সাতকরা চাষ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি।সাতকরার গুনাগুণ ও ব্যাবহার
সাতকরা লেবু জাতীয় অপ্রধান ফল। এটি টক স্বাদযুক্ত বহুবিধ ঔষধি গুন সম্পন্ন একটি ফল। অপ্রধান হলেও সাতকরা সিলেট অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় টক জাতীয় ফল। বৃহত্তর সিলেট, চট্রগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলের জেলাসমূহে সাতকরার চাষ হয়ে থাকে। সাতকরার বাকল বা খোসা সবজি হিসেবে মাংস বা মাছের সাথে রান্না করা যায়। সাতকরার বাকল শুকিয়ে ৬-৭ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। মাঝেমধ্যে রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিলে নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। সাতকরা দিয়ে উৎকৃষ্টমানের আচার তৈরি করা যায়।
সাতকরার জাত: বারি সাতকরা-১।
জলবায়ু ও মাটি: বৃষ্টিবহুল আর্দ্র ও উঁচু পাহাড়ী অঞ্চলে সাতকরা ভালো জন্মে। দোঁআশ মাটি সাতকরার জন্য উত্তম। এটেল মাটির পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা কম হওয়ার তা সাতকরা চাষের অনুপযোগী।
বংশবিস্তার: সাতকরা সাধারণত বীজ এবং অঙ্গজ দুই ভাবেই বংশবিস্তার করে। অঙ্গজ উপায়ের মধ্যে জোড় কলম (ভিনিয়ার ও ক্লেফট গ্রাফটিং) ও কুড়ি সংযোজন (টি বাডিং) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
গর্ত তৈরি, চারা/কলম রোপণ ও পরিচর্যা: চারা রোপণের ১৫-২০ দিন আগেই উভয় দিকে ৫ থেকে ৬ মিটার দূরত্বে ৭৫ সেমি প্রস্থে, ৭৫ সেমি লম্বায় এবং ৭৫ সেমি গভীর করে গর্ত তৈরি করতে হয়। প্রতি গর্তে প্রায় ১৫ কেজি পরিমাণ পঁচা গোবর, ৩ থেকে ৫ কেজি পরিমাণ ছাই, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি এবং ২৫০ গ্রাম চুন গর্তের উপরের মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে পানি দিতে হয়। গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর গর্তের মাঝখানে ১ বছর বয়সের নির্ধারিত চারাটি সোজাভাবে লাগিয়ে গোড়ার মাটি সামান্য চেপে দিতে হয় এবং লাগানোর পরপরই খুঁটি ও পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ এবং ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস সাতকরার চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
ডাল ছাটাই: নতুন রোপণকৃত গাছে আদিজোড় হতে উৎপাদিত কুশি ভেঙে দিতে হবে। গাছটির অবকাঠামো মজবুত করার লক্ষ্যে গোড়া থেকে ১ মিটার উচু পর্যন্ত কোন ডালপালা রাখা চলবে না। এক থেকে দেড় মিটার উপরে বিভিন্ন দিকে ছড়ানো ৪-৫ টি শাখা রাখতে হবে যাতে গাছটির সুন্দর একটি কাঠামো তৈরি হয়। প্রতি বছর ফল সংগ্রহের পর মরা, পোকা মাকড় ও রোগাক্রান্ত ডাল ছাটাই করতে হবে। ডাল ছাটায়ের পর কর্তিত স্থানে অবশ্যই বোর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে।
সার প্রয়োগ:
গাছের বয়স | গোবর | ইউরিয়া | টিএসপি | এমওপি |
১-২ বছর | ৭-১০ কেজি | ১৭৫-২২৫ গ্রাম | ৮০-৯০ গ্রাম | ১৪০-১৬০ গ্রাম |
৩-৪ বছর | ১০-১৫ কেজি | ২৭০-৩০০ গ্রাম | ১৪০-১৭০ গ্রাম | ৪০০-৫০০ গ্রাম |
৫-১০ বছর | ২০-২৫ কেজি | ৪০০-৪৫০ গ্রাম | ৪০০-৪৫০ গ্রাম | ৫০০-৫৫০ গ্রাম |
১০ এর বেশি | ২৫-৩০ কেজি | ৪৫০-৫০০ গ্রাম | ৪৫০-৫০০ গ্রাম | ৬০০-৬৮০ গ্রাম |
সার একেবারে গাছের গোড়ায় না দিয়ে যত দূর পর্যন্ত ভালোভাবে গাছের ডালপালা বিস্তার লাভ করে সে এলাকায় মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। উল্লিখিত সার ৩ কিস্তিতে ফাল্গুন, মধ্য জ্যৈষ্ঠ মে ও মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য কার্তিক অক্টোবর মাসে প্রয়োগ করতে হয়।
আগাছা দমন: গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমিতে আগাছামুক্ত রাখা দরকার। বর্ষার শুরুতে ও বর্ষার শেষে হালকাভাবে কোদাল দ্বারা কুপিয়ে বা চাষ দিয়ে আগাছা দমনের ব্যবস্থা করতে হয়।
পানি সেচ ও নিষ্কাশন: বয়স্ক গাছে খরা মৌসুমে ২-৩ টি সেচ দিলে সাতকরার ফলন ও গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। গাছের গোড়ায় পানি যেন জমে না থাকে তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
সাতকরা সংরক্ষণ পদ্ধতি: সাতকরার বিশেষ ঘ্রান রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করে। তবে এর ভিতরের কোয়াগুলো ফেলে দিয়ে ফলের পুরু খোসা সবজি হিসেবে মাছ ও মাংসের সাথে রান্না করে খাওয়া হয়। খোসা দিয়ে মজাদার আচার তৈরি করা যায়। সাতকরার খোসা রোদে শুকিয়ে এবং ভাপ দিয়ে ফ্রিজে অনেক দিন/মাস সংরক্ষণ করা যায়।
সাতকরার গুনাগুণ ও ব্যাবহারঃ
- ক্যান্সার, কলন ক্যান্সার এসব প্রতিরোধে সাতকরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- বাত, শিরা-উপশিরা ব্যথায় সাতকরা উপকারী। সাতকরার খোঁসার মধ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে (শরীরের ক্ষতিকারক উপাদান ধ্বংস করে) আছে। এ ছাড়া সাতকরায় আঁশজাতীয় গুণাবলী বিদ্যমান।
- এটি সুগন্ধি হিসেবে কাজ করে। যেমন-একটি ডিপ ফ্রিজে সবুজ একটি সাতকরা একসপ্তাহ রেখে তারপর খোলা হলে পুরো কক্ষ সুগন্ধিতে ভরে যাবে। এটা যে কেউ বাসা বাড়িতে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। এর পারিফিউম গুণাবলী চমৎকার জানিয়ে এ অধ্যাপক বলেন, এটি খুবই প্রাকৃতিক। অন্য পারফিউমের মতো কৃত্রিম নয়।
- সাতকরায় এসেনশিয়াল ওয়েল বা সুগন্ধি তেল থাকে খোসার ওপর। যা সাতকরা হাতে নিলে দেখা যায়। তবে সাতকরায় অন্য সব সাইট্রাস ফলের মতো ভেতরের রসালো অংশ খাওয়া যায় না। কারণে এতে প্রচুর পরিমাণে এসিডিক ও তেতো স্বাদ থাকে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!