দিশার সংগ্রামী জীবন । পর্ব-৫ । ভালোলাগার মতো গল্প
ইশান ইনায়াকে কল করে বলল আঙ্কেল-আন্টি দিশাকে সাজেকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। ইনায়া শুনাই বলে উঠলো, ওয়াও, খুবই খুশির সংবাদ।
ভাইয়া তুমি পূর্বের শর্তমতে আমাকে আর দিশাকে শপিং করার জন্য টাকা দিবে। নাকি আবার সেই কথা ভূলেই গেছ?
বুনু কি যে বলিস! ভুলে যাব কেন? মনে আছে। তোকে এখনই টাকা পাঠায় দিচ্ছি। তাহলে আমরা আগামীকাল রাতে রওনা দিচ্ছি। ঠিক আছে ভাইয়া।
পরের দিন ইনায়া ও দিশা দুজনে জিন্স ও টপ্সসহ তাদের প্রয়োজনীয় শপিং সেরে নিল। দিশা দোস্ত চল বাইরে থেকে দুপুরের খাবার সেরে বিকালে হোস্টেলে ফিরলো।
ইনায়া বলল দোস্ত গোসল সেরে লাগেজ গুছাবো। ঠিক আছে বলেই নিজের রুমে আসলো। খুবি ক্লান্ত লাগছে। গোসল সেরেই আগে একটু ঘুমাব, তারপর লাগেজ গুছাবো। যেই কথা সেই কাজ।
সন্ধ্যা ৭ টা বাজে। দিশার মার ফোনে ওর ঘুম ভাংলো এবং ঘুম ঘুম কন্ঠে মা বল। কেমন আছিস রে মা। শরীর খারাপ নাকি? অবেলাতে ঘুমাচ্ছিস? আজ না তোদের সাজেক যাওয়ার কথা!মা শপিং থেকে এসে খুবি ক্লান্ত লাগছিল তাই গুমিয়ে পড়েছিলাম। ভাগ্যিস কল দিয়েছিলে।
মামনি ব্যাগ গুছিয়েছো? না মা। ওকে লাগেজ গুছিয়ে এক মগ কফি খাবি, তারপর ডিনার সেরে রের হবি। বাসে উঠেই জানাবি।
আর শোন মা, ক্যাপ, পাওয়ার আডযাস্ট করা সান গ্লাস, ছাতা, পানির পট আর আরামদায়ক জুতা আবশ্যই সাথে নিবি। মা, আমি কি ছোট বেবি? আমার কাছে সেটাই। ওকে রাখি তাহলে।
পাহাড় ও মেঘের রাজ্য সাজেকের অপরূপ প্রকৃতিক সৌন্দর্য নয়ন জুড়ে দেখব ভাবতেই ভালো লাগছে। গতকাল রাতে ইউটিউবে দেখে বুজলাম যে, চারপাশে যতদূর দৃষ্টি যায়, ছোট-বড় সবুজ পাহাড়। উপর থেকে দৃষ্টি মেললে যেন সবুজ সমুদ্রের ঢেউ।
একটি থেকে আরেকটি পাহাড়ের মাঝে যেন আটকে আছে সাদা মেঘের ভেলা। ওয়াও, পাহাড়ে সূর্যোদয় দেখার মজাই আলাদা।
হঠাৎ মনে হলো এই ইনায়ার বাচ্চাও কি ঘোড়া বেচে ঘুমাচ্ছে! বলেই ফোন হাতে নিতেই ইশান ভাইয়ার কল আসল। ফোন ধরতেই ভাইয়া বলল, দিশা ইনায়া কি তোমার রুমে? নাতো ভাইয়া, ও কি কল ধরছে না। হু, আমি ইনায়াকে ফোনে পাচ্ছি না। তুমি একটু দেখতো। ওকে ভাইয়া।
দোস্ত তোর ফোন কোথায়? ইশান ভাইয়া তোকে পাচ্ছে না। ইশ, আমি তো ভুলেই গেছি ফোন সাইলেন্ট ও চার্জে। ওকে। দিশা তুই কি রেডি। আরে না। মাত্রই ঘুম থেকে উঠছি। আমাদের তো বেশি সময় নাই। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে খেয়ে আসি। হু বলেই দিশা নিজের রুমে আসল।বাস রাত ১০ টায়। তাই রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সবাই দিশাদের হোস্টেলের সামনে মিলিত হোলো এবং মাইশা, রত্না, তুহিন, নাহিদ, আফনান, ইশা্ন, দিশা ও ইনায়াসহ ৮ জনের টিম আরামবাগে সিএনজি করে রওনা দিল।
