হলুদ ক্ষেত থেকে সংগ্রহের পর বাড়িতে এনে করণীয় বিষয়বস্তু
হলুদ ক্ষেত থেকে এনে পাতা, কান্ড, শিকড়, পার্শ্ব শিকড় কেটে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে একাধিকবার ধুয়ে আলাদা করতে হবে। এরপর পরিষ্কার ছায়াযুক্ত স্থানে গাদা করে পাতা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এভাবে দু’তিন দিন হলুদ থেকে উৎপন্ন ঘাম সম্পূর্ণরূপে ঝরানো হয়। ঘাম ঝরানো শেষ হলে হলুদ সিদ্ধ করার উপযুক্ত হয়।
ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করার পদ্ধতিঃ
সিদ্ধ করাঃ লৌহ অথবা মাটির পাত্রে ফুটন্ত পানিতে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা হলুদগুলো সিদ্ধ করতে হবে (যতক্ষণ না সাদা ফেনা এবং হলুদের গন্ধযুক্ত সাদা ধোঁয়া বের হয়)। অতিরিক্ত সিদ্ধ করলে রং নষ্ট হয় এবং কম সিদ্ধ করলে হলুদ ভঙ্গুর হয়।
সিদ্ধ করার পর করনীয়ঃ সিদ্ধ হলুদগুলোকে একটি পাত্রে রেখে, ২ থেকে ৩ ইঞ্চি উপর পর্যন্ত পানি দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। এই পানিতে চুন বা সোডিয়াম কার্বোনেট বা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট মিশিয়ে অ্যালকালাইন দ্রবণ (০.০৫-১%) তৈরি করতে হবে। এখন হলুদগুলোকে পাত্র থেকে তুলে নিয়ে ২০ গ্রাম সোডিয়াম বাইসালফেট ও ২০ গ্রাম হাইড্রোক্লোরিক এসিডের জলীয় দ্রবণে ১৫ মিনিট যাবৎ ভিজিয়ে রাখার পর দ্রবণ থেকে ছেঁকে নিয়ে রোদে শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ঠিকমত সিদ্ধ হলো কিনাঃ হলুদ ঠিকমত সিদ্ধ হবে তখন, যখন আঙ্গুল দিয়ে টিপলে নরম মনে হয় এবং ভোতা কাঠের টুকরো দিয়ে ছিদ্র করা যায়।
হলুদের রং: সিদ্ধ করার ফলে রাইজোমটি (হলুদের খাবারযোগ্য অংশকে রাইজোম বলে) নরম ও আঠালো হয় এবং মেটে গন্ধ দূর হয়। এ সময় রাইজোমের মধ্যে রঙিন উপাদানগুলি সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং হলুদের কমলা-হলুদ রং সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়।
শুকানোর সময়ঃ হলুদের রং, স্বাদ ও গন্ধ ঠিক রাখার জন্য, শুকানোর সময় কমাতে হবে।
কত সময় সিদ্ধ করতে হবেঃ হলুদ কত সময় সিদ্ধ করতে হবে তা রাইজোমের আকারের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। যেমন-ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির রাইজোম সিদ্ধ হওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় নেয়। হলুদ সিদ্ধ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পার্শ্ববর্তী কন্দ এবং গুড়িকন্দ আলাদা করে সিদ্ধ করা হয়। গুড়িকন্দকে কেটে অর্ধেক করে সিদ্ধ করলে সময় কম লাগে। রাইজোমের সংখ্যার উপর সিদ্ধ করার সময় ১ থেকে ৪ অথবা ৬ ঘন্টা লাগতে পারে। সাধারণতঃ ৫০ থেকে ৭৫ কেজি রাইজোম একবারে সিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন করা উচিত। একই পানিতে কয়েকবার হলুদ সিদ্ধ করা যায়।
কতদিনের মধ্যে সিদ্ধ করতে হবেঃ মাঠ থেকে হলুদ সংগ্রহের ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সিদ্ধ করা উচিত যাতে রাইজোম নষ্ট না হয়। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশী হলে হলুদের গুণাগুণ কমে যেতে পারে।
