তাই প্রয়োজনে সেচ প্রদান করতে হবে।
  • শীতকালীন চাষের জন্য এক মাস পর পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
  • স্কোয়াশ চাষের সময় জমিতে পানি বেশি সময় জমতে দেওয়া যাবে না।

মালচিং:

স্কোয়াশ চাষে মালচিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চারা টিকে গেলেই গোড়ার চারপাশে মালচিং করলে তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং মাটি আর্দ্রতা ধরে রাখে। বিষয়টি স্কোয়াশের ফলন আগাম ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

স্কোয়াশ চাষের সময় অন্যান্য পরিচর্যা ও করণীয়ঃ

  • চাষের সময় মাটির ঢেলা ভেঙ্গে দিতে হবে।
  • গাছের বাউনি ও অন্যান্য যত্ন করতে হবে।
  • জমিতে আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। আগাছা জন্মালে তা নিড়ানির সাহায্যে তুলে ফেলতে হবে।
  • কৃত্রিম পদ্ধতিতে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের উপর ছড়িয়ে দিলে উৎপাদন বাড়বে।
  • গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা বের হয়। এগুলোকে শোষক শাখা বলে। শোষক শাখা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও ফলন কমিয়ে দেয়। তাই এই গুলো কে ভেঙ্গে দিতে হবে ।

স্কোয়াশের রোগবালাই ও পোকামাকড়ঃ  

স্কোয়াশের মাছিপোকাঃ

ক্ষতির ধরণঃ

  • এই পোকা স্কোয়াশের কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে।
  • পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল ও ফুলের ভিতর কুরে কুরে খায় যার ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়।
  • এই পোকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
  • জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার করতে হবে।
  • মাছির আক্রমণ বেশি হলে এসিমিক্স ৫৫ ইসি ১ মিলি/লিটার অথবা পাইরাজিন ৭০ ডব্লিউ ডি জি ০.৪ গ্রাম/ লিটার অথবা টিডো ১ মিলি/লিটার অথবা নাইট্রো / সবিক্রন ১মিলি/লিটার বা ইমিটাফ ২০ এস এল ১ মিলি/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

রেড পামকিন বিটলঃ

ক্ষতির ধরণঃ

  • পামকিন বিটলের পূর্ণবয়স্কপোকা চারা গাছের পাতায় ফুটো করে এবং পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে।
  • এ পোকা ফুল ও কচি ফলেও আক্রমণ করে।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • চারা আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলে।
  • ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • চারা রক্ষার জন্য পাতায় ছাই ছিটাতে হবে।
  • চারা অবস্থায় ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারা গুলো ঢেকে রাখলে এ পোকার আক্রমন থেকে গাছ বেঁচে যায়।
  • সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলি অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলি) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে অথবা রেলোথ্রিন/ রিপকট ১ মিলি/ লিটার পানিতে ১০-১২ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে।

জাবপোকাঃ

ক্ষতির ধরণঃ

  • জাবপোকার আক্রমণে মিষ্টি কুমড়ার বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়।
  • মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় জাবপোকার বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়।
  • নিম বীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা পানি সেপ্র করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।
  • আক্রমণ বেশি হলে সবিক্রন/ টিডো/ ইমিটাফ ১মিলি/লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।

প্রয়োজনীয় সর্তকতাঃ

  • চারা বের হওয়া থেকে ৫ দিন পর পর সাদা মাছি বা জাব পোকা দমনে কমপক্ষে ভালো কোম্পানির ২/৩ টি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ ব্যবহার করুন ।
  • সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করতে হবে।
  • ওষুধ ব্যবহার করলে অবশ্যই ভালো কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।
  • ভাইরাস আক্রান্ত গাছকে কোন প্রকার ট্রিটমেন্ট না করে সরাসরি তুলে ফেলে গাছটি মাটি চাপা দিতে হবে ।

স্কোয়াশ ফসল সংগ্রহঃ

স্কোয়াশ পরিণত হলে গাছ থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত বীজ বপন বা চারা রোপণের ৩০ দিন থেকে ৪০ দিনের ভিতর গাছ থেকে ফুল এসে ফল ধরা শুরু হয়। গাছে ফল ধরার ১৫-২০ দিনের মধ্যে স্কোয়াশ সংগ্রহ করা যায়। এছাড়াও ফলের বোঁটা খয়েরী রঙ ধারণ করে ধীরে ধীরে গাছ মরতে শুরু করলে ফসল সংগ্রহ করা যায়।

ফলনঃ

হেক্টর প্রতি স্কোয়াশের গড় ফলন ৪৫-৫০ টন। জাত ভেদে সময় কম বেশি হতে পারে।

উৎপাদিত ফসলের পরিমাণঃ ১ বিঘা ( ৩৩ শতাংশ ) জমি থেকে এক মৌসুমে ২২০০ টি সামার স্কোয়াশ গাছ পাওয়া যায়। একটি গাছে গড়ে ১২-১৬ কেজি ফল হয় যায় এক বিঘা জমিতে প্রায় ২৪,০০০ কেজি । কোন কোন সময় ফলের সাইজে উপর মোট উৎপাদন কম বেশি হতে পারে। প্রতি বিঘা জমিতে স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য খরচ হয় ৯-১০ হাজার টাকা। কিন্তু ১ বিঘা জমি থাকে মুনাফা হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা।

বাজারজাতঃ স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে  বিভিন্ন সুপার শপ এর চাহিদা ব্যাপক। এ ছাড়া রেস্তোরাঁতেও স্কোয়াশ সরবরাহ করা যায়।

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত