ব্রি ধান ৯২ এর বৈশিষ্ট্য ও চাষাবাদ পদ্ধতি ( বোরো ধানের নতুন জাত )
ব্রি ধান ৯২ হলো ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কতৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের নতুন জাত । ব্রি ধান ৯২ এর জীবনকাল ব্রি ধান ২৯ এর জীবনকালের চেয়ে ২-৩ দিন কম কিন্তু ফলন বেশি। ফলন বেশি ও জীবনকাল কম হওয়ায় যেসব এলাকায় ব্রি ধান ২৯ চাষাবাদ করা হয় সেসব এলাকাতে সহজেই ব্রি ধান ৯২ চাষ করা যাবে।
জাতের বৈশিষ্ট্যঃ
- এই জাতের ধান গাছের কাণ্ড শক্ত বিধায় ঢলে পড়ে না।
- পূর্ণ বয়স্ক গাছের উচ্চতা ১০৭ সেমি হয়ে থাকে।
- দানা লম্বা ও চিকন।
- পাতা হাললা সবুজ। ডিগপাতা খাড়া এবং ব্রি ধান ২৯ এর চেয়ে শক্ত।
- ধান পাকার সময় কাণ্ড ও পাতা সবুজ থাকে।
- এই জাতের ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩.৪ গ্রাম।
- এ ধানে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬%।
- এ জাতের জীবনকাল ব্রি ধান ২৯ এর চেয়ে ২-৩ দিন আগাম।
এ জাতের বিশেষ প্রয়োজনীয়তাঃ ব্রি ধান ৯২ তুলনামুলক কম পানিতে ব্রি ধান ২৯ এর সমান ফলন দিতে সক্ষম।
জীবনকালঃ ব্রি ধান ৯২ এর জীবনকাল ১৫৬-১৬০ দিন।
চাষাবাদ পদ্ধতিঃ এ ধানের চাষাবাদ অন্যান্য উফশী বোরো ধানের মতোই। তবে এটি সেচ নির্ভর চাষাবাদ এলাকার জন্য উপযোগী।
- বীজতলায় বীজ বপনঃ বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর অর্থাৎ ১৬ কার্তিক থেকে ৩০ কার্তিক।
- বীজতলায় বীজের পরিমাণঃ প্রতি বর্গমিটার বেডে ৮০-১০০ গ্রাম অঙ্কুরিত বীজ বেডের উপর সমানভাবে বুনে দিতে হবে। এছাড়া প্রতি হেক্টরে ২০ কেজি বীজ লাগে।
- চারার বয়স ও রোপণ দূরত্বঃ এ জাতের ধানের ক্ষেত্রে ৪০-৪৫ দিন বয়সের চারা ২০X ২০ সেমি দূরে দূরে রোপণ করতে হবে।
- চারা রোপণ ও চারার সংখ্যাঃ চারা ১৫ ই ডিসেম্বর থেকে ১৩ ই জানুয়ারি অর্থাৎ ১ পৌষ থেকে ৩০ পৌষ পর্যন্ত রোপণ করা যাবে। প্রতি গোছায় ২-৩ টি করে চারা রোপণ করতে হবে।
- সার ব্যবস্থাপনাঃ ( কেজি/বিঘা ) নিম্নে বর্ণিত সারের পরিমাণ অনুযায়ী জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম | সারের পরিমাণ |
ইউরিয়া | ৩৫-৪০ |
টিএসপি | ১২-১৪ |
এমওপি | ১৫-২০ |
জিপসাম | ১২-১৫ |
জিংক সালফেট ( দস্তা ) | ১-১.৬ |
শেষ চাষের সময় সবটুকু টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও ২/৩ এমওপি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার সমান ৩ কিস্তিতে যথা- চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর ১ম কিস্তি, ২৮-৩০ দিন পর ২য় কিস্তি এবং ৪৫-৫০ দিন পর ৩য় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ১/৩ এমওপি ২য় কিস্তি ইউরিয়ার সাথে প্রয়োগ করতে হবে।
- আগাছা দমনঃ চারা রোপণের ৪০-৪৫ দিন পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
- সেচ ব্যবস্থাপনাঃ থোর থেকে দুধ আসা পর্যন্ত জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে। জমিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ প্রদান করতে হবে।
- রোগ বালাই দমনঃ অন্যান্য প্রচলিত জাতের চেয়ে ব্রি ধান ৯২ এ রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। তবে আক্রমণ দেখা দিলে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দমন করতে হবে। রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ যদি বেশি পরিমাণে হয় তাহলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
- ধান কাটার সময়ঃ ৫ বৈশাখ থেকে ২০ বৈশাখ অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ধান কাটার উপযুক্ত সময়।
- ফলনঃ এ জাতের গড় ফলন ৮.৪ টন/ হেক্টর। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ৯.৩ টন/ হেক্টর পর্যন্ত ফলন হতে পারে।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!