আনারসের চাষ পদ্ধতি, পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে তথ্য
আনারস কোন ধরণের জমিতে এবং কখন চাষ করা উত্তম?
আনারস চাষের জন্য উঁচু ও পানি জমে থাকে না এমন জমি বাছাই করতে হবে। মাটি হতে হবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ। জমি থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং ১ মিটার প্রশস্ত বেড তেরি করতে হবে। এক বেড থেকে অন্য বেডের মধ্যে ৫০-১০০ সেন্টিমিটার ফাঁকা রাখতে হবে।
মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রাহায়ণ পর্যন্ত আনারসের চারা লাগানোর ভালো সময়। সেচ সুবিধা থাকলে মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন পর্যন্ত আনারসের চারা লাগানো যায়। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৪০ সেন্টিমিটার।
আনারসের জাতের মধ্যে রয়েছে এমডি-২, হানিকুইন, জায়েন্টকিউ ও ঘোড়াশাল । এগুলোর মধ্যে সুপার সুইট খ্যাত এমডি-২ সবচেয়ে মিষ্টি আনারস।
সার, সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলুন?
গাছ প্রতি সার প্রয়োগের পরিমাণ হবে পচা গোবর ৩১০ গ্রাম, ইউরিয়া ৩৬ গ্রাম, টিএসপি ১৫ গ্রাম, এমওপি ৩৫ গ্রাম, জিপসাম ১৫ গ্রাম । ইউরিয়া ও পটাশ সার চারা রোপণের ৪-৫ মাস পর থেকে শুরু করে ৫ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। অন্যান্য সার বেড তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
শুকনো মৌসুমে আনারসের জমিতে সেচ দেওয়া দরকার। তাছাড়া বর্ষাকালে যাতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। চারা বেশি লম্বা হলে ৩০ সে.মি পরিমাণ রেখে অগ্র ভাগের পাতা সমান করে কেটে দিতে হবে। আগাছা আনারসের খুবই ক্ষতি করে। বছরে কমপক্ষে দুই বার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। একবার আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল সংগ্রহ করার পর ও দ্বিতীয় বার অক্টোবর-নভেম্বর মাসে।
জমিতে সেচ প্রদান এবং সার প্রয়োগের পর মালচিং করে নিলে জমি আগাছা মুক্ত থাকে। আগাছা দিয়ে মালচিং করার পর এগুলো পচে জৈব সার হিসেবে মাটিতে যুক্ত হয় এবং এতে করে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। তবে জেনে রাখা ভালো আনারসের চারা রোপণের ১৫ থেকে ১৬ মাস পর ফসল সংগ্রহ করা যায়।
কিভাবে সারা বছর আনারস উৎপাদন করা যাবে?
আনারস পরিকল্পিতভাবে চাষ করলে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে সারা বছর উৎপাদন করা যায়। হরমোন প্রয়োগের পদ্ধতি হচ্ছে, আনারসের সাকার রোপণের আট-নয় মাস বয়সের ৩০-৩২টি পাতা সম্বলিত গাছে হরমোন প্রয়োগ করতে হয়। গাছপ্রতি ৫০ মিলি ইথ্রেল দ্রবণ প্রয়োগ করতে হবে। ইথ্রেল দ্রবণ তৈরির পদ্ধতি হচ্ছে- এক লিটার পানিতে ৫০০ মিলি ইথ্রেল ভালোভাবে মিশিয়ে প্রতি গাছে ৫০ মিলি করে প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে এক লিটার দ্রবণ দিয়ে ৩০ টি গাছে প্রয়োগ করা যাবে। হরমোন প্রয়োগের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে।
আনারসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
আনারসে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম ব্রোমেলেইন যা ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং ‘সি-পাওয়া যায়। এই ফলে আছে ম্যাঙ্গানিজ নামক খনিজ উপাদান, যা দেহের শক্তি বাড়ায়। আছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন বি-১, যা শরীরের জন্য অপরিহার্য। পাশাপাশি এই ফল খেলে শরীরে খুব কম ক্যালরি সঞ্চিত হয় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এতে কোনো কোলেস্টেরলও নেই। এতে আছে পেকটিন নামক গুরুত্বপূর্ণ ডায়েটরি ফাইবার। ভিটামিন ‘বি কমপ্লেক্সের নানা উপদান যেমন ফলেট, থায়ামিন, পাইরিওফিন ও রিবোফ্লোবিনও পাওয়া যায় আনারস থেকে।
আনারস দেহের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। গয়টার অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থির স্ফীত হওয়া প্রতিরোধ করে। নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ রক্তচাপ। তাছাড়া কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। এটি ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বার্ধক্যজনিত চোখের ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে। আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!