থানকুনি লতা, এর ঔষধি গুনাগুণ এবং অন্যান্য ব্যবহার
থানকুনি লতা হলো এক ধরনের বর্ষজীবী লতা। অঞ্চলভেদে এটি টেয়া,মানকি, তিতুরা, থানকুনি ইত্যদি নামে পরিচিত। থানকুনির ইংরেজি নাম Indian Pennywort, বৈজ্ঞানিক নাম Centella asiatica Urban এবং পরিবার Apiaceae।
থানকুনি মাটির উপর লতা বেয়ে বেড়ায় এবং লম্বা বৃন্তের উপর গোলকার খাঁজকাটা কিনারাযুক্ত পাতা উপর দিকে মুখ করে থাকে। আয়ুর্বেদে থানকুনিকে ত্বাষ্ট্র নামে উল্লেখ করা হয়েছে। একে মুন্ডকপনী বা থুলকুড়িও বলা হয়।
বিস্তারঃ ভারত, বাংলদেশসহ গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশের আর্দ্রা এলাকায় থানকুনি ভালো হয়। বাংলাদেশের সব জেলাতেই থানকুনি দেখা যায়। সাধারণত পুকুরপাড়ে এ লতা বেশি হয়।
বংশবিস্তারঃ বসন্তকালে থানকুনি লতার ফুল আসে এবং গ্রীষ্মতকালে ফল পাকে। বীজের মাধ্যমেও অঙ্গজ জনন উভয়ভাবেই থানকুনির বংশবিস্তার হয়। প্রতিটি গিট বা node থেকে শিকড় বের হয় এবং শিকড়সহ লতা এনে আর্দ্র জমিতে রোপন করলেই থানকুনি জন্মে। তবে খেয়াল রাখবে হবে যে এটি আর্দ্র মাটি পচন্দ করলেও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বাংলাদেশের মাটি থানকুনি জন্মানোর জন্য খুবই উপযোগী হলেও নার্সারিতেও এ লতার চারা পাওয়া কঠিন। তবে গ্রামাঞ্চলে এটি সর্বত্রই পাওয়া যায়।
ঔষধি গুনাগুনঃ আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে থানকুনি রসায়ন গুণসম্পন্ন। থানকুনির প্রধান ব্যবহার আমাশয় ও অন্যান্য পেটের রোগে। যেমন-
- থানকুনি essential oil রয়েছে, তাই আমাশয় বা অন্য কোন বদহজমজনিত সমস্যায় রস ৫/৬ চামচ একটু গরম করে অথবা পাতা থেঁতো করে কাটলেটের মতো ভেজে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- থানকুনি পাতা শরীরে উপস্থিত স্পেয়োনিনস এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কোথাও কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অল্প করে থানকুনি পাতা বেঁটে লাগাতে হবে। তাহলে নিমেষে কষ্ট কমে যাবে এবং ক্ষত সেরে যাবে।
- থানকুনি চুল পড়া বন্ধ করতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রেও থানকুনির গুণ অপরিসীম।
- থানকুনি revitalizer হিসেবে কাজ করে (Chevallier, 1996) তাই থানকুনি পাতার রস ৫/৬ চামচ একটু গরম করে এক কাপ দুধের সাথে একটু চিনি মিশিয়ে খেলে দেহের লাবন্য ও ক্লান্তি ফিরে আসে।
- ভেষজউদ্ভিদ ড. আব্দুল গণি মতে থানকুনির অত্যন্ত বলকারক, রুচিবর্ধক ও হজম বৃদ্ধিকারক গুণ রয়েছে। এর পাতা বেটে ভর্তা বা ঝোল রান্না করে ভাতের সঙ্গে খেলে পেটের বিভিন্ন অসুখ, বদহজম, ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেট ব্যথা সেরে যায়। এর রস Ulcer, Eczema, Leprosy, Itching ও অন্যান্য চর্মরোগ সারাতে অত্যন্ত কর্যকর ভূমিকা পালন করে। পাতার রস বিভিন্ন চক্ষু রোগে ব্যবহার হয়।
- কাশির প্রকোপ কমাতে ২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে কাশি কমে যায়। আর যদি এক সপ্তাহ খওয়া যায়, তাহলে কাশি ভালো হয়ে যায়।
- থানকুনির Bacoside A এবং Bacoside B উপাদান মস্তিষ্কের কোষের গঠন করতে সাহায্য করে এবং রক্তসংবহন বাড়ায়।
- রক্তপাত, মাড়ি ও দাঁত ব্যথার ক্ষেত্রেও থানকুনি পাতার ব্যবহারে সুফল পাওয়া যাবে। যদি থানকুনি পাতার রস নিয়ে পানি কুলি করা হয়, দাঁতের ব্যথা অনেক কমে যাবে। একটি বড় বাটির মধ্যে থানকুনি পাতার প্রলেপ করে দিলে শরীরের ফোঁড়াতে লাগালে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
অন্যান্য
ব্যবহারঃ
থানকুনির পাতা শাক হিসেবে অনেকে রান্না করে খেয়ে থাকেন।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!