তারা সেন্টমার্টিন গুন্দাই এর এসি বাসে করে রাত ১০.১৫ মিনিটে ঢাকার আরামবাগ থেকে খগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। ইনায়া আর দিশা পাশাপাশি সিটে বসেছে। দিশা বাস ছাড়া মাত্রই বাসায় ফোনে ওর মাকে জানালো।
ইনায়া ও দিশা কিছুক্ষণ কথা বলার পর ঘুমিয়ে পড়লো কিন্তু ইশানের তো দুচোখে ঘুম নেই। শুধু বার বার দিশার কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।ইশান চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবলো- আমি কি দিশাকে নিয়ে একটু বেশি ভাবছি। আমি কি ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। না না, দিশাকে এটা বুঝতে দেওয়া যাবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই ইশাক ঘুমিয়ে পড়লো।ভোরে ছয়টায় ওরা খাগড়াছড়ি সদরে পৌছালো। ইশান সবাইকে বাস থেকে নিজ নিজ মালামাল নিয়ে ঠিকমত নামতে বলল।
ইশানঃ খাগড়াছড়ি সদর থেকে চাঁন্দের গাড়ি (স্থানীয় পরিবহন) করে প্রায় তিন ঘণ্টা পথ পেরিয়ে পৌছাব সাজেক। তাই চাঁন্দের গাড়ি করে যাত্রা শুরুর আগে আমরা ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে নিব।
সবাই সম্মতি জানালো। নাস্তা শেষে তারা সবাই কথা বলতে বলতে চারপাশটা একটু ঘুরে দেখল।তারপর খাগড়াছড়ি শহর থেকে চাঁন্দের গাড়িতে করে রওনা দিলাম দিঘানালার উদ্দ্যেশে। কেননা দিঘানালা থেকে সেনাবাহিনীর টহল টিম ছাড়া পর্যটকদের সাজেক যাওয়ার অনুমতি নাই। সেনাবাহিনীদের এই প্রশংসনীয় কার্যক্রম মূলত পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্যই।
দিশা তো চাঁন্দের গাড়িতে ওঠার পর থেকেই ভীষণ ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা রাস্তাগুলো যেন আকাশ ছুঁয়েছে। পাহাড়ে সবুজ অরণ্য যেনো তাদের সৌন্দর্য দিয়ে সবাইকে আকর্ষণ করে।
পাহাড়ি এ পথে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের স্বাগত জানাতে ছোট ছোট আদিবাসী শিশুদের হাত নাড়তে দেখে ইনায়া ও দিশাও তাদের দেখে হেসে হেসে হাত নাড়ছিল।
রাস্তা বেয়ে উপরে ওঠার সময় এসব রাস্তা দেখে দিশার তো প্রায় প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ইশান দিশার দিকে তাকাতেই দেখলো ও ভয়ে ইনায়ার হাত শক্ত করে ধরে আছে।
ভয় পাওয়ারই কথা, কেননা, একটু অসতর্ক থাকলে রয়েছে বিপদে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা।ঘণ্টাখানেক যাওয়ার পরে সকাল আটটায় ইশানদের টিম দিঘানালায় পৌঁছাল।