শুকানোঃ হলুদ রাইজোমগুলিকে সিদ্ধ করার পরপরই রোদে শুকানো উচিত। সিদ্ধকৃত রাইজোমকে ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি পুরু করে মোটা বাঁশের চাটাই অথবা মেঝের উপর ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত শুকানো হয়। সন্ধ্যার পূর্বেই হলুদকে ঢেকে রাখা দরকার। চূড়ান্ত পর্যায়ে হলুদের আর্দ্রতা ৫ থেকে ১০ ভাগে এ নিয়ে আসতে হবে। হাত দিয়ে ভাঙ্গলে যদি কট্ শব্দ হয় তাহলে বোঝা যাবে হলুদ পুরোপুরি শুকিয়েছে।
মসৃণ করাঃ শুকনো হলুদ বিভিন্ন ধরনের আঘাতজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও খারাপ দেখায়। প্রচলিত পদ্ধতিতে শুকনো হলুদ চটের ব্যাগে ভরে তারপর পা দিয়ে নাড়াচাড়া করে মসৃন করা হয়, যা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। উন্নত পদ্ধতিতে ব্যারেল অথবা সীড ড্রেসার ড্রামের মধ্যে ভরে হাত বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত বেগে ঘুরাতে হবে। এরপর এই শুকনো হলুদ আরও পরিষ্কার ও মসৃণ করার জন্য পরিষ্কার পাথরের টুকরার সাথে মিশিয়ে, ড্রামে ঘুরানো হয় অথবা ঝুড়িতে রেখে বারবার নাড়ান হয়। চূড়ান্তভাবে মসৃণ করার জন্য পুণরায় বিদ্যুৎ চালিত ড্রামে হলুদ রেখে ঘুরানো হয়।
রং করাঃ একশ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে ভালো দাম পাবার জন্য হলুদে অতিরিক্ত রং হিসেবে ‘লেড ক্রোমেট’ বা ‘মিডিল ক্রোস’ নামক কৃত্রিম রং মিশিয়ে থাকে যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক। এর পরিবর্তে স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি হিসেবে ফিটকিরি ৪০ গ্রাম, হলুদগুড়া ২ কেজি, রেড়ির তেল ১৪০ গ্রাম, সোডিয়াম বাইসালফেট ৩০ গ্রাম, হাইড্রোক্লোরিক এসিড ৩০ মিলি একত্রে মিশিয়ে তাতে ১০০ কেজি মসৃণকৃত হলুদে মাখিয়ে নেয়া যেতে পারে। শুধু হলুদের গুড়া দিয়েও হলুদকে আকর্ষণীয় রং করা যায়।
বাছাইকরণঃ মাঠ থেকে সংগ্রহের পর পচা ও আধা পচা হলুদ আলাদা করতে হবে। বাকী ভাল হলুদ বীজ এবং খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।
বীজ সংরক্ষণঃ সংগৃহীত হলুদ পরিষ্কার করে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা ভাল।
ক) গর্ত খনন করে সংরক্ষণঃ উঁচু জমিতে ৪৫০ সেমি (১৫ইঞ্চি) লম্বা, ৩০০ সেমি (১০ইঞ্চি) চওড়া এবং ১৮০ সেমি (৬ইঞ্চি) গভীর গর্ত করে শুকিয়ে, গর্তের চারিপাশে খড় বিছিয়ে, থলিতে ভরে একে একে সাজিয়ে মাটির আবরণ দিয়ে ঢেকে হলুদ সংরক্ষণ করা যায়।
খ) শুকনা বালির সাহায্যে সংরক্ষণঃ এ পদ্ধতিতে প্রথমে ১-১.৫ ইঞ্চি শুকনা বালির স্তরের উপর বীজ হলুদ (৪-৫ ইঞ্চি পুরু স্তর) রেখে প্রথমে সবুজ পাতা ও পরে বালির আস্তরণ (১ ইঞ্চ) দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। বীজের পরিমাণ বেশি হলে এ পদ্ধতি অনুসরণ করে স্তরে স্তরে রাখা যেতে পারে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!