এবার অপেক্ষা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সাজেক যাওয়ার।সকাল সাড়ে ১০টায় সাজেকের উদ্দেশে সেনাবাহিনীর টহল টিমের সঙ্গে পর্যটকদের শতাধিক চাঁন্দের গাড়ি ছুটে চলে পাহাড়ের বুক চিরে। বেলা ১২টা নাগাদ সবাই রুইলুই পাড়ায় পৌঁছালো।
পাহাড়ের সর্বোচ্চ চুড়ায় রুইলুই পাড়ার অবস্থান। ইশানদের টিমের সবাই অবাক হয়ে যে যার মতো করে চারপাশে তাকাতে লাগলো।কারণ, তাদের সবার চোখের সামনে স্বপ্নের সাজেক। যেদিকে তাকানো যায় মেঘ আর পাহাড়ের মিলনমেলা। আর অদূরে আসাম রাজ্যের পাহাড়। এ যেনো প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য।
ইশান আগেই কোটেজের ব্যবস্থা করে রেখেছিল। চারটি রুম বুকিং দেওয়া ছিল। প্রতি রুমে তারা ২ জন করে থাকবে।রত্না ও মাইশাকে তাদের রুমের চাবি দিয়ে ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল। এরপর দিশা ও ইনায়াকে ওদের চাবি বুঝে দিল।
তুহিন ও নাহিদ তাদের রুমে চলে গেল। সবশেষে, আফনান ও ইশান তাদের রুমে গেল। ওদের রুমটা জাস্ট দিশাদের রুমের অপজিটে পড়েছে।
ফ্রেশ হয়ে দিশা লাগানো বারান্দাতে গেল। যতদূর দৃষ্টি গেল অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।কাঠের তৈরি কটেজগুলোর লাগোয়া বারান্দা থেকে যেন মনে হয় এই বুঝি হাত বাড়ালে মেঘ ছোঁয়া যাবে। দিশা তো কোনোভাবেই চোখ ফেরাতে পারছে না।
ইনায়াকে চিৎকার দিয়ে ডাকল বারান্দায় আসার জন্য। ওর চিৎকার শুনে ইশান ও ইনায়া ভয়ে দৌড়ে আসলো।কি হয়েছে দোস্ত, দেখ চারপাশটা কত সুন্দর! ও গোড, এভাবে কেউ চিৎকার দেয়। তুই তো আমাদেরকে পুরাই ভয় পাওয়াই দিছিস।
সরি দোস্ত, সরি ভাইয়া। ওকে। ভাইয়া তুমি কিছুক্ষণ দিশার সাথে এখানে দাঁড়াও। কারণ দোস্ত তোর কিছু হলে তোর পেরেন্টস আমাদের দুই ভাইবোনকে ছাড়বে না। তাই আমি রুম থেকে না আসার পর্যন্ত এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে ভাইয়া।
কেমন লাগছে দিশা এখানে এসে তোমার। খুবই ভালো লাগছে ভাইয়া। সাজেক না এলে দেখতে পারতাম না বাংলার প্রকৃতি এতোটা সুন্দর।চোখের সামনে পাহাড় আর মেঘ দেখে মন ভরে যাচ্ছে আমার।
এছাড়া পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে কাঠ ও বাঁশের তৈরি আদিবাসীদের ছোট ছোট ঘরগুলো সত্যিই নজর কাড়া…… অসম্ভব সুন্দর।
বুঝলাম ম্যাডাম, আপনি খুবই এনজয় করছেন। দিশা, একটু পোজ দিয়ে দাঁড়াও, তোমার কয়েকটা ছবি তুলি।
ভাইয়া আমি মোবাইল রুমে রেখে এসেছি। অসুবিধা নাই, আমার মোবাইলে তুলে পরে তোমাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিব। ওকে ভাইয়া। …………………………চলবে।
দিশার সংগ্রামী জীবন
পর্ব- ৫
লেখকঃ নাজনীন আফরোজ
